বিপুল পরিমান ভুয়া দলিল ও সরঞ্জাম জব্দ: রাজশাহীতে মুক্তিযোদ্ধার ভুয়া সনদ তৈরির কারিগরসহ দুই প্রতারক গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহীতে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদ তৈরীর বিপুল পরিমান সরঞ্জাম ও দেশী-বিদেশী ভুূয়া দলিল দস্তাবেজ তৈরীর কারিগরসহ দুই প্রতারককে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। সোমবার সন্ধ্যায় নগরীর পূর্ব মোল্লাপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। মঙ্গলবার র‌্যাবের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃতরা হলো, নগরীর পূর্ব মোল্লাপাড়া এলাকার মৃত কাবিল উদ্দিনের ছেলে আনিসুর রহমান ওরফে রেজাউল (৬৬) ও বুলনপুর এলাকার রাজিব হোসেনের ছেলে শেখ রেজওয়ানুল করিম ওরফে সানি (২২)।
র‌্যাব জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব জানতে পারে, রাজশাহী নগরীর পূর্ব মোল্লাপাড়া গ্রামের রেজাউল করিম তার বাড়িতে বসে জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া সীলমোহরের সাহায্যে জাল দলিল, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ তেরি করে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে। এমন সংবাদের প্রেক্ষিতে র‌্যাব রেজাউল করিমের বাড়িতে অভিযান চালায়। এসময় র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে কৌশলে পালানোর চেষ্টাকালে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।
র‌্যাব জানায়, আটকের পর জিজ্ঞাবাদে তারা জানিয়েছে, আনিছুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে ভুয়া দলিল দস্তাবেজ তৈরীর কাজে নিয়োজিত। মুক্তিযোদ্ধা সনদ জালিয়াতির মাধ্যমে প্রস্তুত করত এবং মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধে অংশগ্রহণের প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত অস্ত্র জমা দেয়ার জয় বাংলা লেখা সনদও প্রস্তুত করে দিত। তার কাছে কেউ ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ, ভুয়া জামানত, ভূয়া দলিল চাইলে বিভিন্ন অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তিনি তা তৈরী করে দিতেন। ভুয়া দলিল করে জমি দখলদারদেরও সে পাকিস্তানী আমলের দলিলও তৈরি করে দিত।
র‌্যাব জানায়, জাল দলিল তেরির জন্য কালি-কলম ব্যবহার করত সে। কারণ পাকিস্তান আমলে কালি-কলমে দলিল লেখা হতো। সে পুরাতন দলিল প্রস্তুত করতে সরকারি কর্মকর্তাদের সীল নিজে তৈরি করে ব্যবহার করত। তার কাছে বিভিন্ন কর্মকর্তার ২০৫ টি ভুয়া সীল পাওয়া যায়। সে নিজেকে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ ভুয়া জাল দলিল প্রস্তুতকারক হিসেবে দাবি করে। তার কাছে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভুয়া দলিল প্রস্তুত করতে জমি দখলকারীরা যোগাযোগ করতো। এ যাবৎ সহস্রাধিক জাল দলিলসহ বহু মুক্তিযুদ্ধের জাল সনদ তৈরি করে হাতিয়েছে মোটা অঙ্কের টাকা। বিশেষ কেমিকেল ব্যবহার করে দলিলকে পুরাতন দেখানোর পন্থাও রপ্ত ছিলো তার। এ কারণে দলিল-দস্তাবেজ জাল হলেও দেখে আসলের মত লাগত।
র‌্যাব জানায়, গ্রেফতার দুজন পরস্পর যোগসাজসে দীর্ঘদিন ধরে জাল-জালিয়াতির উপকরণ তৈরি করে প্রতারণা করে আসছে। ২০১৩ সালে জাল জালিয়াতির মামলায় একবার গ্রেফতারও হয়েছিলো রেজাউল।
র‌্যাব জানায়, তাদের কাছ থেকে ১৪ টি স্বাধীনতা সংগ্রামের ভুয়া সনদপত্র, ১৫টি জয় বাংলা লেখা সম্বলিত ফাঁকা সনদ, ২৫৪৮ টি বাংলাদেশী স্ট্যাম্প, ৮৩৩ টি পাকিস্তানী স্ট্যাম্প, ২৫৩টি ভারতীয় স্ট্যাম্প, ২০৫টি সরকারি কর্মকর্তার নামীয় ও পদবী সম্বলিত সীল, ২টি বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মনোগ্রাম সম্বলিত লোহার পাত ও ২টি পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় মনোগ্রাম সম্বলিত লোহার পাত জব্দ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার গ্রেফতারকৃতদের রাজশাহী নগরীর রাজপাড়া থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। থানায় তাদের বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও প্রতারণা আইনে মামলাও দায়ের করা হয়েছে।


প্রকাশিত: জুলাই ১২, ২০২৩ | সময়: ৫:৪৮ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ