চারঘাটে আমের কেজি ২ টাকা

চারঘাট প্রতিনিধিঃ

প্রচন্ড খরায় বোটা শুকিয়ে ও বুধবারের কালবৈশাখী ঝড়ের তাণ্ডবে কয়েকশ মণ আম ঝরে পড়ছে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার আম বাগান গুলোতে। আর সেই আম বিক্রি হচ্ছে মাত্র ২ টাকা কেজিতে। এ অবস্থায় চরম হতাশায় পড়েছেন স্থানীয় আমচাষিরা।

 

 

 

উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী আমের জন্য বিখ্যাত হলেও মূলত চারঘাট-বাঘার আম নিয়েই রাজশাহী আমের জন্য বিখ্যাত। সমগ্র রাজশাহী জেলায় আম বাগান রয়েছে ১৭ হাজার ৯৪৩ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে চারঘাট-বাঘা দুই উপজেলা মিলে বাগান রয়েছে ১২ হাজার ২১৮ হেক্টর জমিতে। যা পুরো রাজশাহী জেলার প্রায় দুই তৃতীয়াংশ। এ মৌসুমে এই দুই উপজেলার প্রায় ৭৫-৮০ শতাংশ আম গাছে মুকুল এসেছিল।

 

 

 

সরেজমিন বৃহস্পতিবার চারঘাটের বিভিন্ন আম বাগান ও আমের আড়তসহ বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, ঝরে পড়া আম কেনার ধুম পড়েছে ফড়িয়া ব্যবসায়ীদের মাঝে। ব্যবসায়ীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রতি কেজি আম কিনছেন মাত্র ২ টাকা কেজি দরে। ছোট সাইজের আমগুলো কিনছেন দেড় টাকা কেজি দরে।

 

 

 

আম চাষিরা বলছেন, মৌসুমের শুরুতেই তীব্র খরায় আম নিয়ে বিপাকে পড়েন চাষিরা। গাছের গোড়ায় রস না থাকায় বোটা শুকিয়ে গুটি আম ঝরে পড়া শুরু হয়। এর মাঝে গত বুধবার কালবৈশাখী ঝড় আঘাত হেনেছে। সবমিলিয়ে কয়েকশ মণ আম ঝরে গেছে। ল্যাংড়া, ফজলী ও হিমসাগর জাতের আম বেশি ঝরেছে।

 

 

 

উপজেলার রাওথা গ্রামের আমচাষি রবিউল ইসলাম বলেন, আমার ৬ বিঘা বাগানে প্রায় ৫ মণ আম ঝরে গেছে। ২ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি। প্রতি বছর কিটনাশকের দাম দ্বিগুণ হচ্ছে, কিন্তু কাঁচা আমের কেজি ২ টাকাই আছে। চরম বেকায়দায় পড়েছি আমরা।

 

 

 

পরানপুর এলাকার আমচাষি আনোয়ার হোসেন বলেন বলেন, ঝরে পড়া আম আড়তে এনে ২-৩ টাকা কেজি বিক্রি করছি। গাড়ি ভাড়া ও শ্রমিক খরচই উঠবেনা। আম উৎপাদনের ক্ষেত্রে চারঘাট-বাঘা এলাকার সুনাম রয়েছে সারাদেশে। এখানে যদি আম সংরক্ষণাগার বা কোন জুস কোম্পানি সরাসরি আম কিনতো তাহলে এতোটা লোকসান বহন করতে হতো না আম চাষিদের।

 

 

 

রাওথা এলাকার ফড়িয়া আম ব্যবসায়ী সেতাব আলী বলেন, আমরা গ্রামে ঘুরে ঘুরে ঝরে পড়া আম ৮০ টাকা মণ কিনছি। এসব আম প্রতি মণে ২০-২৫ টাকা লাভে আড়তদারের কাছে বিক্রি করবো। আড়তে এসব আমের চাহিদা না থাকায় আমের দাম কম বলে জানান তিনি।

 

 

 

ভায়ালক্ষীপুর এলাকার আমের আড়তদার মোজাম্মেল হক বলেন, ফড়িয়াদের কাছে থেকে ১০০-১১০ টাকা মণ দরে ঝরে পড়া আম কিনছি। আম ঢাকায় পাঠাবো। কিন্তু আমের চেয়ে পাঠানোর খরচই বেশি। ট্রাক ভাড়া ৩০ হাজার টাকা দেবার পর এই আম বিক্রি করে লাভ করা কঠিন।

 

 

 

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা খন্দকার ফিরোজ মাহমুদ বলেন, খরা ও বৈশাখী ঝড়ে কিছু আম ঝরে গেছে। তবে ঝড়ের সাথের বৃষ্টিটা আমের জন্য খুবই উপকার হয়েছে। আমের বোটা শক্ত ও আমকে দ্রুত পরিপক্ব করে তুলবে। এখনো গাছে যে পরিমাণ আম আছে যদি বড় কোনো প্রাকৃতিক দূর্যোগ না হয় তবে কৃষকেরা লাভবান হবেন।

সানশাইন / শামি


প্রকাশিত: এপ্রিল ২৮, ২০২৩ | সময়: ৪:৫১ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine

আরও খবর