সর্বশেষ সংবাদ :

সিলেটের উৎসবের আবহ থমকে গেল পরাজয়ের বিষাদে

স্পোর্টস ডেস্ক: ম্যাচ শুরুর অনেক আগে থেকেই মাঠের সামনে লোকের ভীড় প্রচণ্ড। সেই জনস্রোত আস্তে আস্তে বয়ে এলো মাঠের ভেতরে। দর্শকে ঠাসা মাঠে গ্যালারির রঙও বদলে গেল। হাজার হাজার দর্শকের গায়ে যে সিলেট স্ট্রাইকার্সের জার্সি! বিপিএলে এমন কিছু আগে দেখা যায়নি কখনও কোনো মাঠেই। হাতে হাতে পতাকা, প্ল্যাকার্ড, কণ্ঠে চিৎকার আর স্লোগান। কিন্তু খেলা শুরু হওয়ার পর আস্তে আস্তে ভাটা পড়ে গেল সেই আবহে। সিলেটের ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়ার মিছিল যে শুরু হয়ে গেল!
১২ রানে ৫ উইকেট, ১৮ রানে ৭ উইকেটৃনিজেদের দলকে সমর্থন দিতে আসা দর্শকেরা তখন স্তব্ধ। বিপিএলের সব আসর মিলিয়ে সর্বনিম্ন দলীয় রানে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কা প্রবল। শেষ পর্যন্ত দুই পেসার তানজিম আহমেদ সাকিব ও মাশরাফি বিন মুর্তজার লড়াইয়ে ৯২ রান পর্যন্ত যেতে পারে তারা। তাতে বিব্রতকর রেকর্ড থেকে রক্ষা পাওয়া গেল। তবে এই রানে তো ম্যাচ জেতা কঠিন। শেষ পর্যন্ত লড়াইও খুব একটা হলো না। রংপুর রাইডার্স ৬ উইকেটে ম্যাচ জিতে গেল ২৬ বল বাকি রেখেই।
এবার টুর্নামেন্টের শুরু থেকে সিলেটের অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখে অনেক আশা নিয়ে মাঠে আশা দর্শকের অনেকে মাঠ ছাড়লেন হতাশা নিয়ে। সাত ম্যাচে রংপুরের চতুর্থ জয় এটি, অষ্টম ম্যাচে সিলেটের দ্বিতীয় পরাজয়। সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের উইকেট এ দিন ছিল একটু মন্থর। অসমান বাউন্সও ছিল খানিকটা। তবে এতটা ভয়াবহ ব্যাটিং বিপর্যয়ের মতো নয় অবশ্যই। নতুন বলে রংপুরের দারুণ বোলিং আর সিলেটের ব্যাটসম্যানদের খামখেয়ালিতেই এই দশা।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা সিলেট শুরু করেন নতুন উদ্বোধনী জুটিতে। নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গে নামেন টম মুরস। দ্বিতীয় ওভারে মুরসকে দিয়েই শুরু উইকেট পতনের। আজমতউল্লাহ ওমারজাইয়ের বলে আলগা শটে বিদায় নেন এই ইংলিশ ব্যাটসম্যান। পরের ওভারে শেখ মেহেদি হাসানকে দারুণ এক শটে ছক্কা মেরে পরের বলে আরেকটি ছক্কার চেষ্টা করেন শান্ত। কিন্তু লং অফ সীমানায় দুর্দান্ত ক্যাচ নেন শোয়েব মালিক।
সিলেট বড় ধাক্কা খায় পরের ওভারে। ওমারজাইয়ের টানা দুই বলে আউট তৌহিদ হৃদয় ও মুশফিকুর রহিম। বাতাসে ভেতরে ঢোকা ফুল টসে এলবিডব্লিউ হন হৃদয়। তীক্ষ্নভাবে ভেতরে ঢোকা বলে উড়ে যায় মুশফিকের বেলস। পরের ওভারে মেহেদির বলে জাকিরকে দারুণ ক্ষীপ্রতায় স্টাম্পিং করেন নুরুল হাসান সোহান। এই তিন ব্যাটসম্যানই রানের দেখা পাননি। জাকির ও মুশফিক শূন্য রানে ফিরলেন টানা দুই ম্যাচে। মুশফিকের দুটিই ‘গোল্ডেন ডাক।’
১২ রানে তখন নেই সিলেটের ৫ উইকেট। বিপিএলের সব আসর মিলিয়ে কোনো দল এত কম রানে প্রথম ৫ উইকেট হারায়নি। একটু পর যখন দুই অলরাউন্ডার ইমাদ ওয়াসিম ও থিসারা পেরেরাও বিদায় নিলেন, সিলেটের সামনে তখন বিব্রতকর এক রেকর্ডের শঙ্কা। বিপিএলে সর্বনিম্ন রানের রেকর্ড ২০১৬ সালে খুলনা টাইটান্সের ৪৪। ১৮ রানে ৭ উইকেট হারানো দলের জন্য ৪৪ তখন অনেক দূর!
তবে তানজিম ও মাশরাফি উদ্ধার করেন দলকে। আগের ম্যাচে বিপিএল অভিষেকে ৩ উইকেট শিকারি তানজিম এ দিন নিজের ব্যাটিং প্রতিভার ঝলক দেখান। হারিস রউফের বলে দুটি চার মারেন তিনি সোজা ব্যাটে ও ফ্লিক করে। রউফের বাউন্সার তার হেলমেটে লাগলেও ভড়কে না গিয়ে পরের বলেও শর্ট বল পেয়ে চালিয়ে দেন, আবার চার পান ব্যাটের কানায় লেগে। পরে দারুণ একটি ছক্কা মারেন রবিউল হককে।
আরেক পাশে মাশরাফি সাবধানী শুরুর পর টানা দুটি ছক্কা মারেন মোহাম্মদ নাওয়াজকে। তানজিম পরে ছক্কা-চার মারেন ওমারজাইকেও। ৪৮ রানের জুটি ভাঙে মাশরাফির বিদায়ে। ২১ বলে ২১ রান করে ফেরেন সিলেট অধিনায়ক। তানজিম আরেকটু টেনে নেন দলকে। আগের ১৫ ম্যাচ মিলিয়ে তার রান ছিল মোট ২৩। এ দিন করেন ৩৬ বলে ৪১। দল কোনোরকমে যেতে পারে ৯২ রান পর্যন্ত।
এই পুঁজি নিয়ে ম্যাচ জমিয়ে তুলতে সিলেটের প্রয়োজন ছিল শুরুতে দ্রুত হয়েকটি উইকেট। হয় উল্টো। প্রথম ওভারে মোহাম্মদ আমিরকে দুটি চার মারেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ। পরে সাবধানী ব্যাটিংয়ে নাঈম ও রনি তালুকদার উদ্বোধনী জুটিতে কাটিয়ে দেন ৫ ওভার। নাঈমকে (২১ বলে ১৮) ফিরিয়ে ষষ্ঠ ওভারে জুটি ভাঙেন রেজাউর রহমান রাজা। পরে মাশরাফি টানা দুই বলে ফেরান মেহেদি ও শোয়েব মালিককে। ছক্কার চেষ্টায় সীমানায় ধরা পড়েন মেহেদি। পরের বলে মালিকের পুল শটে মুরস দুর্দান্ত ক্যাচ নেন শর্ট মিড উইকেটে।
কিন্তু লক্ষ্য ছোট থাকায় খুব একটা চাপে পড়তে হয়নি রংপুরকে। একপ্রান্ত থেকে দলকে ভরসা জুগিয়ে এগিয়ে নেন রনি। রাজার বলে দারুণ এক শটে ছক্কা মারেন তিনি, মাশরাফির শর্ট বল উড়িয়ে দেন পুল শটে ছক্কায়। আমির দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে ওমারজাইকে ফিরিয়ে দেন। তবে রনি ও মোহাম্মদ নাওয়াজ আর কোনো বিপদ হতে দেননি। দুটি করে চার-ছক্কায় ৩৮ বলে ৪১ রানে অপরাজিত থাকেন রনি, দুই ছক্কায় ১৩ বলে ১৮ নাওয়াজ। আজকেই আবার ঘরের দর্শকের সামনে মাঠে নামবে সিলেট। তাদের প্রতিপক্ষ চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স।


প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৮, ২০২৩ | সময়: ৬:৫৪ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ