সর্বশেষ সংবাদ :

পলাশবাড়ীর ফুলরাজ্য ‘ড্রিমার্স গার্ডেন’

স্টাফ রিপোর্টার : গ্রামের নাম পলাশবাড়ী। এই গ্রামের ১৩ বিঘা জমিজুড়ে গড়ে উঠেছে বিশাল ফুলের রাজ্য ড্রিমার্স গার্ডেন। সারা বছরই তাতে শোভা পায় হাজারও ফুল। গ্রাম বাংলার বিলুপ্তপ্রায় ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে ভিন্ন রূপ দেওয়া হয়েছে এই ১৩ বিঘার ফুল বাগানে।
রাজশাহীর অদূরে গোদাগাড়ী উপজেলার পলাশবাড়ী গ্রামের রাস্তার ধার ঘেঁষে গড়ে তোলা হয়েছে এই ড্রিমার্স গার্ডেন। আম বাগানের ফাঁকে ফাঁকে গড়ে তোলা হয়ে এই সুন্দর বাগান।
সরেজমিনে দেখা যায়, বছরজুড়ে আম ডালে মুকুল না থাকলেও ফুলে শোভিত থাকে পুরো বাগান। আম গাছের ফাঁকে ফাঁকে মাটির ওপর টবেও চাষ হচ্ছে নানা জাতের ফুল। আবার গাছের ডালে বা কোথাও শেড করে টবে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে ফুল গাছ। বাগানের বিভিন্ন জায়গায় বসার জন্য রাখা হয়েছে চেয়ার। সেখানে গল্প-আড্ডা জমে ওঠে। অনেকে ছবিও তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কয়েকটি গ্রামীণ স্থাপনাও চোখে পড়ার মতো সুন্দর। বাগানে থাকা পুকুর পাড়েও শোভা পাচ্ছে বাহারী ফুল গাছ। পুকুরের নৌকাতে সারে সারে সাজানো ফুল গাছে।
সুন্দর এই ড্রিমার্স গার্ডেনের স্বত্বাধিকারী এম আর হাসান জুবেরী। তিনি বলেন, ড্রিমার্স গার্ডেনকে ফ্লাওয়ার পার্ক হিসেবে মানুষের কাছে পরিচিত করাতে চাই। এর মূল প্রবেশদ্বারে রয়েঠে নান্দনিক তোড়ন। এই তোড়ন দিয়ে প্রবেশের সময় মানুষ যেন তার কষ্ট-দুঃখ-বেদনা ভুলে আনন্দ খুঁজে পায়। প্রাকৃতিক পরিবেশের এই বাগানে প্রাচীন এবং বর্তমান এই দুটো জিনিসের ফিউশন সৃষ্টি করা হয়েছে। এখানে আসলে দর্শনার্থীরা হারিয়ে যাবেন কল্পনার রাজ্যে।
এখানে প্রায় ৩২ জাতের লক্ষাধিক ফুল আছে উল্লেখ করে এই উদ্যোক্তা বলেন, এখানে আসা দর্শনার্থীদের জন্য প্রাকৃতিক বাগানের পাশাপাশি পুকুরে রঙিন মাছ রেখেছি। খাবার দিলে ঝাঁক মেলে আসে ওরা। এটিও যে কারো মনকে বিমোহিত করবে।
এই বাগান তৈরি প্রসঙ্গে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত এই গ্রুপ ক্যাপ্টেন বলেন, আমার বাবা ৩৭০ আমের গাছ লাগিয়ে একটি আম্রকানন করেছিলেন। আমি এই আম বাগানের ভেতরেই ফুলের বাগান করার চেষ্টা করেছি। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ বা অন্যান্য জায়গায় এরকম সুন্দর বাগান দেখেছি। মূলত সেই সে রকম বাগানের প্রতিফলন এখানে ঘটিয়েছি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে উন্নত মানের বীজ-চারা সার পেলে এই বাগানকে আরও সুন্দরভাবে গড়ে তুলবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন এই উদ্যোক্তা।
বাগানের পরিচর্যাকারী খালেদ হোসেন বলেন, বাগনে ফুল পরিচর্যা করি। তবে এখানে কোনো বিষ প্রয়োগ করা হয় না। প্রতিষেধক ব্যবহার করে ফুলকে পোকার হাত থেকে রক্ষা করি, পরিচর্চা করি সবসময়। এখানে কাজ করতে অনেক ভালো লাগে।
গার্ডেনের পরিচালক হাসান আল সাদী বলেন, বিভিন্ন দেশ থেকে ফুল এনে চ্যালেঞ্জ নিয়েই বাগানটা শুরু করা হয়। এখন বাগানটা অনেক সুন্দর। বর্তমানে বাগানের এন্ট্রি ফি ২০০ টাকা। শুরু থেকেই দর্শনার্থীদের ভালো সাড়া পাচ্ছি। দিনে গড়ে ৫০ জনের মতো দর্শনার্থী আসছেন।
বাগান ঘুরতে আসা আদি আহমেদ আরিফ বলেন, ‘বাগানটা চমৎকার। রাজশাহীতে এতো সুন্দর জায়গা এর আগে দেখি নাই। প্রকৃতিপ্রেমীরা এখানে আসলে খুব ভালো সময় কাটাতে পারবে। এখানে এসে অনেক ভালো লাগছে।’
বদরুদ্দোজা নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘বাগানটা ব্যতিক্রম। এখানে এমন অনেক ফুলের সমাবেশ ঘটানো হয়েছে যেগুলো অনেকেই চিনি না। এক সঙ্গে এতো জাতের ফুল যে কারো মন ভালো করবেই।’
ফারজানা সুলতানা এক দর্শনার্থী বলেন, যতই মন খারাপ থাকুক, এই বাগানে কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থাকলেই মন ভালো হয়ে যায়। বেশ কিছু বিদেশি ফুল রয়েছে এখানে, যেগুলা প্রথম দেখলাম। খুব ভালো লাগছে।
দেওপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন সোহেল বলেন, ‘বাগানটিতে গত বছর গিয়েছিলাম। অনেক রকম ফুল গাছ দিয়ে সাজিয়েছেন তারা। স্থানীয়দের বিনোদনের খোরাক মেটাতে এটি ভূমিকা রাখবে। এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।’
গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসার মরিয়ম আহমেদ বলেন, এটা অবশ্যই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। কিছুদিন আগে আমরা বাগানটি পরিদর্শন করেছি। কৃষি অফিস থেকে সর্বোচ্চ সাপোর্ট দেওয়ার চেষ্টা করছি। আমরা তাদের একটা পলি নেট হাউজ তৈরি করে দিব। ওই নেট হাউজের ভেতরে তখন তারা আরও আকর্ষণীয় ফুলের চাষ করতে পারবেন।


প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৫, ২০২৩ | সময়: ৬:১৭ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ