নওগাঁয় আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পিকেএ উচ্চ বিদ্যালয়ে চার পদে নিয়োগ 

নওগাঁ প্রতিনিধি : 

নওগাঁর মান্দার পারশিমলা কালুপাড়া আবিদ্যাপাড়া (পিকেএ) উচ্চ বিদ্যালয়ে চারটি পদে নিয়োগ-বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। নিয়োগ কার্যক্রমের বৈধতা চালেঞ্জ করে অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকারী পদে নিয়োগ প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান নামে এক ব্যক্তির মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ওই নিয়োগ কার্যক্রমের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আদেশ জারি করেন। আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নিয়োগবোর্ড গঠন করে গত শনিবার ওই চারটি পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

 

 

মামলার আর্জি ও মামলার আবেদনকারী মোস্তাফিজুরসহ বঞ্চিত চাকরি প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর পিকেএ উচ্চ বিদ্যালয়ে একজন অফিস সহকারী কামহিসাব সহকারী, একজন পরি”ছন্নতাকর্মী, একজন অফিস সহায়ক ও একজন আয়া পদে নিয়োগের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। যোগ্যতা অনুযায়ী আমি অফিস সহকারী কামহিসাব সহকারী পদে আবেদন করি এবং আমাকে চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি নিয়োগ বোর্ডে উপস্থিথ হওয়ার জন্য বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রধান শিক্ষক স্বাক্ষরিতপত্র দেন।

 

 

 

নিয়োগ বোর্ড গঠনের আগেই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি অনৈতিকভাবে প্রচুর অর্থ গ্রহন করে পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগের পায়তারা শুরু করেন। বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয় জনগনের রোষানলে পড়ে ওই নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত করে গত ১০ মার্চ ওই চারটি পদে পুনরায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ওই বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয় আগের বিজ্ঞপ্তি অনুসারে যারা আবেদন করেছিলেন তাঁদেরকে ২য় বার আবেদন করতে হবে না।

 

 

 

কিন্তু এবারেও প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি অর্থের বিনিময়ে পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগের জন্য পরীক্ষার নামে প্রহসনের আয়োজন করছে। নিয়োগের আগেই জানা যাচ্ছিল কে চাকরি পেতে যাচ্ছে। এই অনৈতিক কার্যক্রম বন্ধের জন্য আমি গত ১৮ মে নওগাঁর (মান্দা) সহকারী জজ আদালতে (মান্দা) নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চেয়ে মামলা করি। গত ২০ জুলাই এই মামলার শুনানি নিয়ে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করেন এবং নিয়োগ কার্যক্রম কেন বাতিল করা হবে না মর্মে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতিসহ পাঁচজনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করেন।

 

 

 

আগামী ২০ আগস্টের মধ্যে বিবাদীদের কারণ দর্শানোর আদেশ দেওয়া হয়। এ নিদের্শ আমান্য করে গত শনিবার নিয়োগ বোর্ড গঠন করে ওই চারটি পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। মোস্তাফিজুর রহমানের অভিযোগ, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি অফিস সহকারী পদের জন্য তাঁর কাছ থেকে ১৮ লাখ টাকা দাবি করেন। কিন্তু তিনি ওই টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরবর্তীতে এই নিয়োগ বাণিজ্য বন্ধ করতে আদালতে মামলা করেন তিনি। এ কারণে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তাঁকে নিয়োগ পরীক্ষার জন্য পত্র দেওয়া হয়নি। অথচ প্রথমবারের বিজ্ঞপ্তি পরে তাঁকে যোগ্য হিসেবে গণ্য করে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চিঠি দিয়েছিল।

 

 

আয়া পদে চাকরির জন্য আবেদন করেছিলেন পারশিমলা গ্রামের দোলন খাতুন। দোলনের বাবা দবীর উদ্দীন বলেন, পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়ার জন্য আমার মেয়েকে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য চিঠি দেওয়া হয়নি। মোটা অংকের টাকা নিয়ে পিংকী রাণী নামে একজনকে ওই পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই নিয়োগ বাতিল করার দাবি জানাচ্ছি।

 

 

জানতে চাইলে পিকেএ উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি এসএম গোলাম আযম বলেন, গত শনিবার নিয়োগ পরীক্ষা শুরু হওয়ার কয়েক মিনিট আগে আদালতের একটি নোটিশ আমরা পেয়েছি। তবে আমরা যেটা বুঝেছি ওই নোটিশে নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিতের কোনো আদেশ দেওয়া হয়নি। নিয়োগ প্রক্রিয়া কেন বাতিল করা হবে না এই মর্মে আদালত ৩০ দিনের মধ্যে তাঁদেরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন। তাই আমরা মনে করি, এই নিয়োগ সঠিকভাবেই হয়েছে। পরবর্তীতে আদেশ যদি মনে করে, এই নিয়োগ অবৈধ তাহলে বাতিল করা হবে।

 

 

 

নিয়োগ-বাণিজ্যের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ঘুষ কিংবা উৎকোচের বিনিময়ে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। নিয়োগ বোর্ড গঠনের মাধ্যমে যথাযথ প্রক্রিয়া অবলম্বন করে যোগ্য প্রার্থীদের বাছাই করে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নিয়োগের বিষয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফর রহমান বলেন, পিকেএ উচ্চ বিদ্যালয়ে নিয়োগ নিয়ে একটি চলছে। তবে সেই মামলায় অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা ব্যাপারে আদালতের আদেশের কোনো কপি তিনি পাননি। এ সংক্রান্ত কপি পেলে নিয়ম অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

সানশাইন / শামি

 


প্রকাশিত: জুলাই ২৫, ২০২৩ | সময়: ১১:৩৩ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine