সর্বশেষ সংবাদ :

রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচন : ভোটের মাঠে শুধুই লিটন

স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহী সিটি করপোরেশনের তফসিল ঘোষণার পর দলীয় মনোনয়ন পেয়ে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন বর্তমান মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। এখন পর্যন্ত মেয়র পদে আর কাউকে দেখা যাচ্ছে না। প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী হিসেবে বিএনপি, জামাত কিংবা অন্য কোনো দলের কাউকেই মাঠে দেখা যায় নি। এমনকি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও ঘোষণা দেয় নি কেউ। অন্য কোনো দলের নেতারা ঈদেও সক্রিয় হয়নি। শুভেচ্ছা বিনিময়ের বালাই নেই কারো মধ্যে। তবে এক মুহুর্ত বসে নেই আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।
দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকেই নানাভাবে মানুষের সঙ্গে কুশল বিনিময়, মতবিনিময়সহ নানা কার্যক্রম নিয়ে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। যদিও লিটন নিজেও ফাঁকা মাঠে খেলতে চান না। তিনি ভোট করেই নির্বাচনে বৈতরণী পার হতে চান। তবে সাড়া মিলছে না অন্য কারো।
এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এখন রাজশাহীতে লিটনের বিকল্প প্রার্থী কেউ নেই। বিএনপি কোনঠাসা অনেক আগে থেকেই। অন্য দলগুলোও অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে। তাছাড়া গত ৫ বছরে খায়রুজ্জামান লিটন যেভাবে উন্নয়ন করে রাজশাহীকে পাল্টে দিয়েছেন, তার এমন উন্নয়নের কারণে অন্য দলের কেউ প্রতিদ্বন্দ্বি হওয়ার সাহস পাচ্ছেন না। তাই এবারের সিটি নির্বাচনে বিএনপি, জামায়াত কিংবা অন্য দলের কাউকে প্রতিদ্বন্দ্বি হিসেবে দেখা যাচ্ছে না।
তবে ভোটের মাঠে বসে নেই একমাত্র লিটন। শুরু থেকেই তিনি তৎপর। প্রতিদিন মানুষের খোঁজ নিচ্ছেন। মানুষের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন। দলীয় নেতাকর্মীদের সক্রিয় করছেন। রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগও এক হয়ে লিটনের পক্ষে আওয়াজ তুলেছে। বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষও এবার লিটনের পক্ষেই রয়েছেন।
ঈদের আগে থেকেই লিটন সব মানুষের খোঁজ রাখছেন। মতবিনিময় করে সাধারণ মানুষের মতামত গ্রহণ করছেন। ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। রাজশাহী মহানগরের বর্তমান ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দকে নিয়ে ঈদ পুনর্মিলনী ও মতবিনিময় সভা করেছেন। সর্বশেষ মঙ্গলবার রাজশাহীর ডা, কইছার রহমান অটিটোরিয়ামে নগরের বোয়ালিয় পশ্চিম, রাজপাড়া থানা আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন মহল্লা কমিটির সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন লিটন। এ সময় তিনি আসন্ন সিটি নির্বাচনে সবাইকে নৌকার পক্ষে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
এর আগে সোমবার নগরীর টি-বাঁধা সংলগ্ন পিঁপড়া কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত ঈদ পুনর্মিলনী ও মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।
এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, আগামী ২১ জুন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে চতুর্থ বারের মতো আমাকে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২১ জুন নির্বাচনে বিজয়ী হতে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
লিটন বলেন, রাজশাহীতে ব্যাপক উন্নয়ন দৃশ্যমান হয়েছে। এবার কর্মসংস্থান ও শিল্পায়নে জোর দেওয়া হচ্ছে। এবার কর্মসংস্থান ও শিল্পায়ন হবে ইনশাল্লাহ। রাজশাহীতে বিসিক শিল্পনগরী-২ এর কাজ শেষ হয়েছে। সেখানে ছোট ছোট কারখানা হবে। বড় ব্যবসা-বাণিজ্য ভারতের সঙ্গে হতে পারে। ভারতের মুর্শিদাবাদের ধূলিয়ান থেকে রাজশাহী হয়ে ঢাকা পর্যন্ত নৌরুট চালু করতে উভয় দেশের বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলেছি। প্রথম পর্যায়ে ধূলিয়ান থেকে গোদাগাড়ীর সুলতানগঞ্জ পর্যন্ত নৌরুট চালু হবে। এরপর সুলতানগঞ্জ থেকে রাজশাহী পর্যন্ত। এটি হলে ভারত থেকে বিভিন্ন মালামাল দেশে আসবে, আবার আমাদের দেশ থেকে বিভিন্ন মালামাল ভারতে যাবে। এর মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে, অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
আগামী ২১ জুনের নির্বাচনে নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত করতে ছাত্রলীগকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন।
এদিকে রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ার পর শুরু হয়েছে কাউন্সিলর প্রার্থীদের দৌড়-ঝাঁপ। কাউন্সিলর প্রার্থীরা সক্রিয় হয়েছে তফষিল ঘোষণার পর থেকেই। তারা অনেকে দলের সমর্থন পেতে লিটনের কাছে ভিড় করতে শুরু করে। অনেকেই ফুল হাতে ছুটে যাচ্ছেন খায়রুজ্জামান লিটনকে শুভেচ্ছা জানাতে। এছাড়াও মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের নিয়েও খায়রুজ্জামান লিটনের সমর্থন পেতে দৌড়-ঝাঁপ করছেন অনেকেই।
দলীয় ব্যানারে কাউন্সিলর প্রার্থীদের নির্বাচন করার সুযোগ না থাকলেও আওয়ামী লীগের সর্মথন নিয়ে নির্বাচনী মাঠে সুবিধা নিতে ৩০টি ওয়ার্ডের অন্তত ৬০ থেকে ৭০ জন নেতা দৌড়-ঝাঁপ শুরু করেছেন।
খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, কাউন্সিলর প্রার্থীরা আসছেন শুভেচ্ছা বিনিময় করতে। কাউন্সিলর প্রার্থীরা নিজেদের মতো করে নির্বাচন করবেন। এখানে দলীয় সিদ্ধান্তের কোনো বিষয় নাই। দল থেকে কাউকে সমর্থন দেয়া হবে না।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, রাসিকের ১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্যানেল মেয়র-২ রজব আলী এবারও নির্বাচনে অংশ নিবেন। সেই সঙ্গে ওই ওয়ার্ড থেকে এবার আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য দৌড়-ঝাঁপ করছেন ব্যবসায়ী মখলেছুর রহমান। এর বাইরেও আরও কয়েকজন নেতা আওয়ামী লীগের সমর্থন পেতে চেষ্টা করছেন।
নগরীর ৩ নং ওয়ার্ড থেকে এবার আওয়ামী লীগের সমর্থনে কাউন্সিলর পদে অংশ নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন শামীম উদ্দিন, বর্তমান কাউন্সিলর কামাল হোসেন এবং সাবেক বিএনপি নেতা ও সাবেক কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান হাবিব। বছর কয়েক আগে হাবিব আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন।
৫ নং ওয়ার্ড থেকে বর্তমান কাউন্সিলর কামরুজ্জামান কামরু এবং সাবেক কাউন্সিরর হাসিমের ছেলে সুজন আওয়ামী লীগের সমর্থন পেতে চেষ্টা করছেন।
নগরীর ১৫ নং ওয়ার্ড থেকে বিএনপি নেতা আব্দুস সোবহান লিটন এবং যুবলীগ নেতা মোস্তাফিজর রহমান ও আদমান হোসেন এবার আওয়ামী লীগের সমর্থন পেতে চেষ্টা করছেন।
নগরীর ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেতে চেষ্টা করছেন মইফুল ইসলাম এবং বর্তমান কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা মাহাতাব উদ্দিন।
নগরীর ৩ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর কামাল হোসেন বলেন, ‘এবারও নির্বাচন করবো। দলের নেতাকর্মীরা চাইছেন আমি নির্বাচনে অংশ নেই। সেই হিসেবে সকল প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছি। মেয়র সাহেবের সঙ্গেও দেখা করেছি।’
নগরীর ১০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আক্কাছ আলী বলেন, ‘আমি কোনো দলের হয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে চাই না। আমার এলাকার সাধারণ ভোটারদের সমর্থন নিয়ে আমি এগিয়ে যেতে চাই এবারও। নগরীর ৩০ টি ওয়ার্ড ও সংরক্ষিত ১০ টি ওয়ার্ডে এখন সক্রিয় রয়েছেন সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থীরা। নিজ নিজ এলাকায় তারা প্রচার শুরু করেছেন। কেউ কেউ এলাকায় শোডাউন দিচ্ছেন। ঈদের দিন বিশাল নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে নগরীর ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে শোডাউন দিয়েছেন তৌহিদুল হক সুমন। তিনি বর্তমান কাউন্সিলর।


প্রকাশিত: এপ্রিল ২৬, ২০২৩ | সময়: ৫:৩১ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ

আরও খবর