সর্বশেষ সংবাদ :

আ’লীগ নেতার বিরুদ্ধে কৃষি জমিতে পুকুর খনন ও মাটি বিক্রি অভিযোগ

মোহনপুর প্রতিনিধি: রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার ধূরইল ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান মেম্বার আলমগীর হোসেন, বাকশিমইল ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান, জেলা যুবলীগ নেতা আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে কৃষি জমিতে পুকুর খনন করে মাটি বিক্রির অভিযোগ উঠেছে।
তাদের দাবি পুকুর খননেন উপজেলা প্রশাসন অনুমতি নেওয়া হয়েছে। তবে সত্যাতা মিলেনি। এর অবৈধ পুকুর খনন বন্ধে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয় জনগণ। এর আগে সাবেক জেলা প্রশাসক আব্দুল হামিদ পুকুর খনন বন্ধে আলমগীর মেম্বারের নামে যেখানে পাবে সেখান গ্রেফতার করা হবে বলে হুলিয়া জারি করেন এবং তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলাও হয়।
ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি ও এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় রাজনৈতিক ফাঁক ফোকর দিয়ে বেঁচে যায় সে। আর এ অবৈধ কাজে তাকে সাহায্য করেন জেলা যুবলীগ নেতা আনোয়ার হোসেন। পুকুর খননেন মাটি পাকা রাস্তায় বহনের ফলে নষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি টাকা মূল্যের সরকারি রাস্তা। ঘটছে দুর্ঘটনা।
বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, মোহনপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি ও প্রেসক্লাব সভাপতি বরাবর পাঠানো লিখিত অভিযোগের মাধ্যমে জানাগেছে, জেলার মোহনপুর উপজেলার ধুরইল বিলে ভুমিদস্যু সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সংঘবদ্ধ একটি চক্র বিভিন্ন এলাকায় তিন ফসলী জমিতে পুকুর খনন করে মাটি বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
এর আগে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে আলমগীর মেম্বার ও তার লাঠিয়াল বাহিনী সিন্ডিকেট অত্র ধুরইল ইউনিয়ন সর্বত্র ইতিমধ্যেই শত শত বিঘা তিন ফসলী জমিতে পুকুর খনন ও মাটি বিক্রি করে গড়েছেন টাকার পাহাড়।
পুকুর খনন বন্ধে বাঁধা হওয়ায় নবিন প্রবীণসহ অনেককে মারধোর করেন ভূমি খেকো মেম্বার আলমগীর মেম্বার ও তার লোকজন।
গত কয়েকদিন আগে আলমগীর মেম্বারের ডানহাত ধুরইল পূর্বপাড়া মৃত নূর মোহাম্মদের ছেলে আক্কাস আলী (৫৫)।
ধূরইল মৌজার কাম বিলে ধানী জমিতে পুকুর খননের উদ্দেশ্যে ভেকু মেশিন নামালে ফসলী জমি রক্ষায় স্থানীয়রা বাধা প্রদান করেন। এ ঘটনায় আলমগীর মেম্বার ও তার লোকজন হাজির বাড়ির আলতাফ নামে একজন প্রবীণকে ব্যাপক মারধোর করে যে কোন মূল্যে পুকুর খনন করবেন বলে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন স্থানীয়দের।
ঘটনার পর মোহনপুর থানা পুলিশ এলাকায় টহল দিয়ে চলে যায় এরপর আবারো এলাকায় উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়ালে স্থানীয় চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেনের হস্তক্ষেপে পরিবেশ শান্ত হয়। এরপর ১১ মার্চ শনিবার আবারো মাটি কেটে পুকুরের পাড় তৈরী শুরু করেন।
অভিযোগে আরো জানাগেছে, স্থানীয় সরকারের একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হওয়ার কারনে ক্ষমতার অপব্যবহার ও জনসাধারণকে জিম্মি করে সরকারি নিয়মনীতি অমান্য ও আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রায় ১০বিঘা জমিতে পুকুর খননের কাজ অব্যাহত রেখেছে মেম্বার ও তার লোকজন। বর্তমানে যেখানে পুকুর খনন করা হচ্ছে সেখানে সামন্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা তৈরী হয়ে শত শত বিঘা জমি তলিয়ে যাবে এবং কোন ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হবেনা।
জমির মালিকদের অনুমতি ছাড়াই এবং বাঁধা দেওয়ার পরও আলমগীর মেম্বার জোর করে পুকুর খনন করছেন। বাধা দিলে বিভিন্নভাবে হয়রানি, হুমকি ধামকিসহ মামলায় জড়ানোর ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। বর্তমান ইউপি সদস্য আলমগীর হোসেন ইতোমধ্যেই এলাকায় প্রায় ৬০০ বিঘা আবাদি জমিতে পুকুর খনন করেছেন।
এই ভূমিদস্যু আলমগীর ও তার লাঠিয়াল বাহিনীর বিরুদ্ধে পুকুর খনন বন্ধে ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস পায়না। আর যারা মুখ খুলে তাদের ভাগ্যে জুটে মারধোরসহ হুমকি ধামকি ও হয়রানি। খাদ্যশস্য স্বনির্ভরতার জন্য আবাদি জমি ও পরিবেশ রক্ষায় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন আবেদনকারীরা।
প্রেসক্লাবে অভিযোগের পর স্থানীয় সাংবাদিকরা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে ফোন করায় ১৬ মার্চ সন্ধ্যায় মোহনপুর থানা পুলিশের সহযোগিতায় সহকারি কমিশনার ভূমি প্রিয়াংকা দাশ ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে আলমগীর মেম্বারকে পুকুর খনন ও রাস্তায় মাটি বহনের অপরাধে নগদ ১০ হাজার টাকা ও মৌগাছি গ্রামের মৃত আবেদ আলীর ছেলে আলালকে একই অপরাধে ১০ হাজার এবং পোল্লাকুড়ি গ্রামের ভেকু দালাল মেরাজুলকে খানপুর বাগবাজারে পুকুর খনন ও রাস্তায় মাটি বহনের অপরাধে নগদ ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
এসময় সবাইকে ভবিষ্যতে পুকুর খনন, রাস্তায় মাটি বহন ও বিক্রয় করা যাবেনা বলে হুশিয়ারি করা হয়েছে এবং রাস্তায় পড়ে থাকা মাটি নিজ দ্বায়িত্বে পরিস্কার করার আদেশ করা হয়েছে।
এদিকে উপজেলা সদরে নিকটবর্তী সাবাই পরিজন পাড়া, খাঁড়ইল, পুকুর খনন অব্যহত রেখেছেন ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান, সইপাড়া গাঙ্গোপাড়া মামুন, মীরপুর আবুল হোসেন (যাত্রা)।
এবিষয়ে ইউপি সদস্য আলমগীর মেম্বার বলেন, খননকৃত পুকুরটি আমার নয়। আমার সহযোগিতায় এটি খনন করছেন জেলা যুবলীগনেতা আনোয়ার হোসেন চাচা। যত খুশি পারেন আমার বিরুদ্ধে লিখেন কিছুই করতে পারবেন না।
এবিষয়ে জেলা যুবলীগ নেতা আনোয়ার হোসেন সরাসরি স্থানীয় সাংবাদিক ও পুলিশের সামনে বলেন, আমার পৈতৃক সম্পতিতে আমি পুকুর খনন করছি তাতে প্রশাসন ও আপনাদের এত মাথা ব্যাথা কেন? এসময় তিনি উচ্চস্বরে কথা বলেন এবং রক্ত চক্ষু দেখান। অভিযোগকারীরা বলেন, এটি তার নিজস্ব সম্পত্তি নয় সরকারি ভিপি পুকুর।
মোহনপুর সহকারি কমিশনার ভূমি প্রিয়াংকা দাশ বলেন, মোহনপুর থানা পুলিশকে সাথে নিয়ে পুকুর খনন, মাটি বহন অপরাধে ৩টি স্থানে ৩ জনকে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।


প্রকাশিত: মার্চ ১৯, ২০২৩ | সময়: ৬:০৩ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ