জৌলুস হারাচ্ছে বাঘা জাদুঘর

নুরুজ্জামান,বাঘা :

মুসলিম স্থাপত্যের নিদর্শন সংরক্ষন করার লক্ষর‌্য জাতীয় প্রত্নতত্ব বিভাগের উদ্যোগে রাজশাহীর বাঘায় ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় একটি আঞ্চলিক জাদুঘর । যা দেখে উজ্জিবিত হবে আজকের প্রজন্ম। কিন্তু বাস্তবে সেটি হচেছ না। এখানে জাদুঘর উদ্বোধন করার সময় যে পরিমান তৈজসপত্র সংরক্ষন করা হয়, আজ অবদি সে গুলোই রয়ে গেছে। নতুনত্য কিছু যোগ না হওয়ার   ফলে জৌলুস হারাচ্ছে বাঘা জাদুঘর।

বাঘা জাদুঘরের ভিতরের দৃশ্য –  প্রতিনিধি

 

 

এলাকার সুধীজনরা বলেন, বাঘা একটি প্রাচীন জায়গা। যখন ইউরোপে বাতি জ্বলেনী তখন বাঘায় বাতি জ্বলেছে। বাঘা হচ্ছে একটি বাতিঘর। আজ থেকে সাত’শ বছর পূর্বে এখানে পোড়ামাটির ব্যবহার হয়েছে। শুধু তাই নয়, এখানে রয়েছে সুলতানি আমলের কারুকাজ খচিত ঐতিহ্যবাহী বাঘা শাহী মসজিদ, বিশাল আকৃতির দিঘী এবং হযরত শাহদৌলার মাজার সহ একাধিক ওলি আওলিয়াদের মাজার ও কারুকাজ খচিত নারীদের জন্য পৃথক মসজিদ।

 

 

 

অনুসন্ধ্যানে জানা যায়, সুলতানী আমলে বাঘায় একটি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। তখন এখানে প্রায় দেড় কিলো স্কয়ার এলাকা নিয়ে নগর সভ্যতা গড়ে উঠে। এর নিদর্শন এখনো রয়েছে । বাঘা মাজার থেকে এ সীমানার মধ্যে যে কোন এলাকায় দুই থেকে পাঁচ ফিট মাটি খনন করলেই বেরিয়ে আসে প্রাচীন আমলের ইট এবং পৌড়া মাটির বিভিন্ন তৈজসপত্র। এ সমস্ত ঐতিহাসিক সম্পদ রক্ষা ও প্রদর্শনের জন্য বাঘায় তৈরী করা হয় একটি আঞ্চলিক জাদুঘর। এটি বাঘা মাজারের পেছনে অবস্থিত । এই মুহুর্তে জাদুঘরের সামনে কিছুটা রাস্তা পাকা হলেও মাজারের মুল গেট থেকে সেখানে পৌছার জন্য সরাসরি কোন রাস্তা নির্মান করা হয়নি। ফলে মাজারে ঘুরতে আসা অনেকেই জানেন না এখানে একটি জাদুঘর রয়েছে !

 

 

জাদুঘরের সহকারী কাস্টডিয়ান এনায়েত হোসেন জানান, এখানে ডিজিটাল ম্যাশিনে প্রিন্ট করা ২৩ টি মসজিদের ছবি, প্রচীন আমলের কোরআন শরিফ, কিছু মাটির পাত্র, কারুকাজ খচিত পুরাতন ইট, টাইল্স, ব্রোঞ্চের তৈরী পাত্র ,পোড়া মাটির বল ও একটি পাথরের উপরে লেখা আরবি হরফ ছাড়া তেমন কিছু নেই। যে কারনে মানুষের উপস্থিতি দিন-দিন কমে আসছে।

 

 

 

এনায়েত হোসেন বলেন, এখানে শৈল্পিক কারুকাজ খচিত কোন উপকরণ নেই। বর্তমানে মুসলিম স্থাপত্যের নিদর্শন সংরক্ষন হিসাবে দেশে যে ১৫ টি জাদুঘর রয়েছে সেখানে লোহা,তামা ব্রঞ্চ ইত্যার্দি উপকারণ দ্বারা তৈরী জিনিষ পত্র এবং প্রাচীন রাজা-বাদশাদের ঢাল-তলোয়ার, আধুনিক বিদ্যুৎ বাতির পরিবর্তে হারিকেন,হ্যাচাক, পিতলের তৈরী কুপ, লোহার সিন্দুক এবং বেত সহ কাঠের তৈরী অনেক রকম সামগ্রী থাততে পারতো। যা দেখে উজ্জিবীত হতো আজকের প্রজন্ম। তিনি এই জাদুঘরে নতুন-নতুন উপকরণ তোলার জন্য সংশ্লিষ্ঠ দপ্তরে আবেদন করেছেন বলে জানান।

 

 

 

বাঘার বিশিষ্ট সমাজ সেবক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান খন্দকার মনোয়ারুল ইসলাম মামুন বলেন, আমি গত কয়েকদিন আগে একজন আত্নীয়কে দেখানোর জন্য ১৫ টাকা টিকিট করে জাদুঘরে প্রবেশ করে ছিলাম। আমার খুব একটা ভালো লাগেনি। কারণ গত ৮ বছর পূর্বে যা দেখে ছিলাম, এখনও সে গুলোই রয়ে গেছে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, এখানে ঐহিহ্যবাহী বিভিন্ন মসজিদের ছবি সংরক্ষন এর পাশা-পাশি পরিবিবির সমাধিস্থলের ছবি রয়েছে। তাহলে জাতির পিতার সমাধিস্থলের  ছবি নেই কেন ? তাঁর মতে, দেশ এখন মধ্যম আয় থেকে উন্নত আয়ের দিকে আগ্রসর হচ্ছে। গ্রামের অনেকেই ছেলে-মেয়েরা মেট্রোরেল কিংবা পদ্মাসেতু দেখেনি। চাইলে সেসব ছবিওতো রাখা যেতে পারে।

 

 

সার্বিক বিষয়ে স্থানীয় সাংসদ ও বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আলহাজ শাহরিয়ার আলম বলেন, বাঘার ইতিহাস অন্যান্য সকল স্থানের উর্ধে। আমার প্রচেষ্টা ছিল এখানে মুসলিম স্থাপনা দিয়ে একটি জাদুঘর করবো। সেটি সার্থক হয়েছে। জাদুঘর এমন একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যেখানে গবেষকরা আসেন। আমি এই জাদুঘরটি উদ্বোধনের সময় স্থানীয় লোকজনের কাছে দাবি রেখে ছিলাম, মুসলিম নির্দশন যদি কারো কাছে থাকে তবে তা জাদুঘরে জমা দেয়ার জন্য । তবে এটি খুব বেশি ফলপ্রসু হয়নি। আমি অচিরে প্রত্নতত্ব বিভাগের সাথে কথা বলে উপকরণ বাড়ানোর চেষ্টা করবো।

সানশাইন / শামি


প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩১, ২০২৩ | সময়: ৮:৫২ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine