সর্বশেষ সংবাদ :

পদ্মার চরে বাদাম বিপ্লব

নুরুজ্জামান, বাঘা: রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পদ্মার চরাঞ্চলে এবার ব্যাপক হারে বাদামের চাষ করা হয়েছে। চরাঞ্চলের মাটিতে পলি পড়ায় বিগত যে কোন সময়ের চেয়ে বাদাম চাষ এ বছর বৃদ্দি পেয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি বিভাগ। কৃষকরা বলছেন, শেষ পর্যন্ত যদি আবহাওয়া অনুকুল থাকে তাহলে এবার বাদাম চাষে দ্বিগুন ফলন হবে। এতে করে বদলে যাবে কৃষকের জীবনমান।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, বাঘা উপজেলা ৬টি ইউনিয়নে যে পরিমান বাদাম চাষ হয় তার চেয়েও অনেক বেশি পরিমান বাদামের চাষাবাদ করা হয়ে থাকে সীমান্ত ঘেষা ৭ নং চকরাজাপুর ইউনিয়নের পদ্মার চরাঞ্চলে।
তাদের দেয়া তথ্য মতে, এবার ১২ শ’ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হলেও চাষ হয়েছে তার চেয়েও অনেক বেশি জমিতে। আশা করা যাচ্ছে আর মাত্র এক-দু’মাস পর থেকে বাদাম তোলার কাজ শুরু হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য বাদাম খুবই উপকারী। এতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ই, ফাইবার, সেলেনিয়াম, ভিটামিন-সি, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, অ্যামাইনো অ্যাসিড, পটাশিয়াম এবং ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডসহ আরও কত কি আছে, যা নানাভাবে শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি করে শরীরকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।
তাঁদের মতে, প্রতিদিন যদি একমুঠো বাদাম খাওয়া যায়, তাহলে ডায়াবেটিস রোগের ঝুঁকি অনেকটাই কম হয়। এতে থাকা উপকারী উপাদান রক্তের মাত্রা সঠিক রাখতে সাহায্য করে। এমনকি ক্যানসারের মতো মরণ রোগের ঝুঁকিও কম করতে সাহায্য করে বাদাম। এতে থাকা ফলিক অ্যাসিড ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে। বিশেষ করে কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে বাদামের জুড়ি মেলা ভার।
সরেজমিনে পদ্মার চরাঞ্চলের পলাশি ফতেপুর, করারি নওশারা, কালিদাদ খালি, চকরাজাপুর, দাদপুর ও টিকটিকি পাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, এ বছর অনেক কৃষক বাদামের চাষ করেছেন। এদের মধ্যে অনেকেই জমি বর্গা নিয়ে বাদম চাষ করেছেন। তারা আসা করছেন শেষ পর্যন্ত যদি আবহাওয়া অনুকুল থাকে তাহলে এবার লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি বাদাম উৎপাদন হবে। আবার অনেকেই নিজের জমিতে বাদাম চাষ করে বাজার মুল্য ভালো হওয়ায় নতুন স্বপ্নে বিভর।
চরাঞ্চলের চকরাজাপুর এলাকার কৃষক শিক্ষক গোলাম মোস্তফা, মজিবর রহমান, শফিকুল ইসলাম এবং কালিদাস খালি গ্রামের হাফিজুল ইসলাম, জালাল উদ্দীন, জহুরুল মালিথা ও আকছেন শিকদার জানান, বিগত যে কোন বছরের তুলনায় এবার পদ্মার চরে বাদাম চাষ বেশি হয়েছে। এর কারণ হিসাবে তারা জানান, গত বছর বাদামের মুল্য ভাল পাওয়ায় এবার তারা সহ অধিকাংশ কৃষক বাদাম চাষে আগ্রহী হয়েছেন।
চরাঞ্চল এলাকার ইউপি সদস্য আব্দুর রহমান জানান, তিনি চলতি মৌসুমে ৫ বিঘা জমিতে বাদামের চাষ করেছেন। উপজেলা কৃষি বিভাগের সহযোগিতা নিয়ে উপযুক্ত পরিচর্যা করায় বাদাম ক্ষেতে এবার পোকার আক্রমণ হয়নি। অন্যান্য বছরের চেয়ে ভালো ফলন পাওয়ারও আশা করছেন তিনি। অনুরুপ কথা বলেন, বাদাম চাষি আকছেদ শিকদার ও রতন গাজি।
সার্বিক বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান জানান, বাদাম পরিচর্যায় খরচ এবং সময় দুটোই কম লাগে। তাঁর মতে, গতবছর বাদাম চাষ করে কৃষকরা ন্যায্য মুল্য পাওয়ায় এবার পদ্মার চরাঞ্চলের প্রায় সকল কৃষকই বাদাম চাষে আগ্রহী হয়েছেন। একই সাথে ফলন ভালো হওয়ায় চিনা জাতের বাদামের পাশা-পাশি অনেকে ত্রি-দানা জাতের বাদামের আবাদ করেছেন।
তিনি বাদামের বীজ বোপন, পরিচর্যা ও কীটনাশক ব্যবহার সম্পর্কে কৃষকদের নানা পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করে আসছেন বলে জানান।


প্রকাশিত: মে ১১, ২০২৩ | সময়: ৫:২৮ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ