স্বাদে গুনে ভরপুর বাঘার বেগুন,মিষ্টি কুমড়া ও পেঁয়াজ

নুরুজ্জামান,বাঘা : মনের মত বেগুন কিংবা মিষ্টি কুমড়া কিনতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই যেতে হবে বাঘার হাটে। বাঘা হাটের বেগুন ও মিষ্টি কুমড়ার সমাদর রয়েছে এই অঞ্চলের সাধারণ মানুষের কাছে। এ হাটে কেনা বেচা হওয়া বিভিন্ন সবজির একটি বড় অংশ জুড়ে রয়েছে বেগুন ও মিষ্টি কুমড়া । একই সাথে পদ্মার চরাঞ্চলে উৎপাদিত পেঁয়াজ। এই বেগুন আর মিষ্টি কুমড়ার স্বাদ যেমন অতুলনীয় তেমনি পেঁয়াজের ঝ্যাজ ও কোন অংশে কম নয় ।

রাজশাহী জেলার ঐতিহ্যবাহী বাঘার হাট। এই হাটের বেশির ভাগ ক্রেতারা অত্র অঞ্চলের বাসিন্দা হলেও বিক্রেতাদের অধিকাংশ জনই চরাঞ্চলের মানুষ। পদ্মার প্রত্যন্ত চরের ধূ-ধূ প্রান্তর জুড়ে চাষ করা হয় বেগুন পেঁয়াজ, আর সমতল এলাকার ২২ পাড়া নিয়ে গঠিত বাউসা গ্রামে উৎপাদন হয় দেশ বিখ্যাত কচুর পাশা-পাশি তাল বেগুন। এর মধ্যে এই মুহুর্তে পাওয়া যাবে তাল বেগুন। কচু বাজারে আসতে আরো কিছু দিন দেরি। এ বেগুন দেখতে তালের মত গোলাকার,সাইজ অনেক বড়, স্বাদ অন্য যে কোন বেগুনের চেয়ে আলাদা। এ কারনে দিন-দিন এর চাহিদা বাড়ছে।

সরেজমিন বাউসা গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে ঐ গ্রামের শিক্ষিত যুবক আমিনুর রহমান কৃষি কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করে একজন আদর্শ কৃষক হিসাবে এলাকায় পরিচিতি লাভ করেছে। তাঁর পাশে বসে তাল বেগুন ক্ষেতে ছবি তুলেছেন উপজেলা কৃষি অফিসার। কৃষি অফিসার মুগ্ধ তাঁর চাষাবাদ দেখে। আমিনুরের ক্ষেতে বর্তমানে বেগুনের যে উৎপাদন তা থেকে আশা করা যাচ্ছে মাত্র দুই বিঘা জমি থেকে ৬-৭ মাসে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা আয় হবে তার।

এদিকে পদ্মার কিনার ঘেষা চরবাসীর শ্রম আর ভালবাসার মধ্যে দিয়ে এখানে ফলে নানা জাতের বেগুন আর পেঁয়াজ। পদ্মার চরে উৎপন্ন হওয়া বেগুন নিয়ে সপ্তায় দু’দিন বাঘার হাটের দিনে সকাল থেকেই আসতে থাকে চরাঞ্চলের সাধারণ ব্যবসায়ী ও কৃষক। হাটের দিন সকাল বেলা মুলত: পাইকারী সবজি ক্রয় বিক্রয় হয়। কৃষকরা তাদের উৎপন্ন বেগুন এবং অন্যান্য পসরা সাজিয়ে বসে থাকে হাটে। চলে পাইকারী সবজি ব্যবসায়ী ও তৃণমূল কৃষকদের মধ্যে প্রচন্ড দর কষাকষি।

কৃষক তার উৎপাদিত পণ্যর সর্বোচ্চ দর পেতে চায়। অপর দিকে পাইকারী সবজি ব্যবসায়ীরা কিনতে চায় কম দামে অধিক ভাল সবজি। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ব্যবসায়ীর দর-কষাকষির মাধ্যমে এই সকল বেগুন,মিষ্টি কুমড়া ও অন্যান্য সবজি ক্রয় করে চালান দেয়া হয় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। আর কৃষক তার কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে ফলানো ফসল বিক্রির টাকা দিয়ে সংসারের প্রয়োজনীয় খরচাপাতি করে ফিরে যায় আপন গৃহে। সাধারণ লোকজনের মতে, বাঘা হাটের মিষ্টিকুমড়া , পেঁয়াজ আর বেগুনের গুনগত মানের কারণে জায়গা করে নিয়েছে সাধারণ মানুষদের প্রতিদিনের বাজারের তালিকা।

সার্বিক বিষয়ে বাঘা উপজেলা কৃষি অফিসার শফিউল্লাহ সুলতান বলেন,এ উপজেলায় সকল প্রকার ফসল উৎপাদন হয়ে থাকে। বিশেষ করে উপজেলার সমতল এলাকার ৬ টি ইউনিয়নে যে পরিমান সবজি চাষাবাদ করা হয় তার সমপরিমান চাষ হয় পদ্মার চরাঞ্চলে। এ দিকে থেকে আমরা কৃষকদের নানা রকম পরামর্শ দিয়ে থাকি। তবে এ অঞ্চলে উৎপাদিত সবজির মধ্যে আলু এবং পেঁয়াজ সংরক্ষনের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। তাঁর মতে, এখন বাজারে যে সমস্ত সবজি পাওয়া যাচ্ছে তার মধ্যে সমতল এলাকায় উৎপন্ন তাল বেগুন এবং চরাঞ্চলের মিষ্টি কুমড়া ও পেঁয়াজ সকলের কাছে ব্যপক সমাদৃত।

 


প্রকাশিত: মে ১১, ২০২৩ | সময়: ১১:২০ পূর্বাহ্ণ | সানশাইন

আরও খবর