ইজারাদারকে মারধরের প্রতিবাদে দোকানপাট বন্ধ, বিক্ষোভ

স্টাফ রিপোর্টার : পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা না দেওয়ায় রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ^র হাটের ইজারাদার ওসমান আলীকে (৫৮) মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওসমান আলী বানেশ^র বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদকও। তাকে মারধরের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার দোকানপাট বন্ধ রাখেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া তারা বাজারে বিক্ষোভ-মিছিলও করেন।
বানেশ^র বাজারে ওসমান আলীর সার ও কীটনাশকের দোকান রয়েছে। আগের দিন বুধবার বিকালে এ দোকানেই ওসমান আলীর ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে রাতেই তিনি বানেশ^র ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেছেন।
অভিযোগে আওয়ামী লীগ নেতা ও ডিস ব্যবসায়ী আবুল কালাম আজাদ ছাড়াও অন্য যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা হলেন- মো. জুয়েল (৩০), মো. সাদেকুল (৩১), হামিদ ড্রাইভার (৪০), মো. মেহেদী (২৫), জহিরুল ইসলাম (৩২), মো. নাসির (৩৫) ও মো. সাগর (৪০)। তাদের বিরুদ্ধে এক লাখ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ারও অভিযোগ করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ী ওসমান আলী বলেন, দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে তিনি বানেশ^র হাট ইজারা নিয়ে ব্যবসা করে আসছেন। তিনি সরকারকে নায্য দর দেন বলে অন্যরা কম টাকায় হাটটি ইজারা নিতে পারেন না। এ জন্য আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কালাম আজাদ তার ওপর ক্ষুব্ধ। আগামী ফেব্রুয়ারিতে হাটটি আবার ইজারা দেওয়া হবে। এই ইজারা প্রক্রিয়ায় তিনি যেন অংশ না নেন তার জন্য ভয় দেখাতে এই হামলার ঘটনা ঘটেছে।
তিনি জানান, বুধবার বিকালে তিনি দোকানে বসেছিলেন। এ সময় আওয়ামী লীগ নেতা কালামের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তার দোকানে যায়। তারা প্রথমেই ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে শাটার বন্ধ করে দিয়ে তাকে মারধর করা হয়। এরপর সন্ত্রাসীরা ওসমানের পকেট থেকে এক লাখ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় তাকে শাসানো হয় যে, এখন থেকে তারা যা বলবে তা শুনতে হবে। তা না হলে হত্যা করে লাশ গুম করে দেওয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে ওসমান আলী আরও বলেন, তার ওপর হামলাকারীরা সন্ত্রাসী প্রকৃতির লোক। এর আগে তারা বানেশ^র বাজারে ব্যাংক ভাঙচুর করেছিল। তাদের এই হুমকিতে তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। দোকানে গিয়ে তার ওপর হামলার সমস্ত ঘটনা সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে। তার কাছে ফুটেজ আছে। তিনি হামলাকারী এই সন্ত্রাসীদের শাস্তি দাবি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে ওসমান আলীর মেয়ে শামসুন নাহার উর্মি, জামাতা আবদুল কাদের, রোমান উদ্দীন সজীব ও বেয়াই রেজাউল করিম উপস্থিত ছিলেন। এই হামলার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ব্যবসায়ীরা বাজারের সমস্ত দোকানপাট বন্ধ রাখেন। দুপুরে তারা বিক্ষোভ-মিছিল করেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘ওসমান আলী আমাকে নিয়ে খারাপ মন্তব্য করেন। তাই আমার ছেলেরা গিয়ে একটু ধাক্কা দিয়ে এসেছে। এর বেশি কিছু না। সকালে আমার ছেলেদের মারধর করা হয়েছে। আমরাও মামলা করছি।’
পুঠিয়া থানার ওসি সাইদুর রহমান বলেন, ‘ওসমান আলী যে অভিযোগ দিয়েছেন তা মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হচ্ছে। কালামও একটা অভিযোগ দিয়েছেন। সেটা তদন্ত করা হচ্ছে।
এদিকে পুঠিয়া (রাজশাহী)প্রতিনিধি জানান, রাজশাহী পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বরে বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের উপর হামলার প্রতিবাদে এক ঘন্টা দোকানপাট বন্ধ রেখে প্রতিবাদ জানিয়েছেন ব্যবসায়ীগণেরা। সকাল ১১টা থেকে ১২ পর্যন্ত বানেশ্বর বাজার বণিক সমিতির ডাকে মাইকিং করে বানেশ্বর হাটবাজারের সকল দোকানপাট বন্ধ রাখা হয়। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিলো।
ব্যবসায়ী ওসমান আলীর উপর হামলার প্রতিবাদে বিকাল ৪টার দিকে মিছিল নিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া স্বতন্ত্র ঈগলের প্রার্থীর নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা শ্লোগান দিতে দিতে ট্রাফিক মোড়ে দিকে যেতে থাকলে পুঠিয়া থনা পুলিশ আইনশৃংখো অবনতির অশংকায় বাধা সৃষ্টি করেন। এ সময় বাধা পেয়ে তারা হাওয়া প্লাজার নিচে এক প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। এ সময় নির্বাচনে অংশ নেওয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী ওবাইদুর রহমান বক্তব্য দেন। তিনি বক্তব্যে বলেন, নৌকার প্রার্থী নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে পুঠিয়া-দুর্গাপুরে আমার লোকদের উপর হামলা, পুকুরে মাছ লুট, বাড়ি-ঘর ভাংচুর, লুটপাটের ঘঁনা ঘটাছে।


প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৬, ২০২৪ | সময়: ৪:১৯ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ