সর্বশেষ সংবাদ :

অতীত না ভোলা সিডন্সের কণ্ঠে ধৈর্য্যের আহ্বান

স্পোর্টস ডেস্ক: তার ব্যাটে তখন নিয়মিত রানের ফুলঝুরি ছুটতো না। ছিলেন বড্ড অধারাবাহিক। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আউট হয়ে দলকে বিপদে ফেলার অনেক ঘটনাও আছে। আবার তার ব্যাটেই অনেক সময় বাংলাদেশের জয় লিখা হতো। মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ দুটোই দেখা যেত সাকিব আল হাসানের ২২ গজের পারফরম্যান্সে।
তবে দ্যুতি ছড়ানো বোলিং তাকে এগিয়ে নিয়েছিল বহূদূর। স্পিনে মুগ্ধতা ছড়িয়ে হয়ে উঠেছিলেন দলের নিয়মিত একজন, ভরসার পাত্র। পরবর্তীতে অধারাবাহিকতার শেকল ভেঙে ব্যাটসম্যান হিসেবেও নিজেকে গড়ে তোলেন। স্পিন অলরাউন্ডার থেকে হয়ে ওঠেন ব্যাটিং অলরাউন্ডার। এরপর তাকে আর থামানো যায়নি। নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যান অনন্য উচ্চতায়। হয়ে উঠেন বাংলাদেশের পোস্টারবয়। বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডারের একজন।
সাকিব আল হাসানের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আগমণ, তার পথ চলা, ভেঙে নিজেকে গড়া এবং বিশ্বসেরা হওয়ার পেছনের অন্যতম কারিগর ছিলেন জেমি সিডন্স। শুধু সাকিবই নন, মুশফিক, তামিম, মাহমুদউল্লাহদের অতি যত্নে গড়েছেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধান কোচ। তাদের ওপর বিশ্বাস রেখে, ধৈর্য্য ধরে, পিঠ চাপড়ে এগিয়ে নিয়ে গেছেন।
১১ বছর পর বাংলাদেশ ক্রিকেটে ফিরে সিডন্স পেয়েছেন ব্যাটিং পরামর্শকের দায়িত্ব। পুরোনো শিষ্যদের তো পেয়েছেন-ই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে লিটন, মিরাজ, আফিফ, মাহমুদুলদের মতো প্রতিশ্রুতিশীল ক্রিকেটার। তাদেরও যত্ন নিয়ে গড়তে চান সিডন্স। এজন্য ধৈর্য্যশীল হওয়ার আহ্বান জানালেন।
‘ওদের নিয়ে আমার কাজ অর্ধেক হয়ে গেছে। কারণ, ক্রিকেটারদের ক্লাস আছে। আমাদের এখনে কিছু প্রতিভাবান সুপারস্টার রয়েছে। আমরা তাদের সময় দিবো, যথাযথ ক্রিকেটারকে বাছাই করে তাদের নিয়ে কাজ করবো। তাদের ওপর বাড়তি চাপ না দিয়ে যথেষ্ট সুযোগ দেওয়া উচিত। আমার কোনো সন্দেহ নেই তারা নতুন সাকিব-তামিম হবে।’
‘যে প্রতিভা দেখছি তাতে আমার ওপর থেকে চাপ অনেকটাই কমে গেছে। বড় ম্যাচে পারফর্ম করার মতো যোগ্যতা এদের আছে। লিটন টেস্টে সেই কাজ করে দেখিয়েছে। লিটনকে নিয়ে কাজ করার মতো খুব কম বিষয় আছে। প্রতি বোলারের বিপক্ষে যেন ভালো করতে পারে এই জন্য কিছু কাজ করতে হবে। ওকে এই অবস্থায় নিয়ে যাওয়াটা আমার চ্যালেঞ্জ। তামিম এবং বাকিরা সেরা পর্যায়ে উঠেছে। এখন আমরা চাই তরুণরা যেন ওদেরও ছাড়িয়ে যায়।’
সিনিয়র চার ক্রিকেটারকে নিয়ে কতোটা গভীরভাবে কাজ করেছেন এবং তাদের উপর আস্থা রেখেছেন সেই কথাও মনে করিয়ে দিলেন সিডন্স, ‘আমাদের মনে রাখতে হবে তামিম, সাকিব, মুশফিক, রিয়াদ সবাই তাদের শুরুতে অধারাবাহিক ছিল। আমরা তাদের ক্যারিয়ারের যেকোনো পর্যায়ে বাদ দিয়ে দিতে পারতাম। সাকিব যদি ভালো বোলার না হতো, তাহলে সে সাফল্য পাওয়ার আগে ব্যাটসম্যান হিসেবে বাদ পড়ে যেতে পারতো। তবে সে নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছে। কারণ, ব্যাটসম্যান হিসেবে তার সামর্থ্য ছিল।’
ব্যাটিং কোচ হিসেবে তার দারুণ দক্ষতার কথা বরাবরই স্বীকার করে নেন মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিকরা। তাদের মতে সিডন্স তাদের ব্যাটিং উন্নতিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন সেই সময়ে। এবার তাদের পরামর্শেই ফেরানো হয়েছে ৫৭ বছর বয়সী কোচকে। শুধু তরুণ ক্রিকেটারদের নয়, সিনিয়ার চারজনকে নিয়েও কাজ করার ইচ্ছার কথা জানালেন সিডন্স।
‘সিনিয়রদের সঙ্গে আমার কাজটা মূলত ফুটওয়ার্ক নিয়ে। তামিম তার সামনের পা আরও সোজা করতে চায়। এসব বিষয় খুব শিগগিরই হয় না। তবে আমরা দীর্ঘমেয়াদি চিন্তা করছি। সে যদি আরও ৩-৪ বছর খেলতে চায়, তার সামনের পা আরেকটু সোজা করতে হবে। তাহলে সে আরও সাফল্য পাবে। তামিম যদি লেগ বিফোর আউট না হয়, তাকে আউট করা খুবই কঠিন। সে আরও অনেক রান করতে পারবে। আমি দেখতে পাচ্ছি, তামিমের সেরা ক্রিকেট এখনও সামনে পড়ে আছে।


প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২২ | সময়: ৪:২৮ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ