কিংসের রেকর্ড শিরোপা জয়ের ম্যাচে দোরিয়েলতনের হ্যাটট্রিক

স্পোর্টস ডেস্ক: শেষের বাঁশি বাজতে উৎসব শুরু ভীষণ সাদামাটাভাবে! ডাগআউট ছেড়ে সেভাবে কেউ ছুটলেন না মাঠে। গ্যালারি অবশ্য রঙিন হলো লাল আবিরের ধোঁয়ায়। প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসে প্রথম দল হিসেবে টানা চার আসরে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার অবিশ্বাস্য কীর্তি গড়ল অস্কার ব্রুসনের দল।
কিংস অ্যারানায় শুক্রবার ১০ গোলের রোমাঞ্চ ছড়ানো ম্যাচে ৬-৪ গোলে জিতেছে কিংস। তিন ম্যাচ হাতে রেখে ৪৬ পয়েন্ট নিয়ে শিরোপা উৎসব সেরে নিয়েছে অস্কার ব্রুসনের দল। কিংসের জয়ে চার গোল করেন দোরিয়েলতন গোমেস নাসিমেন্তো। একটি করে গোল রবসন দি সিলভা রবিনিয়ো ও শেখ মোরসালিনের।
২০০৭ সালে পেশাদার লিগের যাত্রা শুরু। এই আঙিনায় কিংস পা রাখে ২০১৮-১৯ মৌসুমে। অভিষেক মৌসুমেই শিরোপা জিতে চোখ ধাঁধিয়ে দেয় দলটি। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের থাবায় হয়নি ২০১৯-২০ মৌসুমের লিগ। এর পরের দুই লিগের বাজিমাত করে আবাহনী লিমিটেডের পর প্রথম দল হিসেবে হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়নের মুকুট জিতে নেয় কিংস। এবার তার প্রথম দল হিসেবে গড়ল টানা চার লিগ ট্রফি জয়ের রেকর্ড।
পেশাদার লিগ নামকরণের পর সর্বোচ্চ শিরোপার রেকর্ড অবশ্য এখনও আবাহনীরই (৬)। কিংস জিতল চারবার। তিনটি শিরোপা আছে শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাবের। স্বাধীন বাংলাদেশের ফুটবলের শীর্ষ আসরের হিসেবেও এই প্রথম টানা চার শিরোপা জয়ের রেকর্ড গড়ল কিংস। শুরুতেই আক্রমণ, পাল্টা আক্রমণে জমে ওঠে ম্যাচ। ষষ্ঠ মিনিটে এগিয়ে যাওয়া গোলও পেয়ে যায় কিংস। রবসন দি সিলভা রবিনিয়োর পাস ধরে বক্সে ঢুকে আগুয়ান গোলরক্ষকলে পরাস্ত করেন দোরিয়েলতন গোমেস নাসিমেন্তো।
সপ্তদশ মিনিটে মনিরকে ছিটকে দিয়ে বাঁ পায়ের বুলেট গতির শট নিয়েছিলেন রবিনিয়ো। ঝাঁপিয়ে পড়া আশরাফুল ইসলাম রানাকে ফাঁকি দিয়ে বল পোস্টে লেগে ফিরলে ব্যবধান হয়নি দ্বিগুণ। একটু পর জামালের দারুণ ক্রসে ছুটে গিয়েও মাথা ছোঁয়াতে পারেননি দূরের পোস্টে থাকা দীপক রায়, নষ্ট হয় সমতার ভালো সুযোগ।
কাজী তারিক রায়হান ও মোরসালিনের শট আটকে শেখ রাসেলকে ম্যাচে রাখেন রানা। ২৬তম মিনিটে সুজন বিশ্বাসের গোলে সমতায় ফিরে শেখ রাসেল। ইকেচুকু কেনেথের আড়াআড়ি ক্রসে চার্লস দিদিয়ের পা ছোঁয়াতে না পারলেও তার পেছনে বক্সে ফাঁকায় থাকা সুজনের পায়ে যায় বল। নিখুঁত শটে সুযোগ কাজে লাগান তিনি।
৩৮তম মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে দারুণ শটে লক্ষ্যভেদ করেন দীপক। আনিসুর রহমান জিকো ঝাঁপিয়ে পড়েও পাননি বলের নাগাল। ডিফেন্ডাররা দীপককে আটকাতে ব্যর্থ হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করতে দেখা যায় কিংস গোলরক্ষককে। কিংসের চোখে চোখ রেখে খেলতে থাকা শেখ রাসেলও এগিয়ে যায়। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে প্রচণ্ড চাপ দিয়ে দুই গোল তুলে নেয় কিংস। নিখুঁত শটে ডিফেন্ডারের পায়ের ফাঁক দিয়ে দূরের পোস্ট দিয়ে লক্ষ্যভেদ করেন রবিনিয়ো। এরপর বিরতির বাঁশি বাজার আগ মুহূর্তে মোরসালিন দূরপাল্লার নিচু শটে পরাস্ত করেন ঝাঁপিয়ে পড়া রানাকে।
দ্বিতীয়ার্ধের পঞ্চম মিনিটেই দোরিয়েলতনের গোলে স্কোরলাইন ৪-২ করে নেয় কিংস। ৬৬তম মিনিটে হ্যাটট্রিক পূরণ করেন দোরিয়েলতন। বিশ্বনাথ ঘোষের আড়াআড়ি ক্রসে বক্সে আনমার্কড থাকা এই ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড বাকি কাজটুকু সারেন অনায়াসে। ৬৮তম মিনিটে টুটুল হোসেন বাদশা ও বিশ্বনাথকে কাটিয়ে কাছের পোস্ট দিয়ে লক্ষ্যভেদ করেন ইকেচুকু কেনেথ। বলের লাইনে থাকলেও আটকাতে পারেননি জিকো। তাতে কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর আশা জাগে শেখ রাসেলের। সেটাও শেষ হয়ে যায় ৭৬তম মিনিটে কর্নার হেডে দোরিয়েলতন জাল খুঁজে নিলে।
৮৮তম মিনিটে স্পট কিক থেকে কেনেথ হারের ব্যবধান কমান। হার এড়াতে না পারলেও শেখ রাসেলের অবশ্য অন্যরকম তৃপ্তি পাওয়া হলো। প্রথম দল হিসেবে কিংসের জালে চার গোল দিল তারা। ১৬ ম্যাচে ২২ পয়েন্ট নিয়ে এ মুহূর্তে লিগ টেবিলে পঞ্চম স্থানে আছে শেখ রাসেল।


প্রকাশিত: মে ২৭, ২০২৩ | সময়: ৫:২৮ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ

আরও খবর