ঠাণ্ডা মাথার পরিকল্পনায় নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় ড. তাহেরকে

স্টাফ রিপোর্টার : হত্যার মূল পরিকল্পনা করেছিলেন ড. মিয়া মো. মহিউদ্দিন। হত্যার এক সপ্তাহ আগে ঢাকায় অবস্থান করছিলেন অধ্যাপক তাহের। ২০০৬ সালের ২৬ জানুয়ারি কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীরকে ড. তাহেরের রাজশাহী আসার তারিখ জিজ্ঞেস করেন ড. মহিউদ্দিন। ৩ ফেব্রুয়ারি ফিরে আসার কথা শুনে জাহাঙ্গীরকে ড. তাহের হত্যার পরিকল্পনার কথা জানান। হত্যায় অংশ নিতে জাহাঙ্গীর সম্মত হয়। ড. মহিউদ্দিন পরিকল্পনা করেন, প্রথমে ঘাড়ের পেছনে আঘাত করে অধ্যাপক তাহেরকে অজ্ঞান করা হবে। পরে তাকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করা হবে।
২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ড. তারেক রাজশাহী ফিরে আসলে ড. মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর হত্যা প্রক্রিয়া শুরু করেন। সহযোগিতার জন্য জাহাঙ্গীরের ভাই শিবির কর্মী আব্দুস সালাম ও তাদের আত্মীয় নাজমুল ইসলামকে ডেকে আনা হয়। ১ ফেব্রুয়ারি রাতে জাহাঙ্গীরের হাতে একটি রিভলবার দিয়ে আগেই ড. তাহেরের বাসায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। পরে রাত ৯টার দিকে ড. মহিউদ্দিন, সালাম ও নাজমুল তাঁর বাসায় যায়। এসময় চলছিলো লোডশেডিং। সঙ্গে কথা বলার এক পর্যায়ে জাহাঙ্গীর রিভলবারের বাট দিয়ে ড. তাহেরের ঘাড়ে আঘাত করেন। এসময় তিনি অচেতন হয়ে পড়লে তাকে ধরাধরি করে নিচে নিয়ে আসা হয়।
জাহাঙ্গীরের শোবার ঘরে ড. তাহেরকে এনে আসামীরা তাকে চেপে ধরে। তাঁর মুখে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়। এসময় বাঁচার জন্য ড. তাহের নানান চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে তিনি ডান হাত ছাড়াতে সক্ষম হন। তখন জাহাঙ্গীর ছুরি দিয়ে তাকে আঘাত করে। এতে তিনি কিছুটা নিস্তেজ হয়ে পড়লে বাকিরা বালিশ চাপা দিয়ে ধরে। কিছুক্ষণ পর দম বন্ধ হয়ে আসে ড. তাহেরের। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার জন্য অধ্যাপক তাহেরের বুকে কান পেতে ও হাতের নার্ভ দেখেন ড. মহিউদ্দিন। নিশ্চিত হবার পর বাড়ির পেছনের সেফটিক ট্যাংকে লাশ ফেলে রেখে আসা হয়।
শিবিরের সংশ্লিষ্টতা : অধ্যাপক তাহেরের হত্যায় শিবির সংশ্লিষ্টতাও উঠে আসে। এই হত্যায় অংশ নেয়া জাহাঙ্গীরের ভাই আব্দুস সালাম শিবির কর্মী ছিলেন। আব্দুস সালাম সরাসরি হত্যায় অংশ নিয়ে দণ্ডপ্রাপ্ত হন। এছাড়া এই হত্যা মিশন নিয়ে কথা বলতে ডেকে আনা হয় তৎকালীন বিশ^বিদ্যালয় শিবিরের সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহীকে। অধ্যাপক তাহেরকে প্রথমে তাকে গুলি করে হত্যার পরিকল্পনা করে ড. মহিউদ্দিন। কিন্তু শিবির সভাপতি সালেহী গুলি করলে শব্দ হবে বলে সাবধান করে দেয়। পরে তার পরামর্শক্রমে ড. তাহেরকে গুলি না করে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয় খুনীরা। জাহাঙ্গীরের দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে এসব তথ্য উঠে আসে।
এই ঘটনায় পুলিশের চার্জশিটে নাম আসে সালেহীর। এছাড়া আদালতে দেয়া জবানবন্দীতে ২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ড. তাহের হত্যায় সরাসরি সালেহীর সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি জানায় জাহাঙ্গীর। এমনকি জাহাঙ্গীরের সঙ্গে শিবির সভাপতি সালেহীও অধ্যাপক তাহেরের নাকে বালিশ চাপা দেয়ার কথা জানায়। পরে অবশ্য তাকে আদালত মামলা থেকে খালাস দেয়।


প্রকাশিত: জুলাই ২৮, ২০২৩ | সময়: ৬:০৭ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ

আরও খবর