২৫ হাজারে কোমরে দড়ি, লক্ষ-কোটিতে কিছু হয় না

সানশাইন ডেস্ক: চেক প্রতারণার এক মামলা সংক্রান্ত আবেদনে পাবনার ১২ কৃষককে কারাগারে পাঠানোর প্রসঙ্গ টানলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম। তিনি বলেছেন, ২৫ হাজার টাকার জন্য সাধারণ কৃষকের কোমরে দড়ি বেঁধে টেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, অথচ যাদের কাছে ২৫ লক্ষ-কোটি টাকা পাওনা, তাদের কিছু হয় না।
ঋণ আদায়ে ব্যাংকের চেক প্রতারণার মামলায় নিষেধাজ্ঞা দিয়ে হাই কোর্টে এক রায় স্থগিতে করা আবেদনের শুনানিতে সোমবার তার এই মন্তব্য আসে। গত ২৩ নভেম্বর এক রায়ে হাই কোর্ট বলে, ঋণ আদায়ে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে চেক প্রতারণার মামলা করতে পারবে না।
এতে আরো বলা হয়, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ আদায়ের জন্য শুধু ২০০৩ সালের অর্থঋণ আইনের বিধান অনুযায়ী অর্থঋণ আদালতে মামলা করতে পারবে। চেক প্রতারণার অভিযোগে ব্র্যাক ব্যাংকের করা এক মামলায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলীর দণ্ড বাতিলও করে হাই কোর্ট।
এই রায় স্থগিতে ব্র্যাক ব্যাংকের পক্ষে চেম্বার আদালতে শুনানি করেন এ এম আমিন উদ্দিন। বাদীপক্ষে ছিলেন আইনজীবী আব্দুল্লা আল বাকী। শুনানির শুরুতে ব্র্যাক ব্যাংকের আইনজীবী আমিন উদ্দিন আদালতকে বলেন, “এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। হাই কোর্ট রায় দিয়ে বলেছেন, কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যক্তির বিরুদ্ধে চেক ডিজঅনারের মামলা করতে পারবে না। নিম্ন আদালতে এ সংক্রান্ত বিচারাধীন সব মামরায় স্থগিতাদেশ দিয়েছেন।” তখন চেম্বার বিচারপতি বলেন, পূর্ণাঙ্গ রায় না দেখে এ বিষয়ে আপাতত কিছু বলা যাবে না। চেম্বার বিচারপতি এসময় ব্র্যাক ব্যাংকের আইনজীবীকে উদ্দেশ করে বলেন, “২৫ হাজার টাকার জন্য সাধারণ কৃষকদের কোমরে দড়ি বেঁধে টেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অথচ যাদের কাছে লক্ষ-কোটি টাকা পাওনা, তাদের কিছু হয় না।”
ঋণ দেওয়ার সময় গ্রাহকের কাছ থেকে নেওয়া চেক সম্পর্কে বিচারক বলে, “এই চেকে কে স্বাক্ষর করে, কে টাকার অঙ্ক বসায়, কে কলাম পূরণ করে, তার কোনো হদিস নেই। এই চেক নেওয়া যাবে না বলে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে, তার পরেও ব্যাংকগুলো কেন মানছে না?”
পরে আবেদনটি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে আগামী ১ ডিসেম্বর শুনানির জন্য পাঠিয়ে দেয় চেম্বার বিচারপতি। পাবনায় ঈশ্বরদী উপজেলায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা ঋণ খেলাপির মামলায় সম্প্রতি কারাগারে পাঠানো হয়েছিল ১২ জন কৃষককে। এনিয়ে তুমুল সমালোচনার মধ্যে ওই ১২ জনসহ পরোয়ানাভুক্ত ৩৭ কৃষককে রোববার জামিন দেয় পাবনার আদালত।


প্রকাশিত: নভেম্বর ২৯, ২০২২ | সময়: ৫:৪২ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ

আরও খবর