সর্বশেষ সংবাদ :

বাগমারায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বেঁচে থাকতে মুক্তিযুদ্ধকে বিকৃত করতে দেব না

স্টাফ রিপোর্টার : মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম. মোজ্জাম্মেল হক, এমপি বলেছেন, আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছি, তারা বেঁচে থাকতে মুক্তিযুদ্ধকে বিকৃত করতে দেব না; মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত হতে দেব না। যারা পাকিস্তানকে ভালো বলে, তারা পাকিস্তানে যেয়ে থাকুক; এ দেশে থাকতে হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিশ্বাস করতে হবে।
শনিবার দুপুরে রাজশাহীর বাগমারার ভবানীগঞ্জ নিউ মার্কেট অডিটরিয়ামে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
আ. ক. ম. মোজ্জাম্মেল হক বলেন, আমাদের বাপ-দাদারা মুসলমানদের জন্য একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করেছিলেন। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু সেই আন্দোলন করেছেন। তারপর পাকিস্তানের সৃষ্টি হয়। পাকিস্তান রাষ্ট্রে বাঙালিদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়েছিল। পাকিস্তানের মোট আয়ের ৮০ ভাগ আমরা উপার্জন করলেও আমাদের জন্য ব্যয় করা হতো ১৮ ভাগ আর বাকি ৮২ ভাগ ব্যয় করা হতো পশ্চিম পাকিস্তানিদের জন্য। আমরা জনসংখ্যায় ৫৬ ভাগ ছিলাম; কিন্তু সেনাবাহিনীতে আমাদের অংশগ্রহণ ছিল ৭ ভাগ, ৯৩ ভাগ-ই ছিল পশ্চিম পাকিস্তানিÑ এটা ছিল তাদের ইনসাফ।
তিনি বলেন, এ সমস্ত বৈষম্যের কারণে বঙ্গবন্ধু আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। তিনি ১৯৬৬ সালে বাঙালির বাঁচার দাবি হিসেবে মুক্তির সনদ ‘ছয় দফা’ ঘোষণা করেন। এর পক্ষে জনগণ আন্দোলন গড়ে তোলে। কিন্তু আইয়ুব খান অস্ত্র দিয়ে সেই আন্দোলন মোকাবিলা করে। আন্দোলন প্রতিহত করতে ব্যর্থ হয়ে আইয়ুব খান আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে। জনগণ এর বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করে আনে। গণঅভ্যুত্থান হয়; পেছনের দরজা দিয়ে আইয়ুব খানের পতন হয়। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ১৬৭টি আসনে জয়ী হয়ে একক সংখ্যাগষ্ঠিতা অর্জন করে; কিন্তু পাকিস্তানিরা ক্ষমতা দেয় না। সংসদ বসার কথা ছিল, কিন্তু বসে না। কারণÑ তারা বাঙালিদের হাতে ক্ষমতা দেবে না। সরকার আরও নিপীড়নমূলক আচরণ করতে থাকে। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু যার যা আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলার নির্দেশ দেন। ২৬ মার্চ তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। বাংলার মাটিতে একজন পাকিস্তানি সৈন্য থাকা পর্যন্ত তিনি আমাদেরকে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে বলেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান বাহিনী আমাদের সামনে হাটু গেড়ে আত্মসমপর্ণ করেÑ এই ইতিহাস নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে, বিকৃত হতে দেয়া যাবে না।
সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু সরকারের সাড়ে ৩ বছর সহ মোট সাড়ে ২২ বছর আমরা ক্ষমতায় আছি। এই সময়ে কী কী হয়েছে আমরা এর পাই-টু-পাই হিসাব দেব। কোন জেলায়, কোন উপজেলায়, ইউনিয়নে, ওয়ার্ডে কী কী করেছি সবকিছুর হিসাব দেব। অন্যরা ২৯ বছর ক্ষমতায় থেকে কী করেছে ওদেরকে তার হিসাব দিতে হবে। যে কেউ হিসাব করে দেখলে বুঝতে পারবে শেখ হাসিনার সময় সে কী পেয়েছে, আর আগে কী পেয়েছে।
বিএনপির সমালোচনা করে মন্ত্রী বলেন, যারা এতিমের টাকার লোভ সামলাতে পারে না, তারা কীভাবে ১৮ কোটি মানুষের সম্পদের লোভ সামলাবে। তাদের কাছে ১৮ কোটি মানুষের সম্পদ নিরাপদ নয়। তিনি বলেন, ভুল ত্রুটি সবারই হয় তাই বলে ২টি আর ৫০টি এক নয়। কারা ভালো দেশ চালিয়েছে আর কারা খারাপ চালিয়েছে সেটা সবাইকে বিচার করে দেখতে হবে।
মুক্তিযোদ্ধারা এক সময় মুক্তিযোদ্ধা বলে পরিচয় দিতে পারত না উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর কোথাও কোনো অফিস-আদালতে বলা যেত নাÑ আমি মুক্তিযোদ্ধা। আর এখন বুক ফুলিয়ে বলা যায় আমি একজন মুক্তিযোদ্ধাÑ শেখ হাসিনা এটা করেছেন। শেখ হাসিনা থাকতে মুক্তিযোদ্ধারা কষ্টে থাকবে না। শেখ হাসিনা বলেছেনÑ আমি শেখ মুজিবের মেয়ে, আমি থাকতে মুক্তিযোদ্ধারা কষ্টে থাকবে না। তিনি যেটা বলেন, সেটা করেন।
অনুষ্ঠানে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ এফ এম সুফিয়ানের সভাপতিত্বে সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল জব্বার বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য মনসুর আলী, বাঘা উপজেলা চেয়ারম্যান অনিল কুমার সরকার, বীর মুক্তিযোদ্ধারা সহ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন অঙ্গ-সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে মন্ত্রী বাগমারায় উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি কমপ্লেক্স ভবন উদ্বোধন করেন। এরও আগে দুপুর বারো’টায় মন্ত্রী বাগমারায় বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর কমপ্লেক্স পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে মন্ত্রী উপজেলা আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বক্তৃতা করেন। ওই সভায় গ্রাম ও ওয়ার্ড পর্যাযের কমিটিকে মূল স্তম্ভ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, দলের তৃণমূল পর্যায়ের কমিটিগুলোকে মূল কাজটা করতে হয়। তাদেরকেই সবসময় মানুষের কাছে যেতে হয়। জনগণের কাছে যেয়ে ভোট চাইতে হয়। এজন্য তিনি গ্রাম, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়ের কমিটিকে আরও সুন্দরভাবে গঠন করার জন্য নেতা-কর্মীদের বিভিন্ন পরামর্শ দেন।


প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৩ | সময়: ৭:১৫ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ