কন্যা দায়গ্রস্থ পিতাদের দায়মুক্ত করেন রুবেল

অহিদুল হক, বড়াইগ্রাম: ‘হত দরিদ্র দিন মজুর আমি। সারাদিন অন্যের জমিতে খেটে যা পাই তাতে স্ত্রী ও তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে অভাব অনটনের মধ্যেই চলে আমার সংসার। একমাত্র মেয়ের বিয়ের বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে। সব বাবা-মায়েরই শখ থাকে ধুমধাম করে মেয়ের বিয়ে দেয়ার। কিন্তু আমার সে সাধ্য কোথায়। তাই অনুষ্ঠানতো দুরের কথা, মেয়ের বিয়ে দেয়া নিয়েই চরম হতাশায় দিন কাটছিল। তবে শেষ পর্যন্ত দানশীল ব্যবসায়ী রুহুল আমীন রুবেল ভাইয়ের সহযোগিতায় আনন্দঘন পরিবেশে ধুমধাম করেই মেয়ের বিয়ে দিতে পেরেছি। দরিদ্র বাবার স্বপ্ন আজ সত্যি হয়েছে। সত্যিই যার কেউ নেই তাঁর আল্লাহ আছেন।’ শনিবার আনন্দে চোখের পানি মুছতে মুছতে কথাগুলো বলছিলেন বগুড়া সদর উপজেলার বিদুপাড়া গ্রামের মাহফুজার রহমান।
জানা যায়, নাটোরের বড়াইগ্রামের মাঝগাঁও ইউনিয়নের চন্ডিপুর গ্রামের ব্যবসায়ী রুহুল আমীন রুবেল নিজ অর্থায়নে জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে শুক্রবার দরিদ্র মাফুজার রহমানের মেয়ে মাকছুদা খাতুনের (২২) বিয়ে সম্পন্ন করেন।
জমকালো আলোকসজ্জা, তোরণ, কনে ও বরের মঞ্চ, কনে সাজানোর জন্য বিউটিশিয়ান, ভিডিও ধারণ কোনো কিছুরই কমতি ছিলনা অনুষ্ঠানে। বরযাত্রীসহ আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন প্রায় ৩০০ জন। মাকছুদা খাতুনের বিয়ের মধ্য দিয়ে এ পর্যন্ত ৬৮ জন গরীব অসহায় এতিম মেয়ের বিয়ে দিলেন তিনি।
স্থানীয়রা জানান, মাহফুজার রহমান একজন হতদরিদ্র মানুষ। তিনি দিনমজুরী করে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে খুব কষ্টে জীবন যাপন করছিলেন। টাকার অভাবে মেয়ের বিয়ে নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় ছিলেন মাহফুজার রহমান ও তার স্ত্রী বাসেদা বেগম। মেয়েকে মক্তবে পড়িয়েছেন কৃষক মাহফুজার। সপ্তাহ খানেক পূর্বে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন ভাবে স্থানীয়রা বড়াইগ্রামের রুহুল আমীন রুবেলের সন্ধান দিলে তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন কৃষক মাহফুজার। তার মুখে সব কথা শুনে বিয়ের দিন-ক্ষণ নির্ধারণ করতে বলেন রুবেল।
শুক্রবার দুপুরে কনের জীর্ণ শীর্ণ বাড়িটি জমকালো সাজে সেজেছিল। আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য নানা পদের রান্নার আয়োজন করা হয়। কনেকে সাজাতে বিউটিশিয়ানও আসে। দুপুরে বর বগুড়া সদর উপজেলার বিদুপাড়া গ্রামের আনোয়ার হোসেনের ছেলে রিজু হোসেন (২৬) সহ অর্ধশতাধিক বরযাত্রী আসেন। বরকে উন্নতমানের উপহারের মাধ্যমে বরণ করেন রুহুল আমীন রুবেল। বর রিজু নিজ এলাকার বাজারে ব্যবসা করেন।
কনে মাকছুদা খাতুন জানান, বাবা-মা তাকে অনেক কষ্টে বড় করেছেন। মক্তব পর্যন্ত পড়াশোনাও করিয়েছেন। বাবা যখন অর্থাভাবে বিয়ে দিতে পারছিলেন না, তখন বাবার মতই দয়ালু ও মানবিক একজন মানুষ এগিয়ে এসে এত সুন্দর ভাবে তার বিয়ে শেষ করবেন এটা কখনও কল্পনাও ছিল না তার। জীবনের পরম আকাঙ্খিত দিনটি এতো আনন্দঘন পরিবেশে সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে সাহায্যের হাত বাড়ানোর জন্য রুবেলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
আবেগ আপ্লুত হয়ে মাকছুদার মা বাসেদা বেগম বলেন, কখনও ভাবেননি তার মেয়ের এতো বড় আয়োজনে বিয়ে হবে। ব্যবসায়ী রুহুল আমীন রুবেলের যেভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে এগিয়ে এসেছেন, তা জীবনে কোনদিনও ভুলবেন না তিনি।
রুহুল আমীন রুবেল বলেন, ‘মহান আল্লাহর ইচ্ছায় এ পর্যন্ত আমি ৬৮টি মেয়ের বিয়ে দিতে পেরেছি। শুক্রবার আমার ৬৮তম মেয়ের বিয়ে সম্পন্ন হলো।
২০০৫ সাল থেকে আমি এ কাজ করে আসছি। গরিব, অসহায়, এতিম মেয়েদের বিয়ের পাশাপাশি প্রায় দেড় যুগ ধরে প্রতি শুক্রবার আমার এলাকার দুস্থ মানুষদের মাঝে খাবার বিতরণ করে আসছি।
এছাড়াও প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ঈদ, বিশেষ দিনসহ বিভিন্ন সময় মানুষকে সহযোগিতা করি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার বাবা মৃত মোয়াজ্জেম হোসেন সরকার বেঁচে থাকাকালীন তাকে এসব কাজ করতে দেখেছি, তিনি মানুষকে ভালোবেসেছেন। আমি বাবার সে পথটাই অনুসরণ করে চলেছি মাত্র।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) বোরহান উদ্দিন মিঠু জানান, তিনি যেভাবে কন্যাদায়গ্রস্থ অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন এটা সত্যিই অতুলনীয়। তার মত সমাজের বিত্তবানরা তাদের আশপাশের গরিব মানুষের পাশে দাঁড়ালে হাজারো মানুষ ভালোভাবে বেঁচে থাকতে পারবে। তাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে সবাইকে অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।


প্রকাশিত: জুলাই ৯, ২০২৩ | সময়: ৫:১৩ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ