সর্বশেষ সংবাদ :

জেলা আ’লীগের দুই অফিস নিয়ে বিভ্রান্তি

স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহীর এমপি ইঞ্জিনিয়ার এনামুলের কিনে দেওয়া জমিতে আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে এখন দৃশ্যমান রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের ভবন। রাজশাহী সিটিবাইপাশ সিলিন্দা এলাকায় এ ভবনের নির্মাণ কাজও প্রায় শেষ। কয়দিনের মধ্যেই সেখানে ভবনটি উদ্বোধনের কথা। তবে এ ভবনটি ফেলে এবার জেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় করার জন্য সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারা জেলা প্রশাসন থেকে দলের নামে একটি অর্পিত সম্পত্তি বরাদ্দ নিয়েছেন। নতুন ভবনে না গিয়ে দলীয় কার্যালয়ের জন্য সরকারি সম্পত্তি বরাদ্দ নেওয়ায় নানা প্রশ্ন উঠেছে। এ নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের বিভেদ তৈরির আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলা আওয়ামী লীগের ভবন করার জন্য ২০১৭ সালে শহরের সিটিহাট এলাকায় ১০ কাঠা জমি কিনে দেন রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক। এই জমিটির বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় পাঁচ কোটি টাকা। এখন সেখানে প্রায় আড়াই কোটি টাকা খরচ করে সাড়ে চার হাজার স্কয়ার ফুটের একটি ভবনও করে দিচ্ছেন এমপি এনামুল হক।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন এমপি এনামুলের দেওয়া জায়গায় দলীয় কার্যালয় নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেছিলেন। সম্প্রতি তিনি নির্মাণ কাজের অগ্রগতিও পরিদর্শন করেন। তবে এরমধ্যেই জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দলীয় কার্যালয়ের জন্য আলাদা জায়গা চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন। আবেদনের ভিত্তিতে গত রবিবার শহরের রাণীবাজার এলাকার ৮ কাঠা অর্পিত সম্পত্তি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে জমিটি দখলে নিয়ে সেখানে ঘটা করে উদ্বোধনের পর জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় বলে সাইনবোর্ড টানানো হয়েছে। এমপি এনামুলের করে দেওয়া নির্মাণাধীন ভবনেও জেলা আওয়ামী লীগের সাইনবোর্ড রয়েছে।
সংুিশ্লষ্ট সূত্র জানায়, গত শুক্রবার বিকালে এখানে মিলাদ-মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এরপর থেকে এটিই জেলা আওয়ামী লীগের সাইনবোর্ড লাগানো হয়। লিজ নেওয়া জমিতে সুযোগ থাকলে তারা এখানে আধুনিক ভবন নির্মাণ করবেন।
আওয়ামী লীগকে জমি বরাদ্দ বিষয়ে রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শরীফুল হক বলেন, ‘রাজস্ব আয় বৃদ্ধির জন্য অর্পিত সম্পত্তি যে কোন ব্যক্তি, সংস্থা বা সংগঠনকে লিজ দেওয়া যায়। জেলা আওয়ামী লীগ অফিসের জন্য নগরীর রাণীবাজারের এই জায়গাটির জন্য আবেদন করেছিলো। তাঁরাই জমিটি লিজ পেয়েছে। এখন প্রতিবছর তাদের লিজের টাকা জমা দিয়ে নবায়ন করতে হবে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ৮ ডিসেম্বর রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সভপতি হন মেরাজ উদ্দিন মোল্লা। আর সাধারণ সম্পাদক হন আব্দুল ওয়াদুদ দারা। এই সম্মেলনের আট বছর আগে থেকে শহরের লক্ষ্মীপুরে জেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় ছিল। নতুন কমিটি জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় করে অলোকার মোড়ে একটি ভাড়া নেওয়া দোকানঘরে। এরমধ্যে সভাপতি মেরাজ উদ্দিন মোল্লা মারা যান। ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হন অনিল কুমার সরকার। তিনি বাগমারা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। তিনি দলীয় কার্যালয়ের নতুন জায়গা বরাদ্দের আবেদনে সই করেননি। তাকে ছাড়া সাধারণ সম্পাদক একাই আবেদন করেন।
রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এমপি এনামুল হক বলেন, দলকে ভালোবেসে ‘আমি দলের নামে জমি রেজিস্ট্রি দিয়ে ২০১৭ সালে জেলা আওয়ামী লীগের তখনকার কার্যকরী কমিটির মিটিংয়ে দলিল সাবমিট করেছি। তারা গ্রহণ করেছে। এখন তারা মনে করছে আসাদের সময় জমির রেজিস্ট্রি হয়েছে, এখন সেখানে পার্টি অফিস করবে না। এটা একটা পার্সেনাল জেলাসি থেকে করছে। তবে তিনি বলেন, সরকারি জায়গায় কোনভাবেই পার্টি অফিস করার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, ‘এতদিন কেউ করেনি, আমি করে দিয়েছি। আমি জমি দিয়েছি বলেই তো কেউ জেলাসি করে আরেকটা জায়গা লিজ নিয়েছে।
রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ‘এমপি এনামুল হক জেলা আওয়ামী লীগকে জায়গা দিয়েছেন। তিনি দলের সর্বোচ্চ পর্যায়ের অনুমতি নিয়ে সেখানে ভবনও করে দিচ্ছেন। এখন সেটাকে অবজ্ঞা করে নতুন জায়গায় কার্যালয় করাটা খারাপ। এর মাধ্যমে দলের মধ্যে বিভাজন তৈরি হবে। এ উদ্দেশ্যেই এটা করা হচ্ছে।
তবে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ দারা বলেন, কোনভাবেই দলীয় বিভেদ হওয়ার সুযোগ নেই। আওয়ামী লীগের নামে যে কেউ সম্পত্তি দান করে দিতেই পারেন। এখন আওয়ামী লীগ বসে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটাই সিদ্ধান্ত। যে জায়গাটি লিজ নিয়েছি, সেখানে জেলা আওয়ামী লীগের অফিস হবে। সিটিহাটের নির্মাণাধীণ ভবন কি হবে জানতে চাইলে দারা কোনো মন্তব্য করেন নি।


প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৩ | সময়: ৬:২০ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ