জেলার পর জাতীয় ভাবে ‘স্বপ্নজয়ী মা -২০২২’ নির্বাচিত হলেন মমতাজ বেগম

স্টাফ রিপোর্টার

এ বছর দেশের যে ১২ জন মা স্বপ্নজয়ী মা হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন তার মধ্যে চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার কার্পাসডাঙ্গার মমতাজ বেগম অন্যতম। ১২ মে ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য বিশেষ আয়োজনে মন্ত্রীর হাত থেকে গ্রহণ করেন বিশেষ সম্মাননা। তিনি চুয়াডাঙ্গার ৪ জন স্বপ্নজয়ী মায়ের মধ্যে একজন নির্বাচিত হয়ে গত ৮ মে সম্মাননা গ্রহণ করেন।

উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে স্বপ্নজয়ী মা’য়েদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক অধিদপ্তরের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী  ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, এমপি, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক অধিদপ্তরের সচিব ড. মো. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জনাব পারভিন আক্তার।

মমতাজ বেগম ৮ সন্তানের জননী। তার স্বামী আলতাফ হোসেন ছিলেন কেরু এ্যান্ড কোম্পানির ফুডশপ ইনচার্জ ছিলেন। ২০০২ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। তখনও ৮ সন্তানের মধ্যে কেউ পড়তেন বিশ্ববিদ্যালয়ে, কেউ উচ্চ, কেউ নিম্ন মাধ্যমিকে। ২০০৬ সালে হৃদরোগে মৃত্যুবরণ করেন আলতাফ হোসেন। এরপরও ছেলেদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার স্বপ্ন বাস্তবায়ন থেকে একটুও টলেননি যে মা তিনি মমতাজ বেগম।

 

সন্তানদের মধ্যে ছেলে আব্দুল আলীম বাবু অস্ট্রেলিয়া সরকারের বৃত্তিপ্রাপ্ত হয়ে এইচডি ফেলো সম্পন্ন করেন। বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মাকেটিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। আব্দুল হাকিম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি করেন। বর্তমানে তিনি জনতা ব্যাংক রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ে সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার (আইটি) কর্মরত।

রোখসানা খাতুন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি করেন। তিনি বর্তমানে রাজশাহী মহিলা পলিটেকনিকে চীফ ইনস্ট্রাক্টর হিসেবে কর্মরত। রোমনা বিশ্বাস এমএসসি করেন শের ই বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। বর্তমানে তিনি খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক। মোহসিনা বিশ্বাস চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ থেকেজাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এমএ করেছেন। তিনি পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কর্মকর্তা হিসেবে নিযুক্ত রয়েছেন।

 

হাসিনা খাতুন দর্শনা সরকারি কলেজ থেকে সমাজ বিজ্ঞান নিয়ে বিএ,বিএড সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে দামুড়হুদা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। হাবিবা খাতুন দর্শনা সরকারি কলেজ থেকে একই বিভাগে বিএ বিএড সম্পন্ন করেন। তিনি উপজেলার কুতুবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। আব্দুল কাদের চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিএবিএড করেছেন। তিনি কুতুবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অফিস সহকারী হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

 

রত্নগর্ভা মা মমতাজ বেগম জানান, সন্তানদেরকে শিক্ষা দেওয়া ছিলো সর্বোচ্চ আন্তরিক প্রচেষ্টা। যেকারণে সন্তানদের সুশিক্ষিত ও আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পেরেছি। সন্তানরা এখন সমাজে প্রতিষ্ঠিত ও মানুষের কল্যাণে নিবেদিত। আসলে এই ধরনের রাষ্ট্রীয় পুরস্কারে ভূষিত হবো কখনোই ভাবিনি। স্বামী মারা যাওয়ার পর আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব ঠিকমত পালনের চেষ্টা করেছি মাত্র। ফলাফল হিসেবে পেয়েছি সন্তানদের সফলতা। যার স্বীকৃতি হিসেবে সফল জননী সম্মাননা পেয়ে ভালো লাগছে। এদিকে জাতীয় পর্যায়ে মমতাজ বেগম দেশের সেরাদের একজন “স্বপ্নজয়ী মা” সন্মাননা পাওয়ায় কার্পাসডাঙ্গাবাসি গর্বিত। উল্লেখ্য তিনি চুয়াডাঙ্গা জেলা পর্যায়েও “স্বপ্নজয়ী মা” সম্মাননা লাভ করে গত ৮ মে সন্মাননা গ্রহন করেন।

 

জনতা ব্যাংক রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার (আইটি) আব্দুল হাকিম বলেন, আমাদের মায়ের জন্য আমরা গর্ববোধ করি সবসময়। বাবা মারা যাওয়ার আগে ও পরে যেকোন সময় আমাদের সব ভাইবোনকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। আমরা বিনিময়ে তাকে কিছুই দিতে পারেনি। তবে বর্তমান সরকার যেভাবে পুরস্কৃত করেছেন তাঁর জন্য আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমাদের মায়ের জন্য দোয়া চাচ্ছি সকলের কাছে।

সানশাইন / শামি


প্রকাশিত: মে ১২, ২০২২ | সময়: ১০:১৭ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine

আরও খবর