গোদাগাড়ীতে ইউপি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে কোটি টাকার জমি দখলের অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহীর গোদাগাড়ীর পাকড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন ও তাঁর ভুমিদস্যু সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কোটি টাকা মুল্যের ৮ বিঘা জমি দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী গোদাগাড়ী পৌর এলাকার মাদারপুর মহল্লার মো: নওশাদ আলী মঙ্গলবার সকালে গোদাগাড়ী থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগ পেয়ে গোদাগাড়ী মডেল থানার ওসি কামরুল ইসলাম অধীনস্ত কাকনহাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জকে তদন্ত সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে, এলাকাবাসীর অভিযোগ, জালাল চেয়ারম্যান এলাকার এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর নির্দেশে ওই জমি দখল নিয়ে সড়ক করবেন বলে ঘোষণা দিয়ে লোকজন নিয়ে গিয়েছিলেন। তিনটি ট্রাক্টর চালিয়ে জমিগুলির আইল ভেঙ্গে তছনছ করে দিয়েছেন। এই জমি আবাদযোগ্য করতে কয়েক লাখ টাকা খরচ হবে।
লিখিত অভিযোগে নওশাদ আলী বলেন, উপজেলার পাকড়ি ইউপি চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন ও তার নিয়ন্ত্রাধীন একটি শক্তিশারী ভুমিদস্যু সিন্ডিকেট রয়েছে। সম্প্রতি তাঁর ছেলে আলমগীর হোসেন ও কণ্যা আয়েশা খাতুনের নামের ১০৮ নং বাশৈল মৌজার ১২৯ ও ৫৯ নং আরএস খতিয়ানভুক্ত ২২২, ২৭৯ ও ২৯৪ নং দাগের ২ দশমিক ৬৭ একর জমি ক্রয় করেন। জমিগুলির বাজার দাম প্রায় কোটি টাকা। বৈধ কাগজপত্র যাচাই শেষে জমিগুলির মুল মালিকদের কাছ থেকে রেজিষ্ট্রি করে যথারীতি খারিজ সম্পন্ন করে খাজনা পরিশোধ করেছেন। চাষাবাদের সুবিধার্থে সম্প্রতি তিনি জমিগুলির আইল সংস্কার করেন কয়েক লাখ টাকা খরচ করে। আমন আবাদের জন্য আমিরুল ইসলাম নামের একজনকে বর্গা দেওয়া হয়েছিল। আমিরুল জমিগুলিতে আমন রোপনের জন্য প্রস্তুতি করছিলেন।
এদিকে গত ২৬ জুন সকালে পাকড়ি ইউপি চেয়ারম্যান, জালাল উদ্দিন, ৮ নং ইউপি সদস্য দুলাল উদ্দিন, ইকবাল হোসেন , ডলার আলী, পিয়ারুল, বায়েজিদ বোস্তামি, মিজানুর রহমান, মানিক আলী, এনামুল হক, মোর্শেদ আলী, কামরুল, পলাশ উদ্দিন, সেলিম রেজা, আসলাম আলী, এনারুল, ইব্রাহিম হোসেনসহ ২০/২৫ জনের একটি দল তিনখানা ট্রাক্টর নিয়ে জমিতে যায়। তারা নওশাদ আলীর ছেলে ও মেয়ের জমির আইল ভেঙ্গে তছনছ করে দেন। নওশাদ আলী ও তার বর্গাদারসহ কয়েকজন লোক তাদেরকে বাধা দিতে গেলে জালাল চেয়ারম্যান সরাসরি প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করেন। শেষাবধি প্রাণ রক্ষার্থে নওশাদ আলী ও তার সহযোগীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে বাধ্য হন।
অভিযোগে আরও জানা যায়, জালাল চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে জমি দখলের সময় জমির মুল মালিক ও বিক্রেতারাও ঘটনাস্থলে গিয়ে কেন তাদের বিক্রয় করা এই জমি দখল নেওয়া হচ্ছে বলে জানতে চান। এ সময় জালাল চেয়ারম্যান তাদেরকে বলেন, এটা আমার এলাকা। এখানে বাহিরের কোন লোক জমি কিনে চাষাবাদ করতে পারবে না। আমি ওই জমির ওপর দিয়ে একটি রাস্তা বানাব। এমপি সাহেব আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন। যদিও রাজশাহী-১ আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী কারো জমি দখলের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না এবং কাউকে জমি দখল করতেও বলেননি বলে জানিয়েছেন। এ বিষয়ে কেউ তাকে কিছু বলেননি।
জমির মালিক আলমগীর হোসেন ও আয়েশা খাতুনের বর্গাদার আমিরুল ইসলাম অভিযোগে বলেন, জমি দখলে আমি বাধা দিতে গেলে জালাল চেয়ারম্যান আমাকে বলেন, আমি এমপির লোক। আমি যা বলব সেটাই হবে। এই জমি আমি পুরোটাই দখলে নিয়ে বড় করে সড়ক বানিয়ে দেব। পাশর্^বর্তী জয়রামপুর স্কুলের জন্য একটি খেলার মাঠ বানিয়ে দেব। আমাকে অস্ত্র নিয়ে তাড়া করলে প্রাণ ভয়ে পালিয়ে আসি।
এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জালাল আগে পাকড়ি ইউপির মেম্বার ছিলেন। গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকিটে সে চেয়ারম্যান হয়েছেন। এলাকার বাহিরের লোকজন জমি কিনলে সে সেখানে নানাবিধ জটিলতা সৃষ্টি করে টাকা পয়সা আদায়ের চেষ্টা করেন। জমি দখলের জন্য জালাল চেয়ারম্যানের একটি ভুমিদস্যু সিন্ডিকেট আছে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পাকড়ি ইউপি চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন বলেন, ব্রিটিশ আমলের নকশাতে জমিগুলির ওপর দিয়ে একটি ডহর বা রাস্তা আছে। কিন্তু হাল বা আরএস সেটেলমেন্টে তা নেই। এলাকার লোকজন জমির ওপর দিয়ে একটি রাস্তা করার জন্য আমার কাছে অনুরোধ করেছিলেন। সে কারণে আমি সেদিন ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। জমি দখলের স্বপক্ষে ভুমি আইনে স্বীকৃত বৈধ কোন কাগজপত্র আপনার কাছে কিনা জানতে চাইলে জালাল স্বীকার করেন তার কাছে কোন বৈধ কাগজপত্র নাই।


প্রকাশিত: জুন ২৮, ২০২৩ | সময়: ৫:০৭ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ