সর্বশেষ সংবাদ :

জরিমানায় পাত্তা দেন না পুকুর খননকারিরা 

বাগমারা প্রতিনিধি:
রাজশাহীর বাগমারায় অবৈধ ভাবে কৃষি জমিতে পুকুর খননে এলাকার কৃষকরা বিপাকে পড়েছেন। যত্রতত্র পুকুর খননে ফসলী জমি কমছে। এছাড়া বিল-খালে পুকুর খননে আবাদী জমি জলবদ্ধতায় ফসল করতে না পেরে কৃষকরা বিড়াম্বনায় রয়েছে। কৃষি জমির প্রকৃতি পরিবর্তন করে পুকুর খনন করায় আবাদি জমির পরিমান কমে যাচ্ছে এবং চাষাবাদ হুমকীর মুখে পড়ছে।

 

এদিকে অবৈধবভবে জোর পূর্বক পুকুর খননের অভিযোগে শনিবার(১২নভেম্বর) বিকালে উপজেলার গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের রামরামা গ্রামে অভিযান পরিচালনা করে দু’টি ভেকু মেশিন জব্দ করা হয়। এ সময় পুকুর খননকারী এবাদুলল হক, মোস্তাফিজুর, মিঠুন পালিয়ে যান। ঘটনাস্থলে ভেকু চালকসহ দু’ জনকে ভ্রাম্যমান আদালতে হাজির করা হয়। তারা নিজের অপরাধ স্বীকার করায় তাদের অপরাধী সাব্যাস্ত করে ৪ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ভ্রাম্যমান আদালতে নির্বাহী ম্যাজিস্টেটের দায়িত্ব পালন করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইদা খানম।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার রামরামা দেবত্তপাড়া নিচে যশোর বিলের বটতলায় তিন ফসলি ৭০ বিঘা জমিতে জোরপূর্বক অবৈধ ভাবে পুকুর খননের জন্য সর্ব প্রস্ততি নিয়ে দুটি ভেকু মেশিন নামায় স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এই বিষয়য়ে স্থানীয় কৃষক তাদের ভোগ দখলীয় আবাদি তিন ফসলি জমিতে জোরপূর্বক অবৈধ পুকুর খনন বন্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বাগমারা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নিকট গত ১১/১১/২২ ইং তারিখে গোলেমান ফৌজদার, বাদেশ আলী সহ এলাকার ৩৩ জন কৃষককের স্বাক্ষরিত একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

 

 

আবাদি তিন ফসলি জমিতে জোরপূর্বক অবৈধভাবে পুকুর খননে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বাগমারা থানার পুলিশের সহায়তায় স্থানীয় প্রশাসন বিবাদী গণের বিরুদ্ধে শনিবার বিকালে অভিযান চালিয়ে ভ্রাম্যমান আদালতে ব্যবস্থা নিয়েছেন।

এদিকে বাগমারা উপজেলায় আবাদি কৃষি জমিতে অবৈধ পুকুর খনন বন্ধে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকলেও বর্ষা মৌসুমের পানি নেমে যাওয়ার পর এলাকায় পুকুর খননের হিড়িক পড়েছে। পুকুর খননকারী চক্র প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন কৌশলে পুকুর খনন অব্যাহত রেখেছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ উপজেলা প্রশাসন, থানা পুলিশ ও দলীয় কিছু নেতার নাম ভাঙ্গিয়ে পুকুর খননে নেমে পড়েছে স্থানীয় একটি চক্র।

 

অভিযোগকারীদের দাবি উপজেলার বড়বিহানালী, মাড়িয়া ও গোয়ালকান্দি ইউনিয়নে এরি মধ্যে পুকুর খনন অব্যাহত রয়েছে। পুকুর যারা কাটেন তাদের কোটির টাকার ব্যবসা হয়। সেখানে দুই চার হাজার টাকা জরিমানা একেবারেই সামান্য। এসব জরিমানা গায়েই লাগান না পুকুর খননকারীরা। জরিমানা করলে অন্তত কয়েক লাখ করতে হবে অথবা ভেকু মেশিন ধ্বংষ করলে এই ব্যবসা বন্ধ হবে।

 

বড়বিহানালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহমুদুর রহমান মিলন জানান, গত ২/৩ দিন আগে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে তিনি এক গ্রাম পুলিশকে বিহানালী বাজারের সামনের বিলে পুকুর খনন দেখতে যেতে বলেন। এ সময় পুকুর খননকারীর আকরাম হোসেন ও তার সহযোগী আমিনুল ইসলাম ওই গ্রাম পুলিশকে ঘটনাস্থলে পিটিয়ে আহত করে। বিষয়টি তাৎক্ষনিক উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানালে তিনিই অভিযোগ চান। পরে তিনি ভ্রাম্যমান আদালত না দিয়ে থানায় যাবার কথা বলেন। এসময় চেয়ারম্যান হতভম্ব হয়ে পড়েন। পরে থানা পুলিশ গিয়ে পুকুর খনন বন্ধ করলেও পরে আবার চালু হয়। বিষয়টি পুনরায় ইউএনও সাইদা খানমকে জানালে তিনি একই ভাবে থানায় যোগাযোগ করতে বলেন। এমতবস্থায় পুকুরটি খনন কাজে এলাকাবাসী হতভম্ব হয়ে পড়েছেন।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইদা খানম জানান, উপজেলায় অবৈধ পুকুর খনন করার কোন সুযোগ নেই। অভিযোগ পেলেই অভিযান ও ভ্রাম্যমান অব্যাহত থাকবে। এছাড়া বড়বিহানালী ইউনিয়নে পুকুর খননে অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু অভিযুক্তরা পালিয়ে যাওয়ায় ব্যবস্থা নেয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন তিনি। এ বিষয়ে বাগমারা থানাকে যথাযত ব্যবস্থা নিতে বলেছেন বলে জানান তিনি।

সানশাইন/ শামি

 


প্রকাশিত: নভেম্বর ১২, ২০২২ | সময়: ১০:০৬ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine