শেষ বলের রোমাঞ্চে খুলনাকে হারাল কুমিল্লা

স্পোর্টস ডেস্ক: শেষ বলের আগে কেটে গেল যেন অন্ততকাল! পিচের মাঝখানে দাঁড়িয়ে দুই ব্যাটসম্যানের কথাই শেষ হয় না। কুমিল্লার বোলার-ফিল্ডারদের পরিকল্পনাও চলতে থাকল লম্বা সময় ধরে। ওই একটি বলেই যে নির্ভর করছে ম্যাচের ভাগ্য! জয়ের জন্য খুলনার প্রয়োজন ৬ রান। কিন্তু পারলেন না তাদের অধিনায়ক ইয়াসির আলি। ঠাণ্ডা মাথায় শেষ বলটি করে সতীর্থদের নিয়ে উল্লাসে মেতে উঠলেন মোসাদ্দেক হোসেন।
বিপিএলের উত্তেজনাপূর্ণ লড়াইয়ে শেষ বলের সমাপ্তিতে খুলনা টাইগার্সকে ৪ রানে হারাল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শনিবার ২০ ওভারে কুমিল্লা তোলে ১৬৫ রান। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ক্রিজে কাটিয়ে ৪৭ বলে ৫৪ রানে অপরাজিত থাকেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। আরেক ওপেনার লিটন দাস ৫০ রানে ফেরেন ৪২ বল খেলে।
রান তাড়ায় নানা বাঁক পেরিয়ে শেষ ওভারে খুলনার প্রয়োজন পড়ে ১৭ রানের। মোসাদ্দেকের করা সেই ওভারের প্রথম বলে রান নিতে পারেননি ওয়াহাব রিয়াজ, পরের বলে নেন এক রান। পরের দুই বল ফুল টস পেয়ে দুটি চার মারেন ইয়াসির। পঞ্চম বলে তিনি নেন দুই রান। শেষ বলের সমীকরণ দাঁড়ায় ৬ রানে।
অনেকটা সময় অপেক্ষার পর সেই বল। রাউন্ড দা উইকেটে মোসাদ্দেক বল করেন অফ স্টাম্পের বাইরে প্রায় ইয়র্কার লেংথে ফুল টস। ইয়াসির নিতে পারেন স্রেফ ১ রান। কুমিল্লা এ দিন আগে ব্যাটিংয়ে নামে টস হেরে। লিটন ও রিজওয়ানের উদ্বোধনী জুটিই কাটিয়ে দেয় প্রায় ১০ ওভার। তবে রান খুব একটা দ্রুততায় ওঠেনি। ম্যাচের শুরুর ভাগে উইকেট ছিল খানিকটা মন্থর। বল থমকে আসে উইকেটে।
লিটন প্রথম ৫ ওভারে ৪টি বাউন্ডারি মারলেও ফাঁকে ডট বল খেলেন অনেক। রিজওয়ান বরাবরের মতোই সময় নিয়ে খেলতে থাকেন। ৮ ওভার শেষে দলের রান দাঁড়ায় ৪৪। লিটনের রান তখন ৩৪ বলে ৩১। নবম ওভারে তরুণ পেসার নাহিদ রানার বলে তিনটি বাউন্ডারি মেরে গতি বদলের ইঙ্গিত দেন লিটন। পরের ওভারে নাহিদুল ইসলামের অফ স্পিনে রিভার্স সুইপে বাউন্ডারি মেরে তিনি পা রাখেন এবারের আসরের দ্বিতীয় ফিফটিতে। তবে পরের বলেই আউট হয়ে যান উড়িয়ে মেরে।
জনসন চার্লস তিনে নেমে পেশির জোর আর টাইমিং মিলিয়ে বড় কিছু শট খেলে গতি বাড়ান রানের। তার ২২ বলে ৩৯ রানের ইনিংসে ছক্কাই ৫টি! প্রথম ছক্কাটি মারেন তিনি ওয়াহাব রিয়াজকে, নাহিদ রানাকে মারেন তিনটি, আরেকটি নাহিদুলকে। পরে ওয়াহাবের বলেই বিদায় নেন পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে। রিজওয়ান শেষ দিকেও তেমন ঝড় তুলতে পারেননি। আগের ম্যাচগুলোয় আগ্রাসী ব্যাটিং করা খুশদিল শাহ ১১ বল খেলে অপরাজিত থাকেন ১৩ রানে।
রান তাড়ায় খুলনা তৃতীয় ওভারে হারায় তামিম ইকবালকে। এবারের আসরে ছন্দে না থাকা অভিজ্ঞ ওপেনার ১১ রানে এলবিডব্লিউ হন নাসিম শাহর ফুল টসে। টুর্নামেন্টে প্রথম খেলতে নেমে অ্যান্ড্রু বালবার্নি জীবন পান পঞ্চম ওভারে। চোট কাটিয়ে ফেরা মুস্তাফিজুর রহমান ক্যাচ ছেড়ে দেন নিজের বলে।
প্রথম ৫ ওভারে খুলনার রান ছিল স্রেফ ২৭। জীবন পাওয়ার পরের ওভারে মুকিদুল ইসলামকে এক ছক্কা ও দুটি চার মারেন বালবার্নি। দারুণ কয়েকটি শটে যখন তাকে মনে হচ্ছিল বড় কিছুর জন্য তৈরি, তখনই রান আউট হয়ে যান রিজওয়ানের দারুণ ফিল্ডিংয়ে (৩১ বলে ৩৮)। তিনে নামা শেই হোপ তখনও থিতু হওয়ার চেষ্টা করছেন। মাহমুদুল হাসান জয় চারে নেমে একটু দম দেন রানের গতিতে। মুকিদুলের এক ওভারে এক ছক্কা ও দুটি চার মারেন তিনি। পরে ছক্কায় ওড়ান মোসাদ্দেককেও। পরের বলেই আরেকটি ছক্কার চেষ্টায় তার ইনিংস থামে ১৩ বলে ২৬ রানে।
আজম খানের ঝড় তোলার মঞ্চ ছিল প্রস্তুত। কিন্তু তিনি ফেরেন ১ রানেই। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে নেমে ১০ বলে স্রেফ ৮ করে ফেরেন মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন। খুলনার সমীকরণ ক্রমেই হতে থাকে কঠিন। নাসিমের বলে চোখ ধাঁধানো এক শটে ইয়াসিরের ছক্কায় আবার প্রাণ ফেরে ম্যাচে। শুরুতে অনেকটা সময় নিলেও পরে শেই হোপ কয়েকটি শট খেলে চেষ্টা করেন পুষিয়ে দিতে। কিন্তু কাজ শেষ করতে পারেননি তিনি। নাসিম শাহর দারুণ ইয়র্কারে বোল্ড তিনি ৩২ বলে ৩৩ করে।
ইয়াসির তবু চেষ্টা চালিয়ে যান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পেরে ওঠেননি। ১৯ বলে ৩০ রানের ইনিংস খেলেও মাঠ ছাড়েন তিনি আরও একটি হারের হতাশায়। সাত ম্যাচে খুলনার এটি পঞ্চম পরাজয়, আট ম্যাচে কুমিল্লার পঞ্চম জয়।


প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৯, ২০২৩ | সময়: ৬:৫৭ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ