শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
সানশাইন ডেস্ক: মেট্রোরেলে যাতায়াতে যাত্রীদের জন্য দুই ধরনের টিকেটের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে; একটি দীর্ঘ মেয়াদে ব্যবহারের এমআরটি পাস, অন্যটি দিয়ে চড়া যাবে একবার। মেট্রোরেলের নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব থাকা ঢাকা ম্যাস র্যাপিড কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) জানিয়েছে, শুরুতে কেবল মেট্রোরেল স্টেশনের কাউন্টার থেকে নির্দিষ্ট জামানত দিলে মিলবে এমআরটি পাস।
আর একবারের যাত্রার (সিঙ্গেল জার্নি) জন্য টিকেট মিলবে স্টেশনে থাকা কাউন্টার এবং পাশের স্বয়ংক্রিয় ‘টিকেট মেশিন’ থেকে। যাত্রা শেষে নির্ধারিত মেশিনে টিকেট কার্ডটি ফেরত দিলে তবেই স্টেশন থেকে বের হতে পারবেন যাত্রীরা। এমআরটি পাস সংগ্রহের পর নিয়মিত যাতায়াতের জন্য কাউন্টারের পাশাপাশি ‘টিকেট মেশিন’, মোবাইল ও ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমেও টপ-আপ করা যাবে।
প্রতিটি স্টেশনের দুই প্রান্তে দুটি কাউন্টার এবং চার থেকে ছয়টি স্বয়ংক্রিয় ‘টিকেট বিক্রয় মেশিন’ আছে। সাধারণ যাত্রীদের কাউন্টারের পাশেই আছে অপেক্ষাকৃত কম উচ্চতার কাউন্টার, যেখান থেকে টিকেট সংগ্রহ করতে পারবেন হুইল চেয়ার ব্যবহারকারী ও খর্বকায় ব্যক্তিরা।
ডিএমটিসিএল জানিয়েছে, এমআরটি পাস থেকে ‘দূরত্ব অনুযায়ী’ নির্ধারিত ভাড়া স্বয়ংক্রিয়ভাবে কেটে নেওয়া হবে। যাত্রী যে কোনো সময় এমআরটি পাস ফেরত দিয়ে জামানতের অর্থ ও অব্যবহৃত টাকা ফেরত নিতে পারবেন। পাসটি হারিয়ে বা নষ্ট হয়ে গেলে ‘রেজিস্টার্ড কার্ডের বাহক’ নতুন এমআরটি পাস সংগ্রহ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে অব্যবহৃত অর্থ স্বয়ংক্রিয়ভাবে নতুন এমআরটি পাসে স্থানান্তরিত হবে। আর টিকেট অফিস মেশিন বা টিওএম অপারেটরকে অবহিত করে হারানো পাসটির অবৈধ ব্যবহার বন্ধ করা যাবে।
স্বয়ংক্রিয় মেশিন থেকে টিকেট কাটতে: আপনি যদি একবার ট্রেনে চেপে যেতে চান, সেক্ষেত্রে স্টেশনের দোতলায় থাকা মেশিনে কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করে নিজেই টিকেট কাটতে পারবেন।এ মেশিনের টাচ স্ক্রিন প্যানেল ব্যবহার করা যাবে স্মার্ট ফোনের মতই।
শুরুতে ভাষা নির্বাচন করে মেশিনের বাঁ পাশের উপর দিকে থাকা ‘একক যাত্রা টিকেট’ অপশনে ক্লিক করতে হবে। তখন আপনি যে স্টেশনে অবস্থান করছেন, সেটি সবুজ রঙে স্ক্রিনে দেখাবে। এরপর আপনাকে গন্তব্যের স্টেশনের নাম নির্বাচন করতে হবে। তখন স্ক্রিনের ডান পাশে ভেসে উঠবে ভাড়ার পরিমাণ।
এরপর আপনাকে স্ক্রিনের নিচের দিকের অপশন থেকে টিকেটের সংখ্যা নির্বাচন করতে হবে। একজন যাত্রী একবারে সর্বোচ্চ পাঁচটি টিকেট কিনতে পারবেন। টিকেটের সংখ্যা নির্দিষ্ট হওয়ার পর ‘ওকে’ বোতাম চাপতে হবে। এরপর মেশিনের নির্দিষ্ট জায়গায় টাকা প্রবেশ করানোর নির্দেশনা আসবে স্ক্রিনে। নির্ধারিত জায়গায় টাকা প্রবেশ করালে কত টাকা দিলেন সেই তথ্য উঠতে থাকবে স্ক্রিনে।
নির্দিষ্ট পরিমাণ ভাড়ার টাকা যদি আপনি প্রবেশ করান, তাহলে স্ক্রিনের নিচের বাঁ দিকের নির্দিষ্ট জায়গা থেকে বেরিয়ে আসবে একক যাত্রার টিকেট। আর আপনি যদি কিছু টাকা ফেরত পান, সেটাও বেরিয়ে আসবে নির্দিষ্ট জায়গা দিয়ে। টিকেট কাটার সময় স্ক্রিনে দেখানো হবে, আপনার নির্দিষ্ট পরিমাণ ভাড়ার জন্য আপনি কত টাকা পর্যন্ত ব্যাংক নোট মেশিনে প্রবেশ করাতে পারবেন। কম ভাড়ার জন্য একেবারে বড় নোট প্রবেশ করানো যাবে না।
হাতে ভাংতি না থাকায় বা বড় নোটের কারণে টিকেট কাটতে না পারলে ঘাবড়ে যাওয়ার কারণ নেই; চলে যান টিকেট কাউন্টারে। বাংলাদেশে চালু সব ব্যাংক নোটই গ্রহণ করবে টিকেট বিক্রয় মেশিন। তবে বেশি পুরনো ও ছেঁড়া নোট মেশিন নেবে না।
ভাড়া কত: এই বৈদ্যুতিক ট্রেনের ভাড়া ঠিক হয়েছে প্রতি কিলোমিটার ৫ টাকা, তবে সর্বনিম্ন ভাড়া গুনতে হবে ২০ টাকা। প্রাথমিকভাবে মেট্রো রেল চালু হচ্ছে উত্তরা নর্থ স্টেশন (দিয়াবাড়ি) থেকে আগারগাঁও স্টেশন পর্যন্ত। এই দূরেত্বের ভাড়া ঠিক হয়েছে ৬০ টাকা। মাঝে মেট্রোরেলের আরও সাতটি স্টেশন রয়েছে।
পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ট্রেন চলবে উত্তরা থেকে মতিঝিল হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত। তখন ওই দূরত্বের ভাড়া হবে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা। প্রথমদিকে একাধিকবার ভ্রমণের জন্য ব্যবহার করা এমআরটি পাস সংগ্রহ করতে হবে স্টেশনের টিকেট কাউন্টার থেকে। একটি পাসে প্রতিবার শুধুমাত্র একজন যাত্রী ভ্রমণ করতে পারবেন। জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম নিবন্ধন কিংবা পাসপোর্ট নম্বর দিয়ে আবেদন করে নিতে হবে এমআরটি পাস।
এমআরটি পাসের জন্য শুরুতে মোট ৪০০ টাকা জমা করতে হবে। এর মধ্যে ২০০ টাকা জামানত (ফেরতযোগ্য) এবং ২০০ টাকা ভাড়া। পরে ১০০ টাকা বা তার গুণিতকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত টপ আপ করা যাবে ওই পাসে। আপাতত শুধু স্বয়ংক্রিয় টিকেট বিক্রয় মেশিন কিংবা স্টেশন কাউন্টারের মাধ্যমে এমআরটি পাস টপ আপ করা যাবে।
ইউক্রেইনকে মস্কোর আল্টিমেটাম: প্রস্তাব মানো, নয়তো সিদ্ধান্ত রুশ সেনাবাহিনীর
সানশাইন ডেস্ক: ইউক্রেইনকে দেওয়া আল্টিমেটাম রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেছেন, রাশিয়ার দখলে নেওয়া ভূখণ্ডকে স্বীকৃতি দেওয়াসহ মস্কোর সব প্রস্তাব মানো, নয়তো রুশ সেনাবাহিনীই বিষয়টির ফয়সালা করবে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেইন নিয়ে আলোচনায় তার আগ্রহের জানান দেওয়ার পরদিন সোমবার ল্যাভরভ এ আল্টিমেটাম দিয়েছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। কিইভ ও এর পশ্চিমা মিত্ররা পুতিনের আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন; তার সেনারা একদিকে ইউক্রেইনের একের পর এক শহরকে ক্ষেপণাস্ত্র ও রকেট দিয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিচ্ছে, অন্যদিকে মস্কো তাদের দখলে থাকা ইউক্রেইনের এক পঞ্চমাংশকে নিজেদের ভূখণ্ডভুক্ত করার স্বীকৃতি চেয়েই যাচ্ছে।
কিইভ বলছে, রাশিয়া সৈন্য প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত তারা লড়াই চালিয়ে যাবে। “আমাদের প্রস্তাব হচ্ছে- ইউক্রেইনের শাসকদের নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকাগুলোর নিরস্ত্রীকরণ ও নাৎসিমুক্তকরণ, সেখান থেকে উদ্ভূত আমাদের নতুন ভূখণ্ডসহ রাশিয়ার নিরাপত্তার জন্য হুমকি দূর করা, শত্রুরা এগুলো সবই জানে। “ব্যাপারটা খুবই সহজ। নিজেদের ভালোর জন্যই এসব মেনে নাও। নাহলে, এ ব্যাপারে যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার তা রাশিয়ার সেনাবাহিনীই নেবে,” সোমবার ল্যাভরভ এমনটাই বলেছেন বলে জানিয়েছে রুশ বার্তা সংস্থা তাস।
রাশিয়ার জন্য হুমকি হয়ে ওঠা ইউক্রেইনের নিরস্ত্রীকরণ ও একে ‘নাৎসিমুক্ত’ করতে চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি পুতিন প্রতিবেশী দেশে তার ভাষায় ‘বিশেষ সামরিক অভিযানে’ নামেন। অন্যদিকে কিইভ ও এর পশ্চিমা মিত্ররা পুতিনের এই ‘আগ্রাসনকে’ সাম্রাজ্যবাদী কায়দায় জমি দখলের চেষ্টা বলে অভিহিত করে আসছে। ১১ মাসে পড়া এই যুদ্ধে বেশ কয়েকটি ফ্রন্টে বিব্রতকরভাবে পিছু হটা রুশ বাহিনী এখন ইউক্রেইনের পূর্ব ও দক্ষিণে কিইভবাহিনীর ওপর তুমুল চাপ সৃষ্টি করেছে।
সোমবার একটি ড্রোন সীমান্ত থেকে কয়েকশ কিলোমিটার ভেতরে ঢুকে দেশটির আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনাকে ফাঁকি দিয়ে মস্কোর বোমারু বিমানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে। ড্রোনটি ইউক্রেইনীয়দের বলেই মনে করা হচ্ছে।
এঙ্গেলস বিমানঘাঁটিতে এই হামলায় কোনো বিমানের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করলেও রাশিয়া ও ইউক্রেইনের বেশ কয়েকটি সোশাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট উল্টো কথা বলছে। রয়টার্স অবশ্য কারও ভাষ্যের সত্যতাই যাচাই করে দেখতে পারেনি। সোমবার পুতিন সেইন্ট পিটার্সবুর্গে সাবেক সোভিয়েতভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর জোট কমনওয়েলথ অব ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্টেটের শীর্ষ সম্মেলনে সদস্য দেশগুলোর শীর্ষ নেতাদের স্বাগত জানান। ইউক্রেইন বেশ আগেই এই জোট থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছিল।
টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ভাষণে রুশ প্রেসিডেন্টকে ইউক্রেইনে যুদ্ধ নিয়ে সরাসরি কোনো কথা না বলে ইউরেশিয়ান অঞ্চলে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার ওপর হুমকি ক্রমাগত বাড়ছে বলে মন্তব্য করেছেন। “দুর্ভাগ্যজনকভাবে, বিশেষ করে বাইরে থেকে, প্রতি বছরই এই অঞ্চলের জন্য হুমকি ও প্রতিবন্ধকতা ক্রমাগত বাড়ছে। এ কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে যে মতভেদও বাড়ছে, দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের সেটাও স্বীকার করে নিতে হবে,” বলেছেন তিনি।
একসময় সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেতরে থাকা দেশগুলোতে রাশিয়ার প্রভাব দীর্ঘদিনের, সেই প্রভাব বলবৎ থাকবে কিনা, ইউক্রেইন যুদ্ধে তার এক ধরনের পরীক্ষাও চলছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে কমনওয়েলথ অব ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্টেটের দুই সদস্য আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে বিবাদ আরও বেড়েছে, যেই অঞ্চল নিয়ে এই দুই দেশের মধ্যে বিরোধ সেখানে রাশিয়ার শান্তিরক্ষী বাহিনীও আছে। সীমান্ত নিয়ে সংঘাত দেখা গেছে কিরগিজস্তান ও তাজিকিস্তানের মধ্যেও।
পুতিন ‘বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতা ও মধ্যস্থতামূলক পদক্ষেপের’ মাধ্যমে এসব মতভেদ দূর করার ওপর জোর দিয়েছেন। সোমবার ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি তার রাতের ভাষণে বলেছেন, দনবাসের যুদ্ধক্ষেত্রের ‘কঠিন ও বেদনাদায়ক’ পরিস্থিতিতে দেশের সমস্ত ‘শক্তি ও একাগ্রতা’ দরকার।
ইউক্রেইনের বিদ্যুৎ স্থাপনাগুলোতে রাশিয়ার একের পর এক হামলার কারণে প্রায় ৯০ লাখ মানুষ এখন বিদ্যুৎহীন বলেও তিনি জানিয়েছেন। এই সংখ্যা দেশটির জনসংখ্যার চার ভাগের এক ভাগের কাছাকাছি। ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে কিইভবাহিনীর প্রতিরোধের মুখে রাশিয়া অনেক এলাকা থেকে পিছু হটলেও ইউক্রেইনের বিস্তৃত এলাকা এখনও তাদের দখলে।
১০ মাস পেরিয়ে যাওয়া এ যুদ্ধ এরই মধ্যে দুই পক্ষের হাজার হাজার সেনার পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ বেসামরিক মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে; পুতিনকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথমবার সৈন্য সমাবেশে বাধ্যও করেছে।