মসলার বাজারে কোরবানির উত্তাপ

সানশাইন ডেস্ক: অনেকদিনের বাজার একসঙ্গে করতে কারওয়ান বাজারে এসেছেন দুই সহকর্মী কৃষ্ণ রায় ও সাদ্দাম হোসেন। অনেকটা কমে পাওয়া যায় বলে ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে এতটা দূরে তারা প্রায়ই আসেন। কেনাকাটার এক পর্যায়ে পাঁচ কেজি আদার দাম শুনে যেন আঁতকে উঠলেন।
দোকানি চাইছেন ১৩০০ টাকা, তারা দিতে চান ১২০০ টাকা। দামে বেড়েছে বটে তাই বলে এতটা, চোখেমুখে জিজ্ঞাসা নিয়ে প্রশ্ন তাদের। অনেক দরদাম আর কথা চালাচালির পরও কিনতে হল দোকানির হাঁকা দামেই। আসছে কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে জমে উঠতে শুরু করেছে আদার মতো মাংস রান্নার বিভিন্ন ধরনের মসলার বাজারও। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরায় অন্য সময়ের চেয়ে কেনাকাটার পরিমাণ বাড়ার সঙ্গে দামও বেড়েছে অনেকখানি।
শুক্রবার কৃষ্ণ রায় ও সাদ্দাম হোসেন নিত্যদিনের পণ্য কেনাকাটা করতে এলেও এদিন কারওয়ান বাজারে আসা অনেকেই ঈদের জন্য দরকারি মসলার কেনাকাটা আগেভাগে করতে এসেছিলেন। ডজনখানেক ক্রেতার সঙ্গে কথা বলে দেখা যায়, আমদানি শুরু হওয়ায় পেঁয়াজের চড়া দামে একটুখানি লাগাম পড়েছে। তবে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে যাওয়া আদা, জিরার দামের উত্তাপ বইছে মসলার বাজারে। দাম বেশি শুকনা মরিচেরও।
পেশায় ব্যবসায়ী মাকসুদুর রহমানের ইচ্ছে ছিল দেশি আদা কেনার। কিন্তু ৪০০ টাকা কেজি দাম শুনে ২৭০ টাকা দরের ইন্দোনেশিয়ার আদা কিনেই সন্তুষ্ট থাকলেন। তার মতে, “বাজারে সব সিন্ডিকেট। সবাই এক দাম ধরে রাখছে। কোথাও কমে পাওয়া যাচ্ছে না। খবরে শুনি দেশি পেঁয়াজ পাইকারিতে নাকি ৫০ টাকা কিন্তু আমি আজ নিলাম ৭০ টাকা। আদা দেশি ৪০০ টাকা। কেনার সাধ্যের মধ্যে তো নাই।”
খুচরায় আদা বিক্রেতা জসিম বলেন, “আমার দোকানে দেশি আদা ৪০০ টাকা কেজি। ইন্দোনেশিয়ান আদা আছে দুই প্রকার একটা ৩০০, আরেকটা ২৫০ টাকা কেজি। “কোরবানিকে টার্গেট করে দাম বাড়ছে। এমন না আমদানি কম। চায়না আদা বাজারে ঢুকে না অনেকদিন।” কোরবানি ঈদের বাজার করতে এসে জিরার দাম শুনে হতভম্ভ ক্রেতা আবুল কালাম। তিনি বলেন, “আমি তিন পদের মসলা কিনলাম। এলাচি, জিরা আর দারচিনি। তিনটার ভেতরে আমার কাছে জিরার দামটা অনেক বেশি লাগছে।”
দোকানি মো. সাইফুল বলেন, “মসল্লার ভেতরে জিরার দামটাই বেশি। এলাচির দাম বেশি বাড়ে নাই। ৫০-৬০ টাকা বেড়ে এখন ১৭০০ টাকা, দারচিনি ৪৫০ টাকা, লবঙ্গের কেজি ১৭০০ টাকা। রমজানের পরে দামটা বাড়ছে।” মসলা দোকানি প্লাবন বলেন, “জিরা আমাদের কেনাই পড়ে যাচ্ছে ৮০০ টাকা। ৮৫০- ৯০০ টাকা না বেচলে তো পোষাবে না। এত টাকা চালান খাটাইয়া। পাইকারিতেই তো দাম বেশি।”
মাংস রান্নার আরেক দরকারি উপাদান শুকনা মরিচ। কেউ বেটে আর কেউ গুঁড়ো করে এ মসলা দেন তরকারিতে। দাম বেশি এটিরও। কারওয়ান বাজারের বিক্রেতা সোহাগ ও আজিজুল জানান, ভালো মানের শুকনা মরিচের কেজি চলছে ৪৫০-৫০০ টাকা। দেশি শুকনা মরিচও মিলবে না ৪০০ টাকার নিচে। এসময়ে দাম কমেনি রসুনেরও। দেশি রসুনের কেজি ১৫০ টাকা এবং আমদানিগুলোর কেজি ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা।
এদিকে আমদানি বাড়ায় কমেছে পেঁয়াজের দাম। তবে এর রেশ এখন পর্যন্ত শুধু পাইকারিতেই। ঢাকার বৃহত্তম পাইকারি বাজার কারওয়ান বাজারের পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ী মো. আজাদ বলেন, “ভারতীয় পেঁয়াজ ৩৮-৪০ টাকায় কারওয়ানবাজারে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে। আমদানি ইদানিং ভালো আছে। খারাপ না। ঈদের আগে অল্প কিছু ওঠানামা হলেও তা খুব বড় হবে না। দেশিটা ৭০-৮০ টাকা থাকবে, ভারতীয় ৩০ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে থাকবে।”
পাইকারিতে এ দাম হলেও রাজধানী ঢাকার খুচরা বাজারগুলোতে এখনও আমদানি করা পেঁয়াজ কিনতে ৫৫ থেকে ৬৫ টাকা পর্যন্ত গুনতে হচ্ছে। মিরপুরের তিনটি বাজার ও নিউ মার্কেট কাঁচাবাজারে খোঁজ নিয়ে এমন দাম চোখে পড়েছে। এসব বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। খুচরায় বেশি দাম নেওয়া সম্পর্কে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী আজাদের অভিযোগ, “ওরা বেশি ডাকাতি করে, এত ডাকাতি করা তো ভালো না। কেজিতে ১৫ টাকা লাভ এইটা অনেক বেশি। ৬০-৬২ টাকা নেওয়ার তো কোনো কথা না।”
এদিকে সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১০ টাকা কমানোর ঘোষণা এলেও বাজারে নতুন দরের বোতলজাত তেল এখনও ঢোকেনি। বিক্রেতারা বলছেন, তিন দিন পরও নতুন চালান আসেনি। পুরনো তেলই বিক্রি করছেন। নিত্যপণ্যের মধ্যে চাল, ডাল ও আটা-ময়দার আগের দামেই স্থিতিশীল রয়েছে। কমেনি চিনির দামও। আর খুচরা বাজারগুলোতে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে কেজি ১৯০ থেকে ২০০ টাকয়। এক সোনালি মুরগি কিনতে লাগছে ৩০০ টাকা। বাদামি ডিমের ডজন ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা। কিছুটা কমে গরুর মাংসের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭৩০ থেকে ৭৭০ টাকায়।
বাজারে কমেনি মাছের দরও। তেলাপিয়া কিংবা পাঙাশের কেজি কিনতেও দিতে হচ্ছে ২৫০ টাকা পর্যন্ত। গত সপ্তাহের পড়তি দরেই স্থিতিশীল আছে সব ধরনের সবজির বাজার।


প্রকাশিত: জুন ১৭, ২০২৩ | সময়: ৪:৩৬ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ

আরও খবর