সেমির লড়াইয়ের অপেক্ষা

সানশাইন ডেস্ক : ইতিহাসের অন্যতম সেরা বিশ্বকাপ চলছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারে। তবে অঘটন ঘটন, চমক কিংবা মাঝারি শক্তির দলগুলোর চমকের দিক দিয়ে ২২তম বিশ্বকাপই যে সেরা তাতে সন্দেহ নেই কারও। এখানেই ফুটবলের সৌন্দর্য, স্বার্থকতা। মরুর বুকের এই রোমাঞ্চ, নাটকীয়তা অবশেষে শেষের পথে। আর মাত্র চারটি ম্যাচ। এর পরই পর্দা নামবে বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রীড়া আসরের। এর আগে হবে দু’টি সেমিফাইনাল, একটি তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচ ও ফাইনাল মহারণ।
ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের হাইভোল্টেজ ম্যাচ দিয়ে শনিবার রাতে শেষ হয়েছে কোয়ার্টার ফাইনালের ধুন্ধুমার লড়াই। শেষ আট থেকে সেমিফাইনালের টিকিট কেটেছে চারটি দল। আর বিদায় নিয়েছে আরও চারটি দল। ফাইনালের টিকিট কাটার লড়াইয়ে প্রথম সেমিফাইনালে হট ফেভারিট আর্জেন্টিনার মুখোমুখি হবে ২০১৮সালে রাশিয়া বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলা ক্রোয়েশিয়া। কাতারের রাজধানী দোহার লুসাইল স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার রাত ১টায় হবে এই দ্বৈরথ। পরের দিন অর্থাৎ বুধবার দ্বিতীয় সেমিফাইনালে বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের মুখোমুখি হবে চমক দেখানো আফ্রিকান দল মরক্কো। রাত ১টায় আল খোরের আল বায়াত স্টেডিয়ামে হবে ম্যাচটি। দুই সেমির বিজয়ী দল ১৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় ফাইনাল মহারণে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। সেমিতে হেরে যাওয়া দু’দল ১৭ ডিসেম্বর খেলবে সান্তনার স্থান নির্ধারণী ম্যাচে।
এবার ইংলিশদের হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠেছে ফ্রান্স। চার বছর আগে ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে দুর্দান্ত খেলে চ্যাম্পিয়ন হয় কোচ দিদিয়ের দেশমের দল। এবার এনগালো কান্টে, পল পোগবার মতো তারকা মিডফিল্ডার ও করিম বেঞ্জামার মতো বিশ্বখ্যাত ফরোয়ার্ডকে চোটের কারণে পায়নি ফরাসিরা। এর পরও একঝাঁক তরুণ ও পরীক্ষিত ফুটবলার চোখ ধাঁধানো ধারাবাহিক পারফরমেন্স প্রদর্শন করে চলেছে। রক্ষণভাগে কিছুটা ঘাটতি থাকলেও সেটা মাঝমাঠ ও আক্রমণভাগের তারকারা অসাধারণ মুন্সিয়ানায় পুষিয়ে ফরাসিরা। এখন তাদের সামনে টানা দ্বিতীয়বার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার হাতছানি। বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবশেষ রেকর্ড সর্বোচ্চ পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল টানা দুইবার জিতেছে সোনার ট্রফি। সেটা কিংবদন্তি পেলের আমলে অর্থাৎ ১৯৫৮ ও ১৯৬২ বিশ্বকাপ।
৬০ বছর পর সেই কীর্তি স্পর্শ করার চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ ফ্রান্সের সামনে। সেই লক্ষ্যে আপাতত তাদের পেরুতে হবে মরক্কো বাধা। এই ম্যাচ জিততে পারলে টানা দ্বিতীয়বার ফাইনালে পৌঁছে যাবে ফরাসিরা। সেই সঙ্গে টানা দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগও চলে আসবে। শুধু তাই নয়, ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপের মতো এবারও ফ্রান্স ও ক্রোয়েশিয়ার মধ্যে ফাইনাল হওয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনা আছে। দল দু’টি সেমিতে নিজ নিজ ম্যাচ জিতলেই চার বছর আগের ফাইনালের পুনরাবৃত্তি হয়ে যাবে। আগেরবার ফাইনাল মহারণে ক্রোয়েশিয়াকে ৪-২ গোলে হারিয়ে নিজেদের ইতিহাসে দ্বিতীয়বার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয় ফ্রান্স। আর প্রথমবার ফাইনালে উঠে হৃদয় ভাঙার ব্যথায় কাতর হতে হয় মডরিচ, পেরেসিচদের। এবার ফরাসিদের মতো ক্রোয়েটদেরও টানা দ্বিতীয়বার ফাইনাল খেলার হাতছানি। দু’দলই যদি সেমিতে জিততে পারে তাহলে ক্রোয়েশিয়ার সামনে সুযোগ আসবে আগেরবারের ফাইনালে হারের প্রতিশোধ নেয়ার। সেটা করতে পারলে প্রথমবার বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদও পেয়ে যাবে লুকা মডরিচের দল।
ফুটবলের সর্বোচ্চ আসরে ৩৬ বছরের শিরোপাখরা ঘোচানোর মিশনে আছে আর্জেন্টিনা। গত বিশ্বকাপের রানার্সআপ ক্রোয়েশিয়ার লক্ষ্য থাকবে এবার শেষ হাসি হাসার। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের সামনে শিরোপা ধরে রেখে ইতিহাস গড়ার হাতছানি। আফ্রিকার প্রথম দল হিসেবে সেমিতে ওঠা মরক্কো চাইবে স্বপ্নময় যাত্রাকে আরেকধাপ এগিয়ে নিতে। অনেক হিসাবনিকাশ আর ওলটপালটের বিশ্বকাপে এখন শেষ রোমাঞ্চের অপেক্ষা। ইতোমধ্যে লিওনেল মেসি, কিলিয়ান এমবাপে বাদে সব সুপারস্টারই চোখের জলে তল্পিতল্পা গুছিয়ে কাতার ছেড়েছেন। এর মধ্যে অন্যতম ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো, নেইমার, হ্যারি কেন, ভার্জিল ভ্যান ডাইক। মেসি, এমবাপের শেষটা কেমন হয় এখন সেটাই দেখার। তবে এটা নিশ্চিত মেসি, এমবাপে, মডরিচ কিংবা হাকিমি এদের যে কোনো একজন বাদে বাকি তিনজনের শেষটাও হবে চোখের জলে। কেননা শেষ পর্যন্ত সোনার ওই ট্রফিটা যে একজনই উঁচিয়ে ধরার সুযোগ পাবেন।


প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৩, ২০২২ | সময়: ৫:৫১ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ