সর্বশেষ সংবাদ :

১৬ বছর পর মায়ের কোলে সাহাবুল

অহিদুল হক, বড়াইগ্রাম: পিতৃহীন পরিবারের অভাব ঘোঁচাতে গিয়েছিলেন কাজের সন্ধানে। তারপরই নিখোঁজ হন কিশোর সাহাবুল ইসলাম। নানা জায়গায় খুঁজেও না পেয়ে তাকে ফিরে পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন স্বজনরা। কিন্তু হঠাৎ করেই দীর্ঘ ১৬ বছর পর বুধবার বিধবা মায়ের কোলে ফিরে এসেছেন তিনি।
আকস্মিকভাবে তাকে ফিরে পেয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েছেন তার স্বজনরা। সকাল থেকেই শত শত নারী-পুরুষ এক নজর দেখার জন্য ভীড় করছেন তার বাড়িতে। সাহাবুল ইসলাম (৩৩) নাটোরের বড়াইগ্রামের ভবানীপুর গ্রামের মৃত আশরাফ হোসেনের ছেলে।
জানা যায়, ১৭ বছর বয়সে সাহাবুল উপার্জনের আশায় প্রথমে মানিকগঞ্জ ও পরে চট্টগ্রাম যান। সেখানে গিয়ে পরিচয় হয় জেলেদের সঙ্গে। ভাল মাইনের লোভ দেখিয়ে মাছ ধরার কাজে জেলেরা তাকে নিয়ে যান গভীর সমুদ্রে। সেখান থেকে বাড়িতে মোবাইল করা বা যোগাযোগের কোন সুযোগ ছিল না। বাড়ি ফিরতে চাইলেও জেলেদের বাধার মুখে ফেরার সুযোগ হয়নি। হঠাৎ একদিন মাছ নিয়ে ট্রলার সমুদ্র তীরে এলে সাহাবুল কৌশলে পালিয়ে যান। পরে বাড়ি ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন তিনি।
চিকিৎসায় কিছুটা সুস্থ হলেও নিজের বাবা-মাসহ স্বজনদের নাম পরিচয় স্মরণ করতে পারছিলেন না তিনি। এ অবস্থায় একজন মুদি দোকানীর আশ্রয়ে ফরিদপুরে বসবাস করতে থাকেন সাহাবুল। আট মাস আগে বিয়েও করেন সেখানেই। মাস খানেক আগে ফরিদপুরের আটরশি এলাকায় কাজের সন্ধানে যান সাহাবুলের ফুপাতো ভাই আবুল কালাম। সেখানেই সাহাবুলকে দেখে চিনতে পারেন তিনি।
এরপর বাড়িতে খবর দিলে তার মা, ভাই ও বোন ফরিদপুরে যান। সেখানে গিয়ে তারা সাহাবুলকে চিনতে পারেন, এক পর্যায়ে সাহাবুলও চিনতে পারেন তাদেরকে। পরে বউসহ ছেলেকে বাড়িতে নিয়ে আসেন তারা। বুধবার সাহাবুল নিজ বাড়িতে ফিরে এলে স্বজনরাসহ গ্রামের লোকজন আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে পড়েন।
সাহাবুল ইসলাম বলেন, মা ও ভাই বোনের জন্য মন কাঁদতো, কিন্তু কোথায় বাড়ি, কোথায় তারা থাকেন ঠিকভাবে মনে করতে পারতাম না। এ কারণেই এতো বছর মাসহ স্বজনদের আদর-ভালবাসা থেকে বঞ্চিত হয়েছি। এখন আমি সবাইকে ফিরে পেয়ে দারুণ খুশি।
তার ভাই মুরাদ হোসেন জানান, দেশের বিভিন্ন জেলায় আমার ভাইকে খুঁজেছি। কিন্তু দীর্ঘ দিনেও না পেয়ে তাকে পাওয়ার আশা এক প্রকার ছেড়েই দিয়েছিলাম। কিন্তু অবশেষে তাকে ফিরে পেয়ে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি।
মা সায়েরা বেগম আনন্দে অশ্রু মুছতে মুছতে বলেন, সন্তান হারানোর বেদনা কাউকে বোঝানো যাবে না। আমার ছেলেটা বেঁচে আছে না মরে গেছে এ দুশ্চিন্তা সব সময় তাড়িয়ে বেড়াতো। এতো বছর পর হলেও আমার ছেলেকে ফিরে পেয়ে আমার কলিজা ঠান্ডা হয়েছে।


প্রকাশিত: আগস্ট ৩, ২০২৩ | সময়: ৫:৩৬ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ