সান্তাহার স্টেশনে আত্মহত্যা করতে আসা শিক্ষিকাকে বাঁচালো পুলিশ

আদমদীঘি (বগুড়া) প্রতিনিধি :বগুড়ার আদমদীঘির সান্তাহার জংশন স্টেশনে আত্মহত্যা করতে এসে ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দেয়ার সময় আফরোজা রুমা নামের এক সহকারি শিক্ষকার প্রাণরক্ষা করেছেন রেলপুলিশ। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২টায় চিলাহটি থেকে খুলনাগামী রুপসা এক্সপ্রেস আন্ত:নগর ট্রেনটি সান্তাহার স্টেশনের ৩ নম্বর প্লাটফরমে আসার পর ঘটনাটি ঘটে। আত্মহত্যার কারন জানাতে চাইলে শিক্ষিকা আফরোজা রুমা জানান, ১৯৯৯ সালের ২১জুন সহকারি শিক্ষক হিসাবে চাকরিতে যোগ দেন। বদলীজনিত কারনে ২০০৯ সালে সুলতানপুর (উত্তর) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। এরপর ২০১৩ সালে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার হিসেবে ওয়াহেদুল্লাহ প্রামানিক যোগ দেয়ার পর থেকে তাকে বিভিন্ন রকম কু-প্রস্তাব ও অনৈতিক সম্পর্কের জন্য ইঙ্গিত দিতেন। শিক্ষিকা আফরোজা রুমার স্বামী শহিদুল ইসলাম মারা যাওয়ার পর থেকে একই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাসকিয়াতুন নেছা, সহকারি শিক্ষক উম্মুল ওয়ারাসহ আরো কয়েকেজন সহকর্মীরা তাকে মানষিকভাবে নির্যাতন শুরু করেন। এদিকে সেই সুযোগে ওয়াহেদুল্লাহ প্রামানিক তাকে নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কথা বলে রাস্তাঘাটেও অনৈতিক সম্পর্কেও জন্য প্রস্তাব দেন। এমতাবস্থায় ওই স্কুল থেকে তিনি বদলি নেওয়ার সীদ্ধান্ত নেয়। বিষয়টি জানার পর ওয়াহেদুল্লাহ প্রামানিক উপজেলা শিক্ষা অফিসারের পাসওয়ার্ড ক্লোন করে শিক্ষিকা আফরোজা রুমাসহ আরো কয়েকজনের প্রোফাইলে প্রবেশ করে আপলোডকৃত তথ্য মুছে দেন। ফলে তিনি বদলীর আবেদন করতে

পারছিলেন না। এ সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি গত ২৫ সেপ্টেম্বর নওগাঁ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার ওয়াহেদুল্লাহ প্রামানিকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন। এর প্রেক্ষিতে গত ২৬ অক্টোবর উপজেলা শিক্ষা অফিসে তাকেসহ বিভিন্ন স্কুলের প্রায় ২০ জন প্রধান শিক্ষক ও সহকারি শিক্ষকদের ডেকে বিষয়টি তদন্ত করেন উপজেলা শিক্ষা অফিসার ইতিয়ারা পারভীন ও সহকারি উপজেলা শিক্ষা
অফিসার ইব্রাহীম খলিলুল্লাহ। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ওয়াহেদুল্লাহ প্রামানিক। এসময় শিক্ষিকা আফরোজা রুমা ও তার ছেলেকে সেখানে অবরুদ্ধ করেন। পরে সেখান থেকে বেরিয়ে আসার পর তিনি হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এরপর সোমবার দুপুর ৩টায় তার নিজ ফেসবুক একাউন্টে তার মৃত্যুর জন্য ওয়াহেদুল্লাহ প্রামানিক, প্রধান শিক্ষক তাসকিয়াতুন নেছাসহ কয়েকজনকে দায়ী করে একটি স্ট্যাটাস দেন। পরের দিন মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২টায় চিলাহটি থেকে খুলনাগামী রুপসা এক্সপ্রেস আন্ত:নগর ট্রেনটি সান্তাহার স্টেশনের ৩ নম্বর প্লাটফরমে পৌঁছনোর সময় তিনি আত্মহত্যার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ার চেষ্টাকালে রেলওয়ে থানা পুলিশের দায়িত্বরত এক সদস্য তাকে রক্ষা করেন। সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার ওয়াহেদুল্লাহ প্রামানিক মুঠোফোনে ওই শিক্ষিকার অভিযোগগুলো অস্বীকার করে জানান, তিনি ফেসবুকে আমাদের নামে স্ট্যাটাস দেওয়ার পর
থানায় জিডি করা হয়েছে। তাছাড়া শিক্ষা অফিসারের পাসওয়ার্ড ক্লোন করে কোনো তথ্য মুছে ফেলার সুযোগ নেই। তার সাথে আমার খুব কমই দেখা হয়, সুতরাং তাকে উত্যাক্ত করার প্রশ্নই উঠেনা। তার অভিযোগের তদন্ত চলছে, তা শেষ হলেই বোঝা যাবে আমি দোষি নাকি নির্দোষ। সান্তাহার রেলওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোক্তার হোসেন জানান, ওই শিক্ষিকাকে হস্তান্তরের জন্য তার অভিভাবক এবং জেলা শিক্ষা অফিসারকে জানানো হয়েছে।


প্রকাশিত: নভেম্বর ৮, ২০২২ | সময়: ৬:৫৪ অপরাহ্ণ | সানশাইন