সর্বশেষ সংবাদ :

হলকক্ষে ছাত্রলীগের শিক্ষার্থী নির্যাতন : রাবিতে মানববন্ধন, তদন্ত কমিটি

রাবি প্রতিনিধি : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) হলকক্ষে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কৃষ্ণ রায় নামের এক শিক্ষার্থীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন এবং ‘মেরে শিবির বলে চালিয়ে দেয়া’র হুমকির ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাডেমিক ভবনের সামনে আয়োজিত মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে এই প্রতিবাদ জানান গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
মানববন্ধনে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল-মামুন বলেন, ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডে হলগুলোতে শিক্ষার্থীদের বসবাসের উপযোগিতা হারাচ্ছে। নিয়মিত সব হলে নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কিছুই করতে পারছে না। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে থাকার পরিবেশ নাই। আমার ছাত্র কৃষ্ণকে শিবির সন্দেহে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে। যখন কৃষ্ণ বলেছে আমি হিন্দু। তখন তারা (ছাত্রলীগ) বলে, তাহলে তো তোকে মেরে ফেলা আরও সহজ তুই সংখ্যালঘু হওয়ায় কেউ আমাদের কিছু করতে পারবে না। ছাত্রলীগ এখন গুন্ডাতন্ত্রে বিশ্বাসী। তারা গুণ্ডামির মাধ্যমে নিজেদের টিকিয়ে রাখতে চায়। তাদের এমন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড না থামলে আমরা আরও কঠোর অবস্থানে যাবো বলে জানান।
বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মামুন হায়দার বলেন, ক্যাম্পাস হচ্ছে শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ জায়গা কিন্তু আমার শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে সবথেকে অনিরাপদ। আমরা কি এমন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম? আমার মেয়েরাও এ নির্যাতন থেকে বের হতে পারছে না। মেয়েদেরকেও নির্যাতন করে বিবস্ত্র অবস্থায় ভিডিও করা হচ্ছে। আমরা ওপরে ট্রেন চালাচ্ছি, কর্ণফুলীর নিচ দিয়ে ট্রেন চালাচ্ছি। পুরো বাংলাদেশকেই উন্নয়ন করে ফেলছি কিন্তু আমার ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা ঘরে থাকতে পারছে না। এ কেমন উন্নয়ন?
তিনি আরও বলেন, আমরা বিশ্ব র‌্যাংকিং নিয়ে চিন্তা করছি কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা দিতে পারছি না। একটা সিটের মূল্য যদি দশ হাজার টাকা। তাহলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা কিভাবে হলে উঠতে পারবে? ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী কৃষ্ণ যার বাবা নাই। ঘটনার পর তার ভয়ংকর অবস্থা। এখনও সে ঠিকমতো দাঁড়াতে পারেনা। তাকে রুমে নিয়ে গিয়ে রাতের বেলায় যা করা হয়েছে তা ভয়ংকর। কৃষ্ণ হয়তো মারা যায়নি। কিন্তু আসলে সে মারা গেছে। আমরা সংকিত আগামী ৫ বছরে কৃষ্ণ এ ট্রোমা ভাঙবে কিভাবে আমরা জানি না। এর দায়ভার কে নিবে? আপনারা সোচ্চার হন। প্রশাসনের বিষয়ে আমার আস্থা নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৩ টি এমন ঘটনার তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও মাত্র ৬ টির প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়। তাদেরও কোন শাস্তি দেয়া হয় নি। আর হবেও না কোনোদিনও।
মানববন্ধনে একাত্মতা পোষণ করে লোক প্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সপ্নীল রহমান বলেন, এমন ঘটনা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে সুষ্ঠুভাবে চলতে না দেওয়ার একটি অশুভ চক্রের কাজ। এমন ন্যাক্কারজনক কর্মকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দিন। তাহলে দেখা যাবে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এমন ঘটনা আর ঘটবে না। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেন আর কোনো কৃষ্ণ রায় নির্যাতন না হয় প্রশাসনের কাছে সেই দাবি জানান তিনি।
মানবন্ধনে উপস্থিত ছিলেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আ.আল মামুন, অধ্যাপক মোজাম্মেল হোসাইন বকুল, সহযোগী অধ্যাপক এবিএম সাইফুল ইসলাম, সহযোগী অধ্যাপক কাজী মামুন হায়দার, সহকারী অধ্যাপক আব্দুল্লাহ বাকী প্রমূখ সহ শতাধিক শিক্ষার্থী। পরে তারা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে প্রশাসন ভবনে অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খানের সঙ্গে অবস্থানকর্মসূচীতে যোগ দেয়।
এদিকে শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল কৃর্তপক্ষ।
এ বিষয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, বুধবার সন্ধ্যায় হলের আবাসিক শিক্ষক অনুপম হীরা মণ্ডলকে আহ্বায়ক ও তানজিল ভূঞা ও রায়হান গফুরকে সদস্য করে একটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত রোববার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী কৃষ্ণ রায়কে হলকক্ষে নির্যাতনের পাশাপাশি হত্যার হুমকি দেন হল শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। এ ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন, হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাঈম ইসলাম ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. সোলাইমান। নির্যাতন ও হুমকির ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও হলা প্রাধ্যক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন ভুক্তভোগী কৃষ্ণ রায়।


প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৩ | সময়: ৫:৫০ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ