সর্বশেষ সংবাদ :

থেমে নেই ইমো-বিকাশ হ্যাকিং, ধরা ছোঁয়ার বাইরে বড় ভাইয়েরা !

স্টাফ রিপোর্টার,বাঘা : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার সহজ হওয়ায় দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠির মাঝে ইমো ব্যবহার এবং বিকাশ হ্যাকিং খুব সহজ বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। বিশেষ করে প্রবাসীরা প্রায়স: প্রতারনার ফাঁদে পড়ছে। প্রতারক চক্রের সদস্যরা ফেসবুক, ইউটিউব, এবং বিকাশ হ্যাক-সহ বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যম ব্যবহার করে নানা কৌশলে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের অপরাধ কার্যক্রম । তবে এ সকল অপরাধিদের পেছেনে রয়েছেন কথিত বড়ভাই। যারা সবসময় ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে তাদের সহায়তা দিচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের ৯ অক্টবার প্রতারণার ফাঁদে পড়েন ঢাকা ওয়ারির বাসিন্দা নুরুল ইসলাম। ভুক্তভুগির বড় ভাই আবুল কাশে কাতার প্রবাসী। । তিনি ইমোকলে কথা বলে তার ভাই নুরুল ইসলামের কাছে ৬৫ হাজার টাকা পাঠিয়ে প্রতারণার শিকার হন। এই টাকাটা নেওয়ার আগে তাঁর কাছে ম্যাছেজ এবং বিকাশ নাম্বার চাওয়া হয়। পরিস্থিতির এক পর্যায় তিনি তথ্য প্রযুক্তি আইনে ওয়ারী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় ডিবি পুলিশ বেশ কয়েকজনকে আটক করে। এদের মধ্যে রয়েছে বাঘা উপজেলার ব্যাংগাড়ী এলাকার বহুল আলোচিত সজীব নামে এক যুবক। অভিযোগ রয়েছে, এই সজীবের পছেনে শক্তি দাতা হিসাবে কাজ করেন ঢাকায় অবস্থান রত একজন প্রভাবশালী বড়ভাই । নিজ এলাকায় তাঁর অবৈধ বালির ব্যবসা রয়েছে। সেটিও সজীব দেখা শোনা করতেন। ইতোমধ্যে ঐ বড়ভাই অবৈধ পথে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন বলেও স্থানীয় একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

বাঘা থানা পুলিশের একটি মুখপত্র জানান, এর আগে গত ১৬ ফেব্রুয়ারী উপজেলার সরের হাট স্কুলমাঠে রাত ১০ টার সময় একইস্থানে বসে মোবাইল ব্যবহার করছিল পাশ্ববর্তী লালপুর উপজেলার দুড়দুড়িয়া ইউনিয়নের মনিহারপুর গ্রামের চার যুবক। এরা হলো- মাজদার রহমানের ছেলে আলোচিত সজীব আলী(২৪) ,মুনছার আলীর ছেলে রনি ইসলাম(২০), রবিউল ইসলামের ছেলে শাওন(২২) ও সায়েম আলীর ছেলে ঝুন্টু আলী(২১)।এ সময় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বাঘা থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক(এস.আই) স্বপন সঙ্গীয় পুলিশ ফোন নিয়ে তাদের আটক করেন। তখন তাদের কাছ থেকে একটি এ্যাপাসি মোটর সাইকেল, ৭ টি মোবাইল এবং ২২ টি সিমকার্ড জব্দ করা হয়।

স্থানীয় লোকজন জানান, রাজশাহীর বাঘায় ইমো- বিকাশ হ্যাকারদের ফাঁদে পড়ে প্রতারিত হচ্ছে শত-শত মানুষ। একদল সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট ফেসবুকের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে প্রতিনিয়তই প্রতারিত করছেন সাধারণ মানুষকে। বিশেষ করে ফেসবুকে লাইভ ভিডিও সুবিধা চালু হবার পর এই প্রতারনায় এসেছে নতুন মাত্রা। এখন সরাসরি লাইভ ভিডিওতে বিকাশ নেয়ার মাধ্যমে শুরু হচ্ছে ইমো প্রতারণা। এ ছাড়াও হোয়াটসএ্যাপে ফোন সেক্সের আহবান জানানো হচ্ছে, কিন্তু শর্ত হলো একটাই- আগে বিকাশ, তবেই মিলবে ইমোর নম্বর, নতুবা নয়। আর এসব অফারে প্রতিনিয়ত বিকাশে টাকা পাঠিয়ে প্রতারিত হচ্ছে ফেসবুক ব্যবহারকারীরা।

এলাকার লোকজন জানান, বাঘা সীমান্ত এলাকায় ইমো প্রতারক ও বিকাশ হ্যাকাররা এখন নতুন কৌশল অবলম্বন করে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে । এক সময় হ্যাকাররা ফাঁকা জায়গা কিংবা স্কুল মাঠ ব্যবহার করলেও এখন তাদের দেখা মিলছে এলাকা ভিত্তিক ফ্ল্যাট বাড়ি কিংবা তার ছাদে । তবে একটানা সর্বোচ্চ তিন থেকে চারদিন পরে তারা নতুন জায়গা বেছে নিচ্ছে। লোকজন আরো জানান, ইমো এবং বিকাশ হ্যাকের সাথে সম্পৃক্ত এই চক্রটির অধিকাংশ জন মাদকের সাথে সম্পৃক্ত। বাঘা সীমান্তবর্তী উপজেলা হওয়ায় এর প্রবনতা এখানে অনেক বেশি। বিশেষ করে উপজেলার আলাইপুর, কিশোরপুর, গোকুলপুর, পাকুড়িয়া, চাঁনপুর,খানপুর ও মীরগঞ্জ সহ পাশ্ববর্তী লালপুর উপজেলার দুড়দুড়িয়া এবং মনিরহারপুর এলাকায় ছেঁয়ে গেছে এদের দৌরাত্ন্য ।

এ বিষয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন জানান, বর্তমান ডিজিটাল প্রযুক্তির যুগে ভিসা ও মাস্টার কার্ড ব্যবহার করে পৃথিবীর যে কোনো দেশে ইলেকট্রনিক পেমেন্ট, কেনাকাটা, এটিএম বুথ থেকে টাকা উত্তোলন ও মোবাইল রিচার্জ-সহ বিভিন্ন কাজ করা যায় অনায়াসে। এই কার্ড ব্যবহার করে বিকাশ অ্যাকাউন্টে টাকাও ক্লোন করা যায়। আর এই সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে প্রতিনিয়ত বিকাশ ব্যবহারকারীদের অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে তাদের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে এই প্রতারক চক্র গুলি ।

রাজশাহী ডিবি পুলিশের একটি মুখপাত্র জানান, এ চক্রটি চার ধাপে প্রতারণা করে। প্রথমে একটি গ্রুপ বিকাশের দোকানে ক্যাশ ইন রেজিস্ট্রারের ছবি তুলে পাঠিয়ে দেয় মূল হ্যাকারদের কাছে। দ্বিতীয় ধাপে হ্যাকার ছবি দেখে বিকাশ দোকানদার সেজে ভিকটিমকে ফোন দেয়। পরের ধাপ বিকাশের কল সেন্টারের নাম্বর ক্লোন করে ফোন দেওয়া হয়। কথিত কল সেন্টার থেকে ভিকটিমকে ওটিপি বা ওয়ান টিম পাসওয়ার্ড পাঠান এবং কৌশলে প্রেরিত ওটিপি ভিকটিমদের কাছে জানতে চায়। অনেকেই প্রতারিত হয়ে ওটিপি দিয়ে দেন। যারা দিতে না চান তাদেরকে একটি অংকের মাধ্যমে ধাঁধায় ফেলে হাতিয়ে নেয়া হয় গোপন পিন নম্বর। অত:পর অর্থ হাতিয়ে নেয় হ্যাকাররা।

বাঘা থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাজ্জাদ হোসেন বলেন, বিকাশ থেকে টাকা বের করাটা হ্যাকিং নয়, এটা এক ধরনের ডাকাতি। আমরা এটি নির্মুল করতে চায়। তিনি জানান, গত এক বছরে বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং থানা পুলিশ মিলে প্রায় শতাধিক হ্যাকারকে আটক করেছেন। তিনি এ সকল অপরাধীদের আটক করতে সকল শ্রেনী পেশার মানুষের সহায়তা কামনা করেন ।


প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩, ২০২৩ | সময়: ৯:৪৭ পূর্বাহ্ণ | সানশাইন