সোমবার, ২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তের প্রতিবেদন দাখিল হয়নি এখনো। ঘটনার পর গত ১৩ মার্চ পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
কমিটিকে পরবর্তী সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। গত ২১ মার্চ নির্ধারিত সময় পার হয়ে আরও ৭ কার্যদিবস অতিবাহিত হলেও প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি তদন্ত কমিটি। কবে নাগাদ প্রতিবেদন জমা হবে, সেটিও অনিশ্চিত। এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক বলেছেন, ‘প্রতিবেদন নয়, উত্তেজনা প্রশমনের জন্যই এই কমিটি গঠন করা হয়।
গত ১১ মার্চ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে বাস সুপারভাইজারের কথা-কাটাকাটির জের ধরে বিনোদপুর বাজারে সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। পরে সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতারা গেলে স্থানীয় লোকজন তাঁদের ধাওয়া করেন। পরে বিষয়টিকে সাধারণ শিক্ষার্থীর ওপর স্থানীয় লোকজনের হামলা বলে প্রচার করা হলে শিক্ষার্থীরা এতে জড়িয়ে পড়েন।
অন্যদিকে বিনোদপুর বাজারের ব্যবসায়ীদের পক্ষে অবস্থান নেন বিনোদপুরের স্থানীয় লোকজন। এতে আড়াই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন এবং একটি পুলিশ বক্স ও রাস্তার ধারের অন্তত ১০টি দোকান পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে পুলিশ। দুই দিন ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ রাখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
ঘটনার প্রতিবাদে ১২ মার্চ সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাঁরা চারুকলাসংলগ্ন রেললাইন ও ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে অগ্নিসংযোগ করে সড়ক অবরোধ করেন। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, পুলিশ ও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তিনটি পৃথক মামলা করে। সংঘর্ষের দুই দিন পর ১৩ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য হুমায়ুন কবীরকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। প্রতিবেদন জমা না দেওয়ার বিষয়ে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অধ্যাপক হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘তদন্ত প্রায় শেষের দিকে। যাদের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলাম, তাদের অনেকের কাছেই পৌঁছাতে পারছিলাম না। ফলে কয়েক দিন বেশি লেগে গেছে। আর রোজার কারণে আরও বিলম্ব হচ্ছে। তবে আমাদের রিপোর্ট লেখালেখির পর্যায় চলছে। আশা করছি খুব শিগগিরই জমা দিতে পারব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ও বিশিষ্ট নাট্যজন মলয় ভৌমিক বলেন, ‘এই উপমহাদেশে অনেক ঘটনারই তদন্ত কমিটি গঠন হয়। কিন্তু বেশির ভাগ ঘটনার প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখে না। এটি বহু প্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে। তবে দেশ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে এ ঘটনাটির একটি সুষ্ঠু তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া ও সেই অনুযায়ী দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ খুবই জরুরি।
আর তদন্ত কমিটি গঠনকে শিক্ষার্থীদের উত্তেজনা প্রশমনের মাধ্যম উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, ‘আমরা দেখি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ঘটনা ঘটলে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু এর রিপোর্ট শেষ পর্যন্ত কেউ জানতে পারে না। এতে কারও সুপারিশ থাকে কি না, দায়দায়িত্ব কার থাকে আমরা সেটিও পরিষ্কারভাবে জানতে পারি না। এই ঘটনায়ও এমনটিই হওয়ার কথা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, ‘এর আগেও অনেক কমিটি গঠন হয়েছে কিন্তু কোনো প্রতিবেদনই আলোর মুখ দেখেনি। এটিও দেখবে না হয়ত উল্লেখ করে তিনি বলেন তদন্ত কমিটি গঠন করা মানে বিষয়টিকে ‘ইগনোর’ করে যাওয়া। এত বড় একটা ঘটনা, এত শিক্ষার্থী রক্তাক্ত, তারপরেও যদি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত করতে ঢিলেমি করে এটা খুবই দুঃখজনক।’#