সর্বশেষ সংবাদ :

নওগাঁ হানাদারমুক্ত হয় ১৮ ডিসেম্বর

রায়হান আলম, নওগাঁ: জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ঐতিহাসিক ভাষনের পর পরই নওগাঁয় সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। ২৫ মার্চ পাক হানাদারদের আক্রমণের শিকার হলেও নওগাঁ মুক্ত ছিল প্রায় এক মাস। ২২ এপ্রিল নওগাঁ পাক হানাদারদের দখলে চলে যায়। সারা দেশে ১৬ ডিসেম্বর হানাদারমুক্ত হলেও নওগাঁয় হয় ১৮ ডিসেম্বর।
১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের খবর শুনবার পর বীর মুক্তিযোদ্ধা জালাল হোসেন চৌধুরী নওগাঁ আক্রমন করার সিদ্ধান্ত নেন। তার পুর্বে নদীকুল নামক স্থানে গ্রুপ কমান্ডারদারদের ব্রিফিং দেন জালাল হোসেন চৌধুরী এই মর্মে যে, নওগাঁ এখনও অবাংগালীদের নিয়ন্ত্রনে।
১৭ ডিসেম্বর, শীতের সকাল। বিশাল মুক্তিযোদ্ধাদের দল নওগাঁ আক্রমণ করে। মুক্তিবাহিনী জগৎসিংহপুর ও খলিশাকুড়ি গ্রামে অবস্থান নিলে দুই বাহিনীর মধ্যকার দুরত্ব শুধু শাখা যমুনা নদী। এ অবস্থায় জালাল হোসেন চৌধুরী তার দলকে গুলি চালাবার নির্দেশ দেন। রাত পর্যন্ত এ যুদ্ধ স্থায়ী ছিল।
তবুও তারা মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পন করতে রাজী হয় নি। কারন তাদের ধারনা মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পন করলে তাদেরকে হত্যা করবে। ১৮ ডিসেম্বর শনিবার। সকালে বগুড়া থেকে অগ্রসরমান ভারতীয় মেজর চন্দ্রশেখর, পশ্চিম দিনাজপুর বালুরঘাট থেকে নওগাঁ অভিমুখে অগ্রসরমান পিবি রায়ের নেতৃত্বে মিত্র বাহিনী ও মুক্তিবাহিনী নওগাঁয় প্রবেশ করে।
হানাদার বাহিনীর তখন আর করার কিছুই ছিলনা। ফলে প্রায় দুই হাজার পাকসেনা নওগাঁ কেডি স্কুল থেকে পিএম গার্লস স্কুল ও হাসপাতাল, সরকারী গার্লস স্কুল, থেকে শুরু করে পুরাতন থানা চত্ত্বর ও এসডিও অফিস থেকে শুরু করে রাস্তার দু’পাশে মাটিতে অস্ত্র রেখে সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে নতমস্তকে আত্নসমর্পণ করে। তৎকালিন নওগাঁ মহকুমা প্রশাসক সৈয়দ মার্গুব মোরশেদ মুক্তি বাহিনী ও মিত্র বাহিনীকে স্বাগত জানান।
হানাদার মুক্ত করার পর নওগাঁর মুক্তিযোদ্ধারা বিজয় উল্লাসে ‘জয়বাংলা’ ধ্বনি দিতে দিতে এসডিও অফিস চত্বরে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন এবং উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধারা পতাকার প্রতি সালাম জানিয়ে সম্মান প্রদর্শন করে। নওগাঁ হানাদারমুক্ত হয় ১৮ ডিসেম্বর। পরে আত্মসমর্পন কারীদেরকে ঢাকার দিকে পাঠিয়ে দেয়।
মুক্তিযোদ্ধা আফজাল হোসেন জানান, সারা দেশে ১৬ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত হলেও নওগাঁয় মুক্ত হয়েছিল ১৮ ডিসেম্বর। প্রায় ২ হাজার পাকিস্থান সৈন্য আমাদের কাছে সারেন্ডার করবে না বলে জানিয়ে দেয়। আমরা কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে তাদেরকে ঘিরে রাখি। শহরের বিভিন্ন রাস্তায় জয় বাংলার শ্লোগান দিই আর প্রদক্ষিণ করি।
তাদেরকে যখন সারেন্ডার করতে বলি তখন তারা বলে আমরা মিত্র বাহিনীর কাছে সারেন্ডার করব কিন্তু মুক্তিবাহিনীর কাছে সারেন্ডার করব না। বাধ্য হয়ে আমাদের অবস্থান নিতে হয়। বাধ্য হয়ে আমাদের অগ্রগামী কয়েকজন সহযোদ্ধা নার্গিস, ওয়াহাব, জালাল হোসেন চৌধুরীর নেতৃত্বে এসডিও অফিসে স্বাধীন পতাকা উত্তোলন করা হয়।
বগুড়া থেকে মিত্র বাহিনী আসার পর এসডিও অফিস থেকে শুরু করে রাস্তার দু’পাশে মাটিতে অস্ত্র রেখে সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে নতমস্তকে আত্নসমর্পণ করে। তৎকালিন নওগাঁ মহকুমা প্রশাসক সৈয়দ মার্গুব মোরশেদ মুক্তি বাহিনী ও মিত্র বাহিনীকে স্বাগত জানান।
হানাদার মুক্ত করার পর নওগাঁর মুক্তিযোদ্ধারা বিজয় উল্লাসে ‘জয়বাংলা’ ধ্বনি দিতে দিতে এসডিও অফিস চত্বরে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন এবং উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধারা পতাকার প্রতি সালাম জানিয়ে সম্মান প্রদর্শন করে। নওগাঁ হানাদারমুক্ত হয় ১৮ ডিসেম্বর। পরে আত্মসমর্পন কারীদেরকে ঢাকার দিকে পাঠিয়ে দেয়।
মুক্তিযোদ্ধা গোলাম সামদানি জানান, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক আব্দুল জলিলের নির্দেশে তার অনুসারী জালাল হোসেন চৌধুরীর নেতৃত্বে ফতেপুর স্কুলে মিটিং করি আমরা পাক সেনাদের বিরুদ্ধে আক্রমনের। সারা শহর আমরা তাদেরকে ঘিরে রাখি।
১৭ ডিসেম্বর সকালে নওগাঁ শহরে পাক সেনাদের আক্রমণ করি। সন্মুখ যুদ্ধ চলে তারা হাসপাতালে মাঝখানে ছোট যমুনা নদী আমরা নদীর ওপারে খলিশাকুড়ী। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত যুদ্ধ চলে এতে পাক সেনাদের ছোড়া শেলে আমাদের ৫জন মৃত্যুবরন করে।
আমিও আহত ছিলাম। যুদ্ধ বিরতি দিয়ে তাদেরকে ঘিরে রাখি। পরদিন সকালে এসডিও অফিসে তারা আমাদের কাছে আত্নসমর্পন করে। তখন আমরা ওই অফিসে পতাকা উড়িয়ে জয় বাংলা শ্লোগান দিয়ে মুখরিত করি।


প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৮, ২০২২ | সময়: ৪:৫৯ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ