রাজশাহীতে মৃদু শৈত্য প্রবাহ, সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় দুর্ভোগে মানুষ

স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহীতে একদিনের ব্যবধানে আরো ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা কমে আবহায়ায় মৃদু শৈত প্রবাহে রূপ নিয়েছে। কুয়াশা কেটে ঝলমলে রোদের দেখা মিললেও মৃদু শৈত্য প্রবাহের কারণে বৃদ্ধি পেয়েছে শীতের তীব্রতা। এখন জেকে বসেছে শীত। এতে নাকাল হয়ে পড়েছে জনজীবন। বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই রাজশাহী অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া শৈত্য প্রবাহের কারনে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিস জানায়, বৃহস্পতিবার ভোর ৬ টায় রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। একদিন আগে বুধবার রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তার আগের দিন মঙ্গলবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ গত দুইদিনের ব্যবধানে ব্যবধানে রাজশাহীর তাপমাত্রা কমেছে ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশী। হঠাৎ করে তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে।
এদিকে তীব্র শীতে ভোগান্তিতে পড়েছেন ছিন্নমুল মানুষ। বিশেষ করে ভোরে কাজের সন্ধানে যরদের বের হতে হচ্ছে, তাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। শীতে ঠান্ডাজনিত নানা অসুখ-বিসুখ দেখা দিচ্ছে শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠদের মধ্যে। ফলে রোগির চাপ বাড়ছে হাসপাতালে। রাজশাহী আবহাওয়া অফিস বলছে, কয়েক দিনের মধ্যে পদ্মাপারের এই শহরের তাপমাত্রা আরও কমতে পারে।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক আবদুস সালাম জানান, ডিসেম্বরের শুরুতে দুই দিনের জন্য রাজশাহীতে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছিল। তারপর শৈত্যপ্রবাহ কেটে গেলেও শীত কমেনি। গত মঙ্গলবার ভোররাতে সামান্য বৃষ্টি হয়। এরপর ভোরে একটু তাপমাত্রা বেশি থাকলেও রাত থেকে কমে যায়। তবে বৃহস্পতিবার রাজশাহীতে ফের শুরু হয়েছে শৈত্য প্রবাহ।
এদিকে জেঁকে বসতে শুরু করেছে শীত। বাড়তে শীতের তীব্রতা। বৃহস্পতিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা এই মৌসুমের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এদিকে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার মধ্যে পার্থক্য কমে যাবার কারণে তাপমাত্রার চেয়েও বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে ঢাকাসহ বেশ কিছু অঞ্চলে। এছাড়া দেশের বেশ কিছু এলাকায় শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এই প্রবাহের অঞ্চল আগামীকাল বাড়তে পারে। তবে তাপমাত্রা প্রায় একই থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।
বৃহস্পতিবার দেশের রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ, নীলফামারী এবং চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, যা অব্যাহত থাকতে পারে। গত ২৪ ঘন্টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা এই মৌসুমের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এর আগে এই মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল গত ২৩ ডিসেম্বর নওগার বদলগাছিতে ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এছাড়া রাজশাহীতে ৯ দশমিক ৪, সৈয়দপুর ও বদলগাছিতে ১০, দিনাজপুরে ১০ দশমিক ৫, যশোরে ১০ দশমিক ৬, তেতুলিয়ায় ১০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৪ দশমিক ৫, সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার মধ্যে পার্থক্য কমে যাবার কারণে এখন ঢাকায়ও মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত এবং বিকালের পর শীতের তীব্রতা অনুভব করা যাচ্ছে।
ঢাকা ছাড়া চট্টগ্রামের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৮, সর্বোচ্চ ২২ দশমিক ৭, রাজশাহীতে ৯ দশমিক ৪, সর্বোচ্চ ২৪ দশমিক ৬, রংপুরে ১২ দশমিক ৫, সর্বোচ্চ ২১ দশমিক ৩, ময়মনসিংহে ১৩, সর্বোচ্চ ২২, সিলেটে ১৪ দশমিক ১, সর্বোচ্চ ২৫ দশমিক ৪, খুলনায় ১২ দশমিক ৫, সর্বোচ্চ ২৫ দশমিক ৮ এবং বরিশালে ১৩ দশমিক ২ এবং সর্বোচ্চ ২৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান বলেন, সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার মধ্যে পার্থক্য কমে আসলে শীতের অনুভূতি বেড়ে যায়। আগে যেখানে তাপমাত্রা কম ছিল কিন্তু শীতের অনুভূতি এত বেশি ছিল না। আজ সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য কমে যাওয়ার কারণে গত কয়েকদিন ঢাকাসহ বেশ কিছু এলাকায় আগের চেয়ে শীত বেশি অনুভব হচ্ছে। আগামী কয়েকদিন এই অবস্থাই বিরাজ করবে বলে তিনি জানান।
আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ বিহার ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে, এর বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত।
আগামী ২৪ ঘন্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। কুয়াশার বিষয়ে বলা হয়, শেষরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। তাপমাত্রার বিষয়ে বলা হয়, সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বলেন, তাপমাত্রা বেশ খানিকটা কমেছে বেশ কিছু এলাকায় শৈত্যপ্রবাহ বইছে। আগামীকাল আরও কিছু এলাকায় এই শৈত্যপ্রবাহ বইতে পারে। তবে তাপমাত্রা প্রায় একই থাকতে পারে।


প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩০, ২০২২ | সময়: ৫:৫৫ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ