নাটোরের আদালতে বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীদের মধ্যে মারপিট

স্টাফ রিপোর্টার, নাটোর: নাটোরে ফি কম দেয়াকে কেন্দ্র করে বিচারপ্রার্থীদের বেধড়ক মারপিট করে আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে আইনজীবিদের বিরুদ্ধে। অপরদিকে আইনজীবীরা অভিযোগ করে বলেছেন বিচারপ্রার্থীরাই প্রথমে হামলা করেছে।
বৃহ¯পতিবার দুপুর দেড়টার দিকে নাটোর আইনজীবি সমিতির নতুন ভবন চত্বরে এই ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান গ্রামের মসজিদ কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে একটা বিবাদমান ঘটনায় তাদের ছয় ভাইয়ের নামে মামলা হয়।
অভিযুক্তরা ছয় ভাই বাগাতিপাড়া উপজেলার বাসিন্দা এবং তাদের মধ্যে তিন ভাই বিভিন্ন উচ্চ বিদ্যালয় এবং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। সেই মামলায় তারা সকলে জামিনে রয়েছেন। বৃহ¯পতিবার হাজিরা দিতে আসলে তাদের আইনজীবী ময়নাল ইসলাম এক হাজার টাকা ফিস দাবী করেন। তারা পাঁচশত টাকা দিতে চাইলে আইনজীবী উত্তেজিত হয়ে যায়। ফাইল ফেলে দিয়ে গালিগালাজ করতে থাকে।
পরে তারা গালিগালাজের প্রতিবাদ করা মাত্র আইনজীবী ময়নাল সহ আরো কয়েকজন আইনজীবী এবং আইনজীবী সহকারী (মোহরার) তাদের তিন ভাইকে বেধরক মারধর করতে থাকে।
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে তাদের ছোটভাই বলেন, আইনজীবি ময়নাল মামলার যাবতীয় খরচ বাদ দিয়ে ১০০০ টাকা ফি দাবি করেন। তখন আমি বলি সব সময় তো ৫০০ টাকা দেয়া হয় আজও ৫০০ টাকা নেন। এতে উত্তেজিত হয়ে ময়নাল ইসলাম তাদের মামলার নথি ছুঁড়ে ফেলে দেন এবং গালিগালাজ শুরু করেন। এক পর্যায়ে উকিল বলেন তোরা বেয়াদব তোদের মামলা চালাবো না। আমি বলি আমরা শিক্ষক মানুষ টাকা লাগলে আরো দিচ্ছি তাই বলে এভাবে গালিগালাজ করবেন কেন। আমিও আইনজীবীকে বলেছি, আপনিও তো বেয়াদব।
এক কথা বলতেই আনিজীবী ময়নাল এবং তার মোহরার মিজান কিলঘুষি মারতে শুরু করে। এরপর অন্যান্য আইনীজীবী এবং মোহরাররা তাদের সাথে যোগ দিয়ে মারধর করতে থাকে। পরে সেখান থেকে আমি পালিয়ে পাশে গিয়ে অন্যান্য আইনজীবীদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে বলি আমার ভাইদের মেরে ফেললো আপনারা বাঁচান। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনি। পরে আমি পুনরায় এগিয়ে গেলে সকলে মিলে আমাকেও নির্বিচারে মারতে থাকে। মেরে আমাদের আটকে রাখে।
ভুক্তভোগী স্কুল শিক্ষক বলেন, আমরা শিক্ষিত লোক। শিক্ষকতা করি। আমাদের সাথে এমন ঘটনা ঘটবে চিন্তাও করতে পারিনি। লজ্জায় আমাদের মুখ দেখানো কঠিন হয়ে পড়েছে।
ভুক্তভোগী অপর ভাই বলেন, আইনজীবিদের বিরুদ্ধে মামলা করলে কাউকে পাশে পাবো না তাই আল্লাহর কাছে বিচার দিয়েছি। ঘটনার খবর পেয়ে আগে থেকেই আদালতে অবস্থান করা ফাগুয়ারদিয়ার ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম আমাদেরকে উদ্ধার করে নাটোর সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে। হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়ে রাতে বাড়িতে এসেছি।
অভিযুক্ত আইনজীবি ময়নাল ইসলাম বলেন, ছয়টা আসামী জামিন করিয়েছি। বেলবন্ডসহ আনুসাঙ্গিক খরচ প্রায় ১০০০ টাকা। কিন্তু তারা আমাকে ৪০০ টাকা দিতে চায়। এতে উভয় পক্ষে মধ্যে উচ্চস্বরে তর্কবিতর্ক শুরু হলে অন্যান্য আইনীজীবী এবং মোহরাররা এসে তাদেরকে মারধর করে। তিনি কোন মারধর করেননি। ঘটনার জন্য তিনিও লজ্জিত।
নাটোর আইনজীবি সমিতির সাধারণ স¤পাদক এ্যাড. মালেক শেখ বলেন, মামলার ফি কম দেয়াকে কেন্দ্র করে আইনজীবী এবং বিচারপ্রার্থীর মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়। এক পর্যায়ে বিচারপ্রার্থীরা আইনজীবীকে ধাক্কা দিলে উপস্থিত আইনজীবী এবং মোহরাররা তাদেরকে মারধর করে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধির জিম্মায় তাদের হস্তান্তর করা হয়।
ফাগুয়ারদিয়ার ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম শরিফ বলেন, এলাকার লোকদের আইনজীবীরা মারধর করে আটকে রেখেছে জানতে পেয়ে তিনি ছুটে গিয়ে তাদেরকে উদ্ধার করে বাড়ি এনেছেন।


প্রকাশিত: জুন ২৪, ২০২৩ | সময়: ৬:১০ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ