পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর পিতার হাত দিয়ে এতিমরা পেলো ৫০ হাজার ডলার

স্টাফ রিপোর্টার, বাঘা: রাজশাহীর বাঘায় সরেরহাট কল্যাণী শিশু সদন ও মমতাজ আজিজ বৃদ্ধা নিকেতনকে ৫০ হাজার ইউএস ডলার অর্থ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। শনিবার দুপুর ১২টায় রোটারি ইন্টারন্যাশনালের সহযোগিতায় এইচআরএম টেক্সটাইলটল জিএমবিএইচ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্থানীয় সাংসদ ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর পিতা সমাজ সেবক শামসুদ্দিনকে সাথে করে আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রতিষ্ঠানের পরিচালক শামসুদ্দিন সরকার ও তার স্ত্রী মেহেরুন্নেসার হাতে এ অর্থ তুলে দেন।
আয়োজিত অর্থ সহায়তা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রাজশাহী বারিন্দ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং স্থানীয় সাংসদ ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর পিতা সমাজ সেবক শামসুদ্দিন। বিশেষ অতিথি ছিলেন এইচআরএম সোর্সিং লিমিটেড ও এইচআরএম টেক্সটাইলটল জিএমবি এইচ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিপন ফকরুল কবির ও টেক্সটাইলটল জিএমবি এইচ এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরুল হক।
সরেরহাট কল্যাণী শিশু সদন ও মমতাজ আজিজ বৃদ্ধা নিকেতনের সভাপতি সাইদুর রহমানের সভাপতিত্বে আয়োজিত এ অর্থ প্রদান অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সরেরহাট কল্যাণী শিশু সদন ও মমতাজ আজিজ বৃদ্ধা নিকেতনের পরিচালক শামসুদ্দিন সরকার ওরুপে পল্লি চিকিৎসক ডা. শমেস ও তার স্ত্রী মেহেরুন্নেসা, মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল আলম, গড়গড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম, উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি সুজিত কুমার পান্ডে বাকু, বাঘা প্রেস ক্লাবের সভাপতি আবদুল লতিফ মিঞা, ইউপি সদস্য কামাল হোসেন প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সমাজ সেবক শামসুদ্দিন বলেন, আমার ধারণা ছিলনা, এই প্রতিষ্ঠানকে একবারে এতো টাকা অর্থ দিয়ে সহায়তা করবে কোন প্রতিষ্ঠান। যারা এ অনুদান দিলো, তারা মানবতার সেবক। মানুষের প্রতি মানুষের ভালবাসা থাকলেই কেবল এ সহায়তা দেওয়া যায়। তিনি বলেন, ভাল মানুষ না থাকলে হয়তো পৃথিবী এতোদিন ধবংস হয়ে যেতো। আমি চাই এমনি ভাবে সমাজের সকল বিত্তবানরা অসহায় শিশু এবং বৃদ্ধা শ্রমের দুখি মানুষের পাশে এসে দাঁড়াক। তিনি নিজেও ছেলের পক্ষ থেকে মাঝে-মধ্যে নানা ভাবে এই প্রতিষ্ঠানে সহায়তা দিয়েছেন বলে জানান।
এইচআরএম সোর্সিং লিমিটেড ও এইচআরএম টেক্সটাইলটল জিএমবিএইচ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিপন ফকরুল কবির বলেন, সামসুদ্দিন আমার বাবা এবং মেহেরুন্নেসা আমার মা। আমি তাদের সন্তান হিসেবে এই প্রতিষ্ঠানকে ৮ বছর থেকে বসবাসরত সুবিধা বঞ্চিত শিশু এবং বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য অবকাঠামো নির্মাণ, আসবাবপত্র, উন্নত খাবার পরিবেশন, উন্নত শিক্ষার লক্ষে পাশে থেকে কাজ করছি। আমি যতোদিন বেঁচে থাকবো, ততোদিন সহায়তা প্রদান করে যাব। আপনারা আমাকে দোয়া করবেন আমি যেন, তাদের পাশে থাকতে পারি।
উল্লখ্য, এইচআরএম সোর্সিং লিমিটেড বাংলাদেশে একটি সুপরিচিত এবং অন্যতম বৃহত্তম বায়িং হাউজ প্রতিষ্ঠান। এর সহযোগি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান এইচআরএম টেক্সটাইলটল জিএমবি এইচ স্টুটগার্ট-জার্মাানিতে ২০১৭ সাল থেকে পথ চলা শুরু করে। যার উদ্দেশ্যে হলো জার্মানিতে বিশ্বমানের ফ্যাশানেবল কর্পোরেট পোশাক, সামগ্রী বিপনন এবং ওয়ার্ক ওয়ার বিক্রয়কারী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্টিত করা।
কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে সরেরহাট কল্যাণী শিশু সদন ও মমতাজ আজিজ বৃদ্ধা নিকেতনকে সহায়তা করে আসছেন। এই প্রচেষ্টার ধারাবাহিকতায় ৫০ হাজার ইউএস ডলার বর্তমান বাংলাদেশ টাকা ৫৫ লাখ টাকার বেশি সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
জানা গেছে, রাজশাহী শহর থেকে ৫০ কিলোমিটার পূর্বে পদ্মা নদীর তীর ঘেঁষে বাঘা উপজেলার গড়গড়ি ইউনিয়নের সরেরহাট গ্রাম। এ গ্রামে গড়ে উঠেছে ১৯৮৪ সালে সরেরহাট কল্যাণী শিশু সদন এবং ২০১৭ সালে মমতাজ আজিজ বৃদ্ধা নিকেতন। এখানে বর্তমানে বৃদ্ধ ৪৪ জন ও এতিম শিশু ১৩০ জন। মোট ১৭৪ জন। সরকারি সহায়তা পায় ১০০ জন।
পৈতৃক ১৭ বিঘা জমি বিক্রি করে এতিমদের রক্ষা করে চলেছেন মুক্তিযোদ্ধা শামসুদ্দিন। তিনি প্রথমে স্ত্রী মেহেরুন্নেসার মোহরানা বাবদ অর্থে ১২ শতাংশ জমি ক্রয় করে চালু করেন প্রতিষ্ঠানটি। আয় বলতে মেহেরুন্নেসার সেলায় ফোড়া ও শমেস ডাক্তারের চিকিৎসা থেকে আসা কিছু অর্থ। তাদের রক্ষার্থে আশ্রয়হীনদের ব্যবস্থা করতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত তিনি বাড়ির ভিটা বিক্রি করে নিজেই পরিবার নিয়ে হয়ে পড়েন গৃহহীন। তবে বর্তমানে সরকারি বে-সরকারি এবং সমাজের বিত্তবানদের সহায়তায় ৫২ শতাংশ জমির উপর এই প্রতিষ্টানটি উপজেলা সদর থেকে সাড়ে তিন কিলোমিটার পূর্বে সরেরহাট গ্রামে অবস্থান করছে।


প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৫, ২০২৩ | সময়: ৬:১১ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ