সর্বশেষ সংবাদ :

অবিশ্বাস্য ইনিংস খেলেছে সোহান

স্পোর্টস ডেস্ক: বাংলাদেশের ক্রিকেটে খুব পরিচিত কোনো নাম নন হাবিবুর রহমান সোহান। ঢাকার প্রথম বিভাগ ক্রিকেটে খেলেন তিনি। গত বছর রাজশাহীতে স্থানীয় একটি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে ঝড়ো ব্যাটিংয়ে কিছুটা নজর কাড়তে পেরেছিলেন। এই তো। সেই সোহানকে এখন নিশ্চয়ই মনে রাখবেন অনেকেই! বিপিএলে শুক্রবার এমনই এক ম্যাচ জেতানো দুর্দান্ত ক্যামিও খেললেন যে, তার ব্যাটিংয়ে মুগ্ধ প্রতিপক্ষ অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজও।
প্রথম বিভাগে আগ্রাসী ব্যাটিং আর রাজশাহীর ওই টুর্নামেন্টের পারফরম্যান্সেই সোহানকে এবার দলে নেয় খুলনা টাইগার্স। স্বীকৃত ক্রিকেটে তার পদচারণা শুরু এই আসর দিয়েই। টুর্নামেন্টের শুরুর দিকে দুটি ম্যাচ সুযোগ হয় তার। তবে ভালো করতে পারেননি একটিতেও। অভিষেকে তিনে নেমে করেন ৬ বলে ৬। আরেক ম্যাচে ওপেন করে ১১ বলে ৪।
এরপর বাইরে বসেই কাটাতে হয় ম্যাচের পর ম্যাচ। বাজে পারফরম্যান্সে দল ছিটকে যায় শীর্ষ চারের লড়াই থেকে। অবশেষে আরেকটি সুযোগ পান তিনি শুক্রবার লিগ পর্বের শেষ ম্যাচে। এবার চ্যালেঞ্জটি ছিল আরও কঠিন। তবে তার মতো আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যানের জন্য নিজেকে চেনানোর মঞ্চ ছিল প্রস্তুতি। সুযোগটি তিনি লুফে নেন দুহাতে।
ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে ১৭০ রান তাড়ায় যখন ছয় নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে উইকেটে যান সোহান, খুলনার তখন প্রয়োজন ৩.১ ওভারে ৩৯ রান। ওই ওভারের শেষ বলে বাউন্ডারি মারেন মাহমুদুল হাসান জয়। তখনও পর্যন্ত খুলনার ইনিংস টেনে নিয়ে দলকে লড়াইয়ে রেখেছিলেন মূলত জয়ই। তার রান তখন ৩৭ বলে ৫৮। তবে বাকি গল্পের প্রায় সবটুকুতে আছেন কেবল সোহান। শেষের বন্ধুর পথ তার ব্যাটেই পার হয় খুলনা।
১৩ বলে যখন প্রয়োজন ৩০ রান, করিম জানাতের বলে বুদ্ধিদীপ্ত এক শটে বাউন্ডারি মারেন সোহান। পরের ওভারে তিনি চোখধাঁধানো দুটি শটে ছক্কা মারেন ইবাদত হোসেনের বলে। প্রথমটিতে লেংথ বলে টাইমিং আর কবজির জোরে উড়িয়ে দেন লং-অন দিয়ে, পরেরটিতে লো ফুল টসে ওয়াইড লং অন দিয়ে ভাসিয়ে দেন টাইমিং আর পেশির জোরে।
ওই ওভারে ১৭ রানের পর শেষ ওভারে খুলনার প্রয়োজন পড়ে ৯ রানে। বোলিংয়ে আসেন মিরাজ। তার প্রথম বলে সিঙ্গেল নেন জয়। পরেরটি উড়িয়ে মারেন সোহান, তবে টাইমিং হয়নি ঠিকঠাক। বল উঠে যায় আকাশে। কিন্তু ফিল্ডার সালমান হোসেন ব্যর্থ হন ক্যাচ নিতে, উল্টো তার হাতে লেগে বল গড়িয়ে যায় বাউন্ডারিতে। বলে বলে স্লগ করে বিশাল এক ছক্কায় ম্যাচ শেষ করে উল্লাসে ফেটে পড়েন সোহান।
৬ উইকেটের এই জয়ে পয়েন্ট তালিকার একদম তলানি থেকে দুই ধাপ ওপরে উঠে পঞ্চম স্থানে থেকে আসর শেষ করে খুলনা। ১৬ বলে ৪১ রানের ম্যাচ জেতানো জুটিতে জয়ের অবদান ৭ বলে ১০, সোহান করেন ৯ বলে অপরাজিত ৩০! বিপিএলের সব আসর মিলিয়ে ৩০ ছোঁয়া ইনিংসগুলোর মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ স্ট্রাইক রেটের ইনিংস এটি (৩৩৩.৩৩)।
সাকিব আল হাসানের জায়গায় এই ম্যাচে বরিশালের অধিনায়কত্ব করা মিরাজ ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে বললেন, সোহানের ক্যারিয়ার সামনে এগিয়ে নেবে এই ইনিংস। “অসাধারণ ব্যাটিং করেছে (সোহান)। বিশেষ করে, এরকম চাপের পরিস্থিতিতে ব্যাট করেছে, এরকম উত্তেজনার ম্যাচ খেলেছে, অবশ্যই অনেক ভালো ব্যাটিং করেছে।” “দুজনকেই কৃতিত্ব দিতে হয় আসলে। জয়ও শুরু থেকে খুব ভালো ব্যাট করেছে। আর সোহান যে ব্যাটিং করেছে, অবিশ্বাস্য একটি ইনিংস খেলেছে। ওর জন্য, ওর ক্যারিয়ারের জন্য অনেক ভালো হবে।”
অবিশ্বাস্য ইনিংস


প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৩ | সময়: ৬:৩৪ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ