সর্বশেষ সংবাদ :

শাহরিয়ারের দুর্গে মনোনয়ন পেতে দুই বিদ্রোহীর খায়েশ

স্টাফ রিপোর্টার,বাঘা :

আসন্ন জাতীয় সাংসদ নির্বাচনে সংসদীয় আসন রাজশাহী-৬ বাঘা-চারঘাট থেকে তিনবারের নির্বাচিত সাংসদ ও দুইবারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের দুর্গে এবার হানা দিতে চান বিগত সময়ে আ’লীগ মনোনয়ন বঞ্চিত দুই বিদ্রোহী প্রার্থী। এরা হলেন, চারঘাট উপজেলার রায়হানুল হক রায়হান ও বাঘা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এড: লায়েব উদ্দিন লাভলু। তবে শাহরিয়ার আলমের মাধ্যমে অত্র এলাকায় অভুতপুর্ব উন্নয়ন হওয়ায় এ অঞ্চলের মানুষ আবারও তাকেই সাংসদ হিসাবে দেখার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন।

 

 

 

 

 

বাঘা উপজেলা আ’লীগের নেতা-কর্মীরা জানান, স্বাধীনতার পর বাঘা-চারঘাট থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দলের নেতা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। আবার অনেকে মন্ত্রীও হয়েছেন। এ দিক থেকে পর-পর তিনবার নির্বাচিত সাংসদ ও দুইবারের সফল পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের দৃশ্যমান অসংখ্য উন্নয়ন দেখে দলের তৃনমুলের নেতা-কর্মী-সহ সর্বস্তরের মানুষ আবারও তাকেই দলীয় মনোনয়ন দেয়া সহ নির্বাচিত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করছেন। তবে নতুন করে আসন্ন জাতীয় সাংসদ নির্বাচনে তার বিপক্ষে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে এলাকায় প্রচারনায় নেমেছেন বিগত সময়ে আ’লীগ মনোনয়ন বঞ্চিত দুই বিদ্রোহী নেতা রায়হানুল হক রায়হান ও এড: লায়েব উদ্দিন লাভলু। এ ঘটনায় ত্যাগী আ’লীগ নেতাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ব্যাপক ক্ষোভ।

 

 

বাঘা পৌর সভার সাবেক প্যানেল মেয়র শাহিনুর রহমান পিন্টু জানান, জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এখন যে দুই বিদ্রোহী নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। তাদের সাথে রয়েছেন বাঘা পৌর মেয়র আক্কাছ আলী। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ২০২২ সালের ২৯ ডিসেম্বর বাঘা পৌর সভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই নির্বাচনে আমাকে নৌকা প্রতীক উপহার দিয়ে ছিলেন। কিন্তু সাবেক মেয়র আক্কাছ আলী বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে জামাত বিএনপির ভোটে জয়লাভ করেছেন। এর আগে আক্কাস আলী ২০০১ সালে জাতীয় সাংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী রায়হানুল হক রায়হানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় নৌকার ভরাডুবি ঘটে। সেবার এ আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী কবির হোসেন সাংসদ নির্বাচিত হন। অথচ বর্তমানে দলের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে এই তিন বিদ্রোহী এখন এক কাতারে দাড়িয়ে আছে। এটা দলের জন্য একদিকে যেমন লজ্জা জনক,অপর দিকে ক্ষতিকারকও বটে।

 

 

 

 

 

বাঘা উপজেলা আ’লীগের সিনিয়র সদস্য ও ৮০’র দশকের নেতা মাসুদ রানা তিলসহ দলীয় একাধিক নেতা কর্মীরা জানান, ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চারঘাটের বাসিন্দা ও আওয়ামী লীগ নেতা রায়হানুল হক রায়হান বর্তমান সাংসদ এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের (নৌকা) প্রতীক এর বিপরীদে বিদ্রোহী প্রার্থী হন। সেইবার লাভলুও রায়হানের পক্ষে ছিলেন। তার পরেও বিপুল ভোটের ব্যবধানে শাহরিয়ার আলম নির্বাচিত হন। এর আগে ২০০৮ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বাঘা উপজেলা আ’লীগ এবং স্থানীয় সাংসদের চুড়ান্ত সিদ্ধান্তে দলীয় প্রার্থী মনোনীত হন প্রয়াত মিজানুর রহমান মিনু। পক্ষান্তরে দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে মিনুর বিপরীদে বিদ্রোহী প্রার্থী হন এড: লায়েব উদ্দিন লাভলু। এর ফলশ্রুতিতে এখানে বিএনপি থেকে বয়েজুল ইসলাম খান উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

 

 

এদিকে উপজেলার বাজুবাঘা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুর রহমান ফজল অভিযোগ করে বলেন, বাঘায় ৭ জন ইউপি চেয়ারম্যান রয়েছে। এর মধ্যে ১ নং বাজুবাঘা ইউপি চেয়ারম্যান বিএনপির ইউনিয়ন সভাপতি। ২০১৯ সালের ১৪ অক্টোবর আমি নৌকা প্রতীকে নিয়ে অত্র ইউনিয়নে মাত্র একশ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়। এর কারণ হিসাবে তিনি বলেন, এড: লায়েব উদ্দিন লাভলু গোপনে বিএনপি নেতার পক্ষ নেওয়ায় তাঁর নিজের দুটি কেন্দ্র নওটিকা ও বারখাদিয়ায় অনেক ভোটের ব্যবধানে আমার প্রতিপক্ষ প্রথম স্থান অর্জন করে। যদি লাভলু নৌকার পক্ষে কাজ করতেন, তাহলে আমিই নির্বাচিত হতাম।

 

 

স্থানীয় একাধিক সুত্রে জানা গেছে, ১৯৯১ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দুইটি উপনির্বাচন-সহ সাতটি সংসদীয় নির্বাচনে এই অসনে চারবার আওয়ামী লীগ, তিনবার বিএনপির এবং একবার আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচিত হন। তবে গত তিন মেয়াদে এ আসনটি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ মনোনীত শাহরিয়ার আলমের দখলে রয়েছে। তিনি তার নির্বাচনী আসনের দুই উপজেলায় ব্যাপক উন্নয়ন করে এলাকার চেহারা বদলে দিয়েছেন । এ কারণে সাধারণ মানুষের আস্থায় রয়েছেন প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তিনি এলাকার অন্যতম হেভিওয়েট প্রার্থী বলেও অনেকেই মন্তব্য করেন।

 

 

 

 

 

 

 

 

বাঘা উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল বলেন, চারঘাট-বাঘায় তিনবারের নির্বাচিত সাংসদ শাহরিয়ার আলমের কোন বিকল্প নাই। তিনি বলেন, রাজনৈতিক কারণে যে কেও দলীয় মনোনয়ন চাইবে তাতে কোন সমস্যা নেই। তবে বিগত সময়ে নৌকার ভরাডুবি ঘটাতে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছে তাদের নতুন করে দলীয় মনোনয়ন চাওয়ার কোন অধিকার নেই বলে আমি মনে করি। বাবুল ইসলাম আরো বলেন, যারা দলের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় এবং স্থানীয় কর্মসুচী পালন করে না তাদের বিষয় গুলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী-সহ কেন্দ্রীয় নেতাদের ভেবে দেখার দরকার রয়েছে। অনুরুপ কথা বলেন চারঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন।

সানশাইন/সোহরাব


প্রকাশিত: আগস্ট ২৭, ২০২৩ | সময়: ৬:০৮ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine