সরিষায় বাম্পারের সম্ভাবনা

মতলুব হোসেন, জয়পুরহাট: জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার প্রতিটি গ্রামেই ব্যাপক ভাবে চাষ করা হয়েছে সরিষার। তবে উপজেলার আক্কেলপুর পৌরসভা সহ তিলকপুর, রায়কালি, গোপীনাথপুর ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি সরিষার আবাদ করেছে স্থানীয় কৃষকরা। যদি অনুকূল আবহাওয়া থাকে তাহলে সরিষাতে ধানের চেয়ে বেশি লাভজনক হবে বলে আশা করছেন কৃষকরা। তারা সরিষা ঘরে তুলেই ধান চাষের জন্য জমি তৈরি করতে শুরু করবেন।
এখন এসব এলাকার চাষিরা সরিষার পরিচর্যা নিয়ে ব্যাপক সময় পার করছেন। জমি থেকে পাকা সরিষা সংগ্রহ করতে পারলেই কৃষকদের চিন্তা দূর হবে। চলতি মৌসুমে পুরো উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে। বাজারে সরিষার দাম বেশি থাকায় ও উপজেলা কৃষি অফিস কৃষকদের চাষে উদ্বুদ্ধ করায় এবার কৃষকেরা লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ২ হাজার ১২০ হেক্টর আবাদ করেছে। আবহাওয়া অনুকূলে তারপরও দুশ্চিন্তায় প্রহর গুনে দিন কাটাচ্ছে কৃষকরা। কৃষকের পছন্দ অনুযায়ী বিভিন্ন জাতের সরিষার আবাদ হলেও বারি ৯, ১৪, ১৫, ১৭, ১৮ এর মধ্যে বারি ১৪ ও ১৭ জাতের সরিষা আবাদ হয়েছে প্রায় শতকরা ৯০ ভাগ।
আক্কেলপুর উপজেলার রুকিন্দীপুর ইউনিয়নের জালালপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল জলিল মন্ডল বলেন,গত মৌসুমে মাত্র এক বিঘা জমিতে সরিষা আবাদ করেছিলাম। এক বিঘা জমিতে প্রায় ১২ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। গত বছরের সরিষা আবাদে যে পরিমান লাভ হয়েছে তা দেখে এবার ৫বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছি।
তিনি আরো বলেন, জমি তৈরি করা থেকে ফলন ঘরে তোলা পর্যন্ত প্রতি বিঘা জমিতে সরিষা আবাদে তার খরচ হয়েছে প্রায় ৮ হাজার টাকা। যদি আবহাওয়া অনুকূলে থাকে তাহলে এসব জমি থেকে প্রায় ৩৫ মণ সরিষার ফলন পাবেন বলে আশা করছেন। তবে এবার বাজারদর বেশি পাওয়ার আশা করছেন অনেকেই।
একাধিক কৃষক জানান, অন্যান্য ফসলের মতো সরিষা আবাদে তেমন শ্রমের প্রয়োজন হয় না। জমি থেকে পাকা সরিষা সংগ্রহ ও মাড়াই করে ফসল ঘরে তোলার জন্য পরিবারে পুরুষের পাশাপাশি নারী সদস্যরাও নিয়মিত ভাবে কাজ করেন।
আক্কেলপুর পৌর সভার নয়ন মহন্ত বলেন, অল্প খরচ ও স্বল্প সময়ে সরিষার ফলন ঘরে তোলা যায়। ঝড় বৃষ্টি না হওয়ায় চলতি মৌসুমে সরিষার ফলনও হয়েছে বেশ। তিনি আরো বলেন, রোদে শুকিয়ে গুদামজাত করে পরে বিক্রি করতে পারলে সরিষার বাজারদর আরও বেশি পাওয়া যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। কিন্তু অভাবের তাড়নায় ফসল তুলার পরই বিক্রি করে দিতে হয়।
উপজেলার গোপীনাথপুর ইউপির তেমারিয়া গ্রামের কৃষক রাশেদুল ইসলাম বলেন, গত বছর সরিষা চাষে যে লাভ হয়েছে এর আগে ধান আবাদ করে কোনভাবেই সম্ভব হয়নি। তাই এবার আগাম জাতের ধান রোপণ করেছিলাম। ধান কেটেই ৬ বিঘা জমিতে সরিষা বোপণ করছি এবং ফলন অনেক ভালো হয়েছে। তিনি জানান প্রতি বিঘা জমিতে সরিষা উৎপাদিত হয় কম পক্ষে ৬ থেকে ৮ মণ । জমিতে হাল চাষের পর বীজ বপন, সার ও সেচ দিতে হয়।
প্রতি বিঘা জমিতে খরচ হয় গড়ে ৬ হাজার টাকা। আর প্রতি মণ সরিষা বিক্রি হবে ২৫শ থেকে ৩ হাজার টাকায়। উৎপাদন ব্যয়ে প্রতি বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করে কমপক্ষে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব।
আক্কেলপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ইমরান হোসেন বলেন, কৃষি মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক নিদের্শনায় আগামী ৩ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের ৪০% সরিষার আবাদ বাড়াতে হবে তারই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরে আক্কেলপুরে প্রায় ২ হাজার ১শত ২০ হেক্টর জমিতে সরিষা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৭০ হেক্টর বেশি চাষ করা হয়েছে। প্রণোদনা মাধ্যমে ৩ হাজার ৮শত কৃষকের মাঝে সার বীজ বিতরণের পাশাপাশি সেমিনার এবং গ্রাম পর্যায়ে কৃষকদের সঙ্গে খুলি বৈঠক করে সরিষা চাষ আবাদে উদ্ভুদ্ধ করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া ভালো থাকায় সরিষার বা¤পার ফলন হয়েছে পুরো আক্কেলপুর উপজেলায়। বিঘা প্রতি মাত্র ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা খরচ করে প্রায় ৭ মণ করে সরিষার ফলন পাবেন চাষিরা আশা রাখি।


প্রকাশিত: জানুয়ারি ১২, ২০২৩ | সময়: ৬:০২ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ