সর্বশেষ সংবাদ :

বাঘায় চিয়া সিড চাষে দিনবদলের স্বপ্ন দেখছে কৃষক

স্টাফ রিপোর্টার,বাঘা : রাজশাহীর বাঘায় দ্বিতীয় বারের মতো চাষ হচ্ছে ঔষধি ফসল ‘চিয়া সিড’। উপজেলা কৃষি অফিসারের পরামর্শে বেশ কয়েকজন কৃষক চাষ করছেন এই নতুন ফসল। এতে আশানুরূপ ফলনের সম্ভাবনা এবং দিন বদলের স্বপ্ন দেখছেন তাঁরা ।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার মনিগ্রাম এলাকায় প্রায় এক বিঘা জমিতে দ্বিতীয় বারের মতো চিয়া চাষ শুরু করছেন ঐ এলাকার কৃষক সুজন আলী। প্রতিটি গাছেই ধরেছে ফুল। এ ফুল গুলো খুব শির্ঘই বীজে পরিনত হবে।তাঁর দেখে ঐ অঞ্চলের আরিফুল ইসলাম, আজিজুর রহমান ও পার্শ্ববর্তী হেলালপুর গ্রামের কৃষক সাজদার রহমান এবং ফারুক আলী-সহ আরো ছয়-সাতজন কৃষক উদ্বুদ্ধ হয়ে এ ফসল চাষ শুরু করেছেন। এ সকল কৃষকদের সাথে কথা বললে তাঁরা বলেন, আমরা উপজেলা কৃষি অফিসার শফিউল্লাহ’র মাধ্যমে জানতে পেরেছি এটি খুব লাভ জনক ঔষধি ফসল এবং মানব দেহের জন্য অত্যান্ত উপকারী। তাই পরীক্ষা মূলক ভাবে এ ফসলের চাষাবাদ শুরু করেছি।

বাঘা উপজেলা কৃষি অফিসার শফিউল্লাহ সুলতান জানান, চিয়া সিড় সুপার ফুড হিসেবে খ্যাত । এতে রয়েছে নানান ঔষধি গুণ। এর বৈজ্ঞানিক নাম ‘সালভিয়া হিসপানিকা’। মেক্সিকো-সহ ইউরোপের দেশগুলোতে ওষুধি ফসল হিসেবে চিয়া চাষ হয়। এ বীজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্লোরোজেনিক, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, কেম্পফেরল, কোয়েরসেটিন ও ক্যাফিক অ্যাসিড নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, দ্রবনীয় এবং অদ্রবণীয় আঁশ। এক আউন্স চিয়ায় রয়েছে প্রায় ৬ গ্রাম প্রোটিন, ১১ গ্রাম ফাইবার, ১৩ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট। এতে দুধের চেয়ে পাঁচগুণ বেশি ক্যালসিয়াম, কলার চেয়ে দ্বিগুণ, পালং শাকের চেয়ে তিনগুণ ও ব্রকলির চেয়ে সাতগুণ পুষ্টি রয়েছে। যা মানবদেহে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ম্যাঙ্গানিজের চাহিদা পূরণ করে ও ক্ষতিকারক কোলেস্টরল (এলডিল) হ্রাস করে এবং উপকারি এইচডিএল বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তিনি বলেন, গত বছর পরীক্ষা মূলক ভাবে বাঘায় দু’জন কৃষক এ ফসলের আবাদ শুরু করে ছিলেন। এবার ১২ জন করছেন। এ ফসল চাষে যাতে আগামীতে আরও কৃষক আগ্রহী হন সে বিষয়েও কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা ও সহযোগিতা করা হবে।

অপর দিকে চিকিৎসকরা বলছেন, চিয়া সিড মানদেহে শক্তি-কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে। ওজন কমায়, রক্তে সুগার স্বাভাবিক রাখে, হাড়ের ক্ষয়রোধ করে, মলাশয় পরিষ্কার রাখে। ফলে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। চিয়া অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেয়। প্রদাহজনিত সমস্যাও দূর করে।’এটিতে অ্যামিনো অ্যাসিড থাকায় ভালো ঘুম হতে সাহায্য করে। শরীরের শর্করার মাত্রা কমিয়ে হজমে সহায়তা করে। উচ্চমাত্রার ক্যালশিয়াম থাকায় হাঁটু ও জয়েন্টের ব্যাথা দূর করে। এছাড়াও নিয়মিত এটি খেলে ত্বক, চুল ও নখ সুন্দর থাকে। এটি বিভিন্ন ধরনের খাবারের সঙ্গে খেতে হয় আবার পানিতে ভিজিয়ে রেখেও খাওয়া যায়।

সার্বিক বিষয়ে রাজশাহী কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো: মোজদার হোসেন জানান, চিয়া বীজ বিদেশি একটি ফসল। পুদিনার একটি প্রজাতি। এটি বেলে দো’আঁশ মাটিতে ভালো জন্মে। নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে চিয়া বীজ বপন করতে হয়। মার্চের শেষ থেকে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ফলন তোলা যায়। এটি চাষ ও ভালো ফলন পেতে বেশি ব্যবহার করতে হয় জৈব সার। প্রতি বিঘা জমিতে বীজ উৎপাদন হয়ে থাকে ৭০-৮০ কেজি। যা বাজারে প্রতি কেজি ৮শ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়ে থাকে। উৎপাদন খরচ পড়ে বিঘায় 5/6 হাজার টাকা। বর্তমানে আমাদের দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই ফসলের চাষ শুরু হয়েছে। আমরা আশা করছি, আগামীতে এর চাষাবাদ আরো বাড়বে।


প্রকাশিত: এপ্রিল ৪, ২০২৩ | সময়: ৪:০০ অপরাহ্ণ | সানশাইন