ইরানে হিজাব আইন পরিবর্তনের ইঙ্গিত

সানশাইন ডেস্ক: ইরানে দুই মাসের বেশি সময় ধরে চলা বিক্ষোভের মধ্যে কয়েক দশকের পুরানো হিজাব আইন সংস্কারের ইঙ্গিত দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আইনটির বিষয়ে ইরানের অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ জাফর মোনতাজেরি গত শনিবার এক সংবাদ সংস্থাকে বলেন, ‘‘নারীদের মাথা ঢেকে রাখা বিষয়ক আইনে কোনও পরিবর্তন প্রয়োজন কিনা সে বিষয়টি নিয়ে ইরানের পার্লামেন্ট এবং বিচারবিভাগ উভয়ই কাজ করছে।”
হিজাব আইনে কী ধরনের সংস্কার হতে পারে সে বিষয়ে তিনি কোনও আভাস দেননি বলে জানিয়েছে দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকা। তবে মোনতাজেরি বলেছেন, ‘‘গত বুধবার পর্যালোচনাকারী দল পার্লামেন্টের সাংস্কৃতিক কমিশনের সঙ্গে দেখা করেছে এবং আগামী এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে বৈঠকের ফলাফল পাওয়া যাবে।”
গত ১৬ সেপ্টেম্বর মাশা আমিনি নামে ২২ বছরের এক কুর্দি তরুণী তেহরানে নীতি পুলিশের হেফাজতে মারা যাওয়াকে কেন্দ্র করে ইরানে হিজাব বিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়। মারা যাওয়ার তিনদিন আগে ভাইয়ের সঙ্গে তেহরান গিয়ে নীতি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন মাশা। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি হিজাব ঠিকমত পরেননি।
মাশার পরিবারের দাবি, গ্রেপ্তারের সময় পুলিশ মাশার মাথায় তাদের লাঠি দিয়ে একাধিকবার আঘাত করে এবং তাদের গাড়িতে মাশার মাথা জোরে ঠুকে দেয়। আর তাতেই অজ্ঞান হয়ে কোমায় চলে যান মাশা। হাসপাতালে তিনদিন কোমায় থাকার পর মারা যান ওই তরুণী। পুলিশের দাবি তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
১৭ সেপ্টেম্বর নিজ শহরে মাশাকে দাফন করা হয়। তার দাফনের কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর মাশার মৃত্যুর বিচার চেয়ে সেখানে বিক্ষোভ হয়। যে বিক্ষোভ একে একে পুরো ইরান জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। ইরান সরকার কঠোর হাতে ওই বিক্ষোভ দমনের চেষ্টা করে। সরকার যত কঠোর হয়েছে বিক্ষোভে আগুন তত উসকে উঠেছে।
এই বিক্ষোভে নারীদের অংশগ্রহণ উল্লেখ করার মত। নারীরা নিজেদের হিজাব খুলে এবং কেউ কেউ তা আগুনে পুড়িয়ে দিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে। বিক্ষোভে অনেক মানুষ প্রাণ হারান। মাশা আমিনি হত্যার বিচার চেয়ে শুরু হওয়া বিক্ষোভ নারীদের স্বাধীনতার অধিকারের দাবি এবং ইরানের বর্তমান সরকার বিরোধী বিক্ষোভে পরিণত হয়।
প্রথমে স্বীকার না করলেও ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী পরে স্বীকার করেছে, বিক্ষোভে তাদের সদস্যসহ মোট ২০০ জন নিহত হয়েছেন। যদিও জাতিসংঘ ও একাধিক মানবাধিকার সংস্থা বলছে, তৃতীয় মাসে পড়া এ বিক্ষোভ এরই মধ্যে তিনশর বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। দেশের বাইরেও ইরানের চলমান বিক্ষোভের পক্ষে জনমত গড়ে উঠেছে। অনেকেই প্রকাশ্যে বিক্ষোভের পক্ষে তাদের সমর্থন জানাচ্ছেন।
ফলে ইরান সরকারের উপর চাপ বাড়ছে। শনিবার ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিও টেলিভিশনে এক বক্তৃতায় বলেছেন, ইরানের প্রজাতন্ত্র ও ইসলামিক বুনিয়াদ সাংবিধানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত। ‘‘কিন্তু সংবিধান বাস্তবায়নের যে পদ্ধতি রয়েছে সেখানে নমনীয় হওয়া যেতে পারে।” ১৯৭৯ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ইরানে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত সরকারকে উৎখাত করে ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠার চার বছর পর ১৯৮৩ সালের এপ্রিল মাসে দেশটিতে আইন করে নারীদের জন্য হিজাব বাধ্যতামূলক করা হয়।
নারীরা হিজাব ঠিকমত পরছেন কিনা তা দেখতে ১৫ বছর আগে দেশটিতে নীতি পুলিশ ইউনিটের কার্যক্রম শুরু হয়। এই ইউনিট প্রথমে নারীদের হিজাবের বিষয়ে সতর্ক করে দিত। কিন্তু দিন দিন তাদের ক্ষমতা বাড়তে থাকে এবং এক পর্যায়ে তারা এমনকী হিজাব নিয়ে ধরপাকড় ও গ্রেপ্তার করা শুরু করে। যার শিকার হয়েছিলেন মাশা আমিনি।
মাশার মৃত্যু ঘিরে বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর অনেক নারী ওই বিক্ষোভের প্রতি নিজেদের সমর্থন জানাতে হিজাব পরা বন্ধ করে দিয়েছেন বলেও জানায় দ্য গার্ডিয়ান। বিশেষ করে ফ্যাশান সচেতন তেহরানের উত্তরাঞ্চলের নারীরা।


প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৮, ২০২২ | সময়: ৬:৩৫ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ