সর্বশেষ সংবাদ :

পাঁচ কোটি টাকা নিয়ে উধাও কথিত এনজিও

নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁর মহাদেবপুরে ‘ব্যতিক্রম ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি’ নামের এক কথিত এনজিও ১৩৯ জন গ্রাহকের প্রায় ৫ কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছে। সোমবার দুপুরে টাকা ফেরত পেতে ওই এনজিও কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেছেন ভুক্তভোগী গ্রাহকরা। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, ভুক্তভোগী রুবি সুলতানা, দেলোয়ারা, প্রতিমা বিশ^াস, নুরুল ইসলাম সহ আরো অনেকে।
ভুক্তভোগী গ্রাহকরা বলেন, ২০১৯ সালে মেহেদী হাসান সহ কয়েকজন মিলে ব্যতিক্রম ক্ষুদ্র ব্যবসায় সমিতি নামে নামে একটি এনজিও প্রতিষ্ঠা করেন। তারপর তারা গ্রামের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষকে প্রলুব্ধ করলে একটু লাভের আশায় ওই এনজিওতে লাখ লাখ টাকা রেখেছিলেন ভুক্তভোগীরা। কিন্তু গত ২ মাস আগে হঠাৎ করে প্রতারণা করে এনজিওর এমডি মেহেদী হাসান ১৩৯ জন গ্রাহকের প্রায় ৫ কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যান।
এরপর তারা জেলা প্রশাসন ও পুলিশ সহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার পাননি। কষ্টে অর্জিত টাকা ফেরত পেতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন ভুক্তভোগী গ্রাহকরা।
ভুক্তভোগী গ্রাহক দেলোয়ারা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমি একজন বিধবা মানুষ। দুই সন্তানকে নিয়ে সংসার আমার। আমার ছেলেকে বিভিন্ন লোভ দেখিয়ে ২২ লাখ টাকা তারা নেয়। তারপর ২২ লাখ টাকার কিছুদিন লাভ দেওয়ার পর তারা আর টাকা দিতে চান না।
তিনি আরও বলেন, আমার স্বামী মারা যাওয়ার সময় টাকাগুলো রেখে যান। ওই টাকার ওপর আমার সংসার ও ছেলেদের লেখাপড়া চলতো। একসময় সংসারে চাল কেনার টাকা থাকতো না। অনেক কষ্ট করে সংসার চালাচ্ছি। সেই টাকা নিয়ে তারা পালিয়েছে। প্রতিদিন তাদের খোঁজে এখানে আসি। কিন্তু খুঁজে পাই না। আমার টাকা ফেরত চাই ও মেহেদী হাসানের শাস্তির দাবি জানাই।
প্রতিমা বিশ^াস বলেন, আমার স্বামী নেই। দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে আমার সংসার। অনেক কষ্ট করে মেয়ে বিয়ের জন্য ১ লাখ টাকা জমা করে এখানে রেখেছিলাম। আমার ছেলেরা জানতো না। হঠাৎ করে তারা আর টাকা দিতে চান না। তখন অফিসে আত্মহত্যাও করতে চেয়েছিলাম। তারা শুধু আশ^াস দিতো টাকা ফেরত দিবে। কিন্তু কিছুদিন আগে তারা অফিস বন্ধ করে পালিয়ে যায়। আমি এখন নিস্ব। টাকার জন্য মেয়েকে বিয়েও দিতে পারছি না। টাকা ফেরত পেতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
নুরুল ইসলাম বলেন, রাইসমিলে কাজ করে ৫৩ হাজার টাকা জমা করেছিলাম এই এনজিওতে। সেখান থেকে আমি কোনো লাভ নেইনি। সেই টাকা নিয়েও প্রতারক মেহেদী হাসান পালিয়েছে।
ওই এনজিওর কর্মচারি বেলাল হোসেন বলেন, আমি যখন তাদের প্রতারণা বুঝতে পারি তখন তারা আমাকে চাকরি থেকে বাদ দিয়ে দেয়। এরপর বিভিন্ন ভাবে প্রতারণা করে অসহায়-গরীব মানুষের লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে চলে গেছে মেহেদী হাসান। আমি তাদের বিচার চাই।
এ বিষয়ে ব্যাতিক্রমী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি নামের ওই কথিত এনজিওর এমডি মেহেদী হাসানের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভি করেনি।
মহাদেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাফফর হোসেন বলেন, বিষয়টি শুনেছেন। ভুক্তভোগী গ্রাহকরা আমার কাছে এসেছিল, তাদের মামালা করার পরামর্শ দিয়েছি।


প্রকাশিত: আগস্ট ১, ২০২৩ | সময়: ৬:৩১ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ