মোদী সরকারের বিরুদ্ধে লোকসভায় অনাস্থা প্রস্তাব বিরোধীদের

সানশাইন ডেস্ক: ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে লোকসভায় বিরোধীদলগুলোর আনা অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে বিতর্ক চলছে। কংগ্রেস পার্টির এমপি গৌরব গগৈ এই বিতর্কের সূচনা করেন। বিরোধীদলগুলোর পক্ষ থেকে তিনিই ২৬ জুলাই প্রস্তাবটি এনেছিলেন। বৃহস্পতিবার বিতর্ক শেষে লোকসভার সদস্যরা প্রস্তাবটির ওপর ভোট দেবেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।
তবে ভারতের পার্লামেন্টে ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ও এর মিত্রদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় এই ভোটাভুটিতে মোদী সরকার হারবে না বলেই ধরে নেওয়া যায়। কিন্তু বিরোধী নেতারা বলছেন, এই বিতর্ক মণিপুর রাজ্যে চলমান জাতিগত দাঙ্গা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে মুখ খুলতে বাধ্য করবে।
লোকসভায় গগৈ বলেন, মণিপুরের বিষয়ে ‘মোদীর নীরবতা ভাঙতে’ বিরোধীরা এ অনাস্থা প্রস্তাব এনেছে। মোদী এখনও দাঙ্গা কবলিত রাজ্যটি পরিদর্শন করতে যাননি কেন, সে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি; জানিয়েছে বিবিসি। ভারতীয় পার্লামেন্টের চলতি অধিবেশন ২০ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে। অধিবেশন শুরুর পর থেকেই বিরোধীরা মণিপুরের সহিংসতা নিয়ে মোদীর বিবৃতির দাবি করতে থাকে। এই নিয়ে বিরোধীদের প্রতিবাদের মুখে বারবার অধিবেশন বিঘ্নিত হয়।
মে মাসের প্রথমদিক থেকে ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরে শুরু হওয়া জাতিগত দাঙ্গায় এ পর্যন্ত ১৫০ জনেরও বেশি নিহত ও বাস্তুচ্যুত হয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। রাজ্যটির সংখ্যাগরিষ্ঠ জাতি মেইতেইদের সঙ্গে সংখ্যাগরিষ্ঠ কুকিদের সংঘর্ষ চলছে। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়েছেন, তাদের সরকার এই ইস্যু নিয়ে আলোচনার জন্য তৈরি আছে।
বিঘ্নিত অধিবেশনের মধ্যেই কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিল পাস হয়, যেগুলো নিয়ে সামান্য বিতর্ক ও কিছু প্রতিবাদ দেখা গেছে। মোদী পদবি নিয়ে মানহানির মামলায় সুরাটের আদালতের রায়ে দুই বছরের কারদণ্ড হয়েছিল কংগ্রেসের নেতা রাহুর গান্ধীর। এ কারণে জনপ্রতিনিধিত্ব আইন লোকসভার সদস্য পদ হারিয়েছিলেন রাহুল। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট ওই রায় স্থগিত করায় রোববার সদস্য পদ ফিরে পেয়েছেন তিনি। তারপর সোমবারই লোকসভার অধিবেশনে যোগ দেন তিনি।
অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে বিতর্কে বিরোধীদের পক্ষ থেকে রাহুলই প্রথম বক্তৃতা শুরু করবেন বলে ধারণা করা হয়েছিল। কিন্তু তার বদলে তার দলের গৌরব গগৈ বক্তৃতা শুরু করেন। এই নিয়ে কিছুটা হৈচৈ করেছিলেন লোকসভার বিজেপি দলীয় সদস্যরা। বৃহস্পতিবার বিতর্কের শেষ দিনে জবাবি বক্তৃতা দিবেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। ওই দিন রাহুলেরও বক্তৃতা দেওয়ার কথা রয়েছে।
২০১৪ সাল থেকে একটানা ভারতের ক্ষমতায় আছে মোদী সরকার। এই নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো এই সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হল। অন্ধ্র প্রদেশ রাজ্যকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়ার ইস্যু নিয়ে ২০১৮ সালে এক আইনপ্রণেতা প্রথম মোদী সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিল। সেবার ১২ ঘণ্টা বিতর্কের পর ওই প্রস্তাব মুখ থুবড়ে পড়ে। সম্প্রতি ভারতের ২৬টি বিরোধীদল মিলে একটি জোট গঠন করেছে, যাকে ‘আইএনডিআইএ বা ইন্ডিয়া’ বলে ডাকা হচ্ছে। তাদের আনা এই অনাস্থা বিতর্ক তাদের ঐক্য প্রদর্শনের একটি সুযোগ বলে মনে করেছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।


প্রকাশিত: আগস্ট ৯, ২০২৩ | সময়: ৬:০৮ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ