শুধুমাত্র জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা এ যুগের জন্য অচলঃ শিক্ষামন্ত্রী

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিঃ

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, ‘শুধুমাত্র জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা এ যুগের জন্য অচল। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে যে শিক্ষার্থী তৈরি হবে সেই শিক্ষার্থী যেন এই যুগে চলতে পারে, ভবিষ্যতে চলতে পারে এবং সমস্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারে। আর সেটি করতে হলে তাকে শুধু জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষায় শিক্ষিত হলে চলবে না। জ্ঞানের সঙ্গে দক্ষতাও অর্জন করতে হবে। তাকে মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষ হতে হবে। তার সৃজনশীলতা থাকতে হবে। যোগাযোগের দক্ষতা, সুক্ষ্ম চিন্তার দক্ষতা, সমস্যা নিরূপন করার দক্ষতা, একসঙ্গে কাজ করার দক্ষতা অর্জন না করলে আমাদের শিক্ষার্থী এই বিশ্বে অচল প্রমাণিত হবে। আর এই অচল নাগরিক দিয়ে আমাদের সোনার বাংলা হবে না।’

 

 

সোমবার দুপুরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে আয়োজিত স্বর্ণপদক প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও অনুষদের ১০৩ জন শিক্ষার্থীদের তাদের কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের জন্য স্বর্ণপদক দেওয়া হয়। যাদের মধ্যে ‘বঙ্গবন্ধু স্বর্ণপদক, অগ্রণী ব্যাংক’ পেয়েছে ৯৬ জন, ‘ড. মমতাজ উদ্দিন আহমদ স্বর্ণপদক’ পেয়েছে ৫ জন ও ‘ডা. এ. কে খান স্বর্ণপদক’ পেয়েছে ২ জন।

 

 

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি আরও বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী যে স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণের কথা বলেছেন সেটির জন্য স্মার্ট নাগরিক হতে হবে। স্মার্ট নাগরিক হওয়ার জন্য প্রয়োজন স্মার্ট শিক্ষা ব্যবস্থা। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। তাই প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি একাডেমিক মাস্টারপ্ল্যান থাকতে হবে। যেটি বিশ্বের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কয়েক বছর পর পর পরিবর্তন হবে।’ শিক্ষামন্ত্রী বলেন, একজন শিক্ষার্থী কেনো এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে? এখানে কি কি শিখতে পারবে সেটির একটা প্ল্যান থাকতে হবে। আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে ধন্যবাদ জানাই। কেননা যে দু’তিনটা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারপ্ল্যান করেছে তারমধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে।

 

পাঠ্য বইয়ের ভুল সংক্রান্ত বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমাদের বইয়ে নেই কিন্তু এই বক্তরা বলেই চলেছেন। বরং আমার বইয়ে ঠিক উল্টো আছে। ডারউইন নিজেও বলেননি বানর থেকে মানুষ হয়েছে আর আমাদের বইও তা বলে না। আমাদের বই বরং উল্টোটা বলে। বইয়ের একাধিক জায়গায় আছে বানর বা শিম্পাঞ্জি মানুষের পূর্বপুরুষ নয়। কিন্তু ব্যাপক মিথ্যাচার চলছে যে বানর থেকে মানুষ হয়েছে। তারা অযৌক্তিক, মিথ্যা ও অসত্য তথ্য দিয়ে সারাদেশ ভাসিয়ে দিচ্ছেন।

 

তিনি আরো বলেন, ‘এবছর বিভিন্ন সংকট পেরিয়ে আমরা ষষ্ঠ এবং সপ্তম শ্রেণিতে ২৬টি নতুন বই প্রনয়ণ করেছি। এই নতুন বইয়ে কিছুটা ভুল ধরা পড়ছে সেগুলো আমরা সাথে সাথেই সংশোধন করেছি। এজন্য আমরা দুইটি কমিটি গঠন করেছি। একটি কমিটি করা হয়েছে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে, যারা কাজ করবেন ভুল সংশোধন নিয়ে। অন্য কমিটি কাজ করবে এসব ভুলের পেছনে আমাদের ভেতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে করেছেন কিনা তা অনুসন্ধান করবে। এতে যদি কারো সংশ্লিষ্টতা থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আমরা আইননানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ এছাড়া দেশের যে কেউ পাঠ্য বইয়ের ব্যাপারে অভিযোগ ও পরামর্শ দিতে পারবে।’ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার আওতায় আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমান বিশ্বে একটি পরীক্ষা দিয়েই শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারছেন। আমাদের দেশেও শিক্ষার্থীদের ব্যয় সাশ্রয় করার জন্য, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের হয়রানি বন্ধ করতে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা চালু করেছি। কিন্তু এখন শুধু ৫ টি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া বাকি সবাই গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নিচ্ছেন। আশা করছি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ও আগামীতে গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেবে, পেছনে পড়ে থাকবে না।

 

 

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম ও অধ্যাপক হুমায়ুন কবীর, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক অবায়দুর রহমান প্রামানিক এবং সম্মানিত অতিথি হিসেবে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোরশেদুল কবীর উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বিভিন্ন বিভাগের সভাপতি, জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকসহ কৃতী শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা উপস্থিত ছিলেন।

 

 

 

 

সানশাইন/টিএ


প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩০, ২০২৩ | সময়: ১০:০৩ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine

আরও খবর