রাজশাহী অঞ্চলে ফের জামায়াত শিবিরের নাশকতার পাঁয়তারা

স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহী অঞ্চলে দীর্ঘদিন ঘাপটি মেরে আড়ালে কলকাঠি নাড়া জামায়াত-শিবির আবরো প্রকাশ্যে মাঠে নেমে নাশকতার ছক আটছে। ২০১৪ সালের পর থেকে এই অঞ্চলে কোণঠাসা হয়ে পড়া জামাতি নেতাকর্মীরা নানা কৌশলে প্রকাশ্যে আসার পাঁইতারাও করছে। ইতিমধ্যে তারা মাঠে নেমে অস্তিত্ব জানান দিয়েছে।
দীর্ঘ কয়েক বছর পর সর্বশেষ গত মঙ্গলবার রাজশাহীতে কথিত ঝটিকা মিছিলের নামে মাঠে নেমে প্রথম টার্গেট হিসেবেই পুলিশের ওপর আক্রমন করেছে। জামায়াত-শিবিরকর্মীদের ছোড়া ইটপাটকেলে রাজশাহীর দুই পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এ নিয়ে মানুষের মধ্যে জামায়াত-শিবিরের পুরানো কৌশল নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সাধারণ মানুষ বলছে, দীর্ঘ কোনঠাসা জামায়াত-শিবির কি প্রকাশ্যে মাঠে নেমে আবারো নাশকতার পাইতারা করছে? রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও জামায়াত-শিবিরের সর্বশেষ অবস্থান ও হঠাৎ মাঠে নেমে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, ভেতরে ভেতরে জামায়াত শিবির মাঠে নেমে আবারো নাশকতার ছক কষছে। এর প্রমাণও তারা দিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সর্বশেষ গত মঙ্গঙ্গলবার দলীয় আমীরকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে হঠাৎ করেই রাজশাহীতে ঝটিকা মিছিল করে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মীরা। খবর পেয়ে টহল পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালায়।
পুলিশ জানায়, মহানগরীর নিউমার্কেট এলাকায় আকস্মিক জড়ো হয় জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের কর্মীরা। এক পর্যায়ে আচমকা স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি নিউমার্কেটের সামনে থেকে মহানগরীর কাদিরগঞ্জ সড়ক হয়ে দড়িখড়বোনা রেলক্রসিংয়ের কাছে চলে যায়। এ সময় জামায়াতের বিক্ষোভ মিছিল ছত্রভঙ্গ করতে গেলে পুলিশকে লক্ষ্য করে তারা ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এতে দুই পুলিশ সদস্য আহত হন। তারা হলেন, মহানগরীর বোয়ালিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবু হায়দার ও কনস্টেবল মো. আহাদ। তাদেরকে পরে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
নগরীর বোয়ালিয়া থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম বলেন, পুলিশের অনুমতি না নিয়ে তারা ঝটিকা মিছিল বের করেছিল। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। এ সময় তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ঈটপাটকেল ছুঁড়তে ছুঁড়তে দিকবিদিক পালিয়ে যায়। যে কারণে সেখান থেকে তাদের কাউকে আটক করা যায়নি। তবে পরে এ ব্যাপারে দেড়শ জনের নামের মামলা হয়েছে। ৬ জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও রাজশাহী সদর আসনের এমপি ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, রাজশাহী অঞ্চলে নতুন রূপে জামায়াত-শিবির যে সংগঠিত হচ্ছে তার তথ্য আছে। এতে এই অঞ্চলের মানুষ আতঙ্কিত। তিনি বলেন, ঘাপটি মেরে থাকা জামায়াত-শিবির এখন রাজশাহীর প্রভাবশারীদের কাধে ভর করেছে। তিনি আইনশৃৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, নগর জুড়ে সিসি বসানো আছে, সাইবার ক্রাইম ইউনিট আছে। তাহলে কিভাবে জামায়াত-শিবির মাঝে মাঝে ঝটিকা মিছিল করছে। কেনইবা তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা যাচ্ছেনা। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার যখন ক্ষমতায় তখন জামায়াত-শিবির নতুন কৌশলে এ অঞ্চলে শক্তি বৃদ্ধি করার চেষ্টা করছে।
জানা যায়, ২০১৪ সালের পর থেকে এই অঞ্চলে একেবারেই কোণঠাসা হয়েছে পড়ে জামায়াত-শিবির। নাশকতায় জড়িতের অভিযোগে নেতাকর্মীদের নামে ডজন ডজন মামলা থাকায় প্রকাশ্যে থেকে আড়ালে চলে যায় নেতাকর্মীরা। বন্ধ হয়ে যায় তাদের প্রকাশ্যে সভা-সমাবেশ ও চলাফেরা। বিভিন্ন সময়ে নাশকতা অভিযোগ থাকলেও এরই মাঝে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখতে রাজনীতির মাঠে বারবার তৎপর থাকার চেষ্টা করছিলো। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারীতে তারা আর সক্রিয় তা পারেনি।
একাধিক সূত্র মতে, এখন প্রতিকূল পরিস্থিতির মাঝেই আইনশৃংখলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিয়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আন্দোলন সংগ্রাম এবং নিজেদের অস্তিত্ব¡ টিকিয়ে রাখতেই এখন নতুন নতুন কৗশল নিয়ে ভিতরে ভিতরে সুসংগঠিত করছে নিজেদের। এরই ধারাবাহিকতায় রাজশাহীতে বহিরাগত ও নাশকতা মামলার আসামিদের নেতৃত্বে এনে আবারও সংগঠনকে শক্তিশালী ও নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করার পায়তার চলছে বলে জানা গেছে।
রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, একাত্তরে পরাজিত শক্তি জামায়াত শিবির বিএনপির মধ্যে নানা কৌশলে প্রবেশ করে আবারো এ অঞ্চলে নাশকতার পাঁয়তারা করছে। সর্বশেষ পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় জামায়াত-শিবির তাদের পুরোনো ছকে ফের পা বাড়াচ্ছে বলে প্রতিয়মান হয়েছে। আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, বিএনপির ঘোষিত দশ দফা একাত্তরের পরাজিত শক্তি আর আগুন সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িতদেরকে রক্ষা করার। কিন্তু তাদের সেই দশ দফা কোনদিন বাস্তবায়ন হতে দেয়া হবে না। এখন আমরা (আওয়ামী লীগ) রাজনৈতিক বক্তৃতার জবাব দিবো বক্তৃতায়; আর যদি তারা লাঠি দিয়ে আঘাত করার চেষ্টা করে তাহলে আওয়ামী লীগ সেই লাঠির জবাব দেবে । আসাদ বলেন, বিজয়ের মাসে আমরা রাজশাহীর মানুষ শপথ নিয়েছি। বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের নৈরাজ্য আর সন্ত্রাসের দাঁত ভাঙা জবাব দেয়া হবে।
রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক সাংবাদিকদের বলেন, মৌলবাদী চক্র জামায়াত-শিবির গোষ্ঠীর নতুন পরিকল্পনা ভাঙতে সবসময় মাঠে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সম্প্রতি জামায়াত-শিবিরের কয়েকটি গোপন বৈঠকে পুলিশ অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। জামায়াত-শিবির আর আগের মতো নাশকতা ঘটাতে পারবে না। পুলিশ কঠোর অবস্থানে রয়েছে।


প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৬, ২০২২ | সময়: ৫:১৭ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ