বাঘা-চারঘাট সীমান্ত অঞ্চলে বাড়ছে নারী মাদককারবারী

স্টাফ রিপোর্টার, বাঘা: রাজশাহীর সীমান্ত ঘেঁষা উপজেলা বাঘা ও চারঘাট এলাকায় নারী মাদক কারবারীর সংখ্যা বাড়ছে। এতে করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, পদ্মাপাড়ের চরাঞ্চল কেন্দ্রিক চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীরা অর্থের লোভ দেখিয়ে কতিপয় নারীদের দলে ভেড়াচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়াতে ঐ চক্রটি এ কৌশল অবলম্বন করছে। এ কারণে এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারী বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেন পুলিশ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীর শহরের পূর্ব দক্ষিণ এলাকা ঘেঁষে গড়ে উঠেছে বাঘা ও চারঘাট উপজেলা। এ দুই উপজেলার দক্ষিণ প্রান্ত দিয়ে বয়ে চলেছে পদ্মানদী ও সীমান্ত এলাকা। আর এই সীমান্ত এলাকা দিয়ে দুই উপজেলায় প্রবেশ করছে ফেন্সিডিল, ইয়াবা ও হেরোইনের বড়-বড় চালান। এগুলো দেখভালের জন্য দুই উপজেলায় স্থাপন করা হয়েছে পাঁচটি বর্ডার গার্ড (বিজিবি) ক্যাম্প। তারপরও নানা কৌশল অবলম্বন করে প্রাচার হয়ে আসছে মাদক।
বাঘা থানা পুলিশ সূত্র জানায়, এ উপজেলায় প্রায় তিন শতাধিক মাদক চোরাকারবারী রয়েছে। এরমধ্যে দুয়ের অধিক মাদক মামলা আছে এ রকম নামের তালিকা রয়েছে ১৭০ জনের নামে। গত একবছরে বিভিন্ন সময় অভিযানে ৮২ জনকে আটক করা হয়। যাদের অনেকেই জামিনে মুক্ত রয়েছে। তাদের দেওয়া তথ্য মতে, পূর্বের যে কোন সময়ের চেয়ে ইদানিং নারী মাদক ব্যবসায়ীর সংখ্যা বেড়েছে।
স্থানীয় লোকজন জানান, নারী মাদক ব্যবসায়ীদের সনাক্ত করতে তাদের শরীরে যে কেউ হাত দিতে পারে না। এ কারণে এ অঞ্চলের চিহ্নত মাদক ব্যবসায়ীরা নতুন কৌশল হিসাবে অর্থের লোভ দেখিয়ে নিজের স্ত্রী সহ প্রতিবেশী নারীদের মাদকের সাথে সম্পৃক্ত করছে। এদের মধ্যে সবশেষ গত সপ্তায় শিল্পী নামে এক নারী মাদক চোরাকারবারিকে ফেন্সিডিল ও গাঁজা সহ আটক করে বাঘা থানা পুলিশ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইদানিং নদী পথে ভারত থেকে ফেন্সিডিলগুলো দেশের অভ্যন্তরে আনার পর চরাঞ্চল অথবা সীমান্ত এলাকার কোন বাড়িতে নিরাপদ জায়গায় রাখা হয়। এরপর সেগুলোর অধিকাংশ নারীদের দিয়ে বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়।
দেখা যাচ্ছে যে নারী কোনদিন মাদকের সঙ্গে জড়িত ছিলনা, তাদেরকেও এ কাজে লাগানো হচ্ছে। আর অর্থের লোভে পড়ে অনেকেই জড়িয়ে পড়ছে মাদকের কারবারে। উপজেলার পদ্মার চরাঞ্চল ও সীমান্তবর্তী গ্রাম গুলোতে এ রকম প্রায় শতাধিক নারী এখন মাদক কারবারে জড়িয়ে পড়েছে বলে একাধিক সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এদিকে একই অবস্থা পাশ্ববর্তী চারঘাট উপজেলায়। সেখানে বিকল্প চারঘাট, ইউসুফপুর ও সাহাপুর নামে তিনটি বিজিবি ক্যাম্প থাকার পরও হরহামেশা দেশের অভ্যন্তরে মাদক প্রবেশ করছে বলে জানান চারঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রামের লোকজন।
বাঘা থানা পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তা (ইন্সপেক্টর) আব্দুল করিম জানান, আমরা গতমাসে একটি অভিযানে ৯ শ’ বোতল ফেন্সিডিল আটক করেছিলাম। এর কয়েকদিন পর একজন নারী মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া যায়। তথ্য নিয়ে কথা বলা সম্ভব নয়, তবে এটা বলা যায় নগদ অর্থের লোভে অনেক নারী এখন মাদক কারবারে জড়িয়ে পড়ছে। এর সংখ্যা উদ্বেগজনক বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
বাঘা থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাজ্জাদ হোসেন বলেন, কৌশলে মাদক কারবারীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ এড়াতে নারীদের ব্যবহার করছে। বিষয়টি আমাদের নজরে আসার পর আমরা গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করেছি। পাশা-পাশি এটি যেনো আর কোন ভাবেই বৃদ্ধি না পায় সেজন্য সামাজিক ভাবেও সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
তবে বাঘার মনিগ্রাম সীমান্ত এলাকার চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বলেন, মাদক ব্যবসায়ীরা নতুন কৌশল হিসাবে এখন নারীদের ব্যবহার করছে। এটি যেকোন উপায়ে বন্ধ করতে হবে। এরমধ্যে কয়েকজন চিহ্নত নারী মাদক কারবারি সম্প্রতি হাজত থেকে জামিনে বেরিয়ে এসে খুব জোরেসোরে মাদকের করবার চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি অতিসত্বর এ সকল নারী মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতারের দাবি জানান।


প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৫, ২০২৩ | সময়: ৬:১১ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ