সর্বশেষ সংবাদ :

গোদাগাড়ীর সেই কলেজ শিক্ষক সিরাজ বহিস্কার

গোদাগাড়ী প্রতিনিধি: রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার রাজাবাড়ী ডিগ্রী কলেজের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক প্রতারক সিরাজুল ইসলামকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। এরপর দ্বিতীয় কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান কর হয়েছে এবং গত ১ সপ্তাহ ধরে কলেজে অনুপস্থিত রয়েছেন বলেছেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কলেজ অধ্যক্ষ সেলীম রেজা।
গত বছর ২৬ জুলাই সিরাজুল ইসলামকে কারণ দর্শনোর নোটিশ দেয়া হয়। অভিযোগ উঠে, শিক্ষকদের কথপোকথন গোপনে রেকডিং এবং বাইরে প্রচার করে স্থানীয় জনগনের মাঝে ও কলেজে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছেন যার ফলে অধ্যক্ষ লাঞ্চিত হতে হয়েছে। সহকারি অধ্যাপক ফাতেহা ইয়াজ বেগমের নিকট হতে ১ লাখ উৎকোচ দাবী করেছেন এবং সাদা কাগজে স্বাক্ষর করে নিয়ে চাকুরী চ্যুতির হুমর্কী প্রদান করেছেন।
চা বিক্রেতা হাবিবুর রহমান জনির নিকট হতে চাকুরী দেয়ার নাম করে প্রতারনার মাধ্যমে সাড়ে ৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া, দায়িত্ব পালনে অনিহাসহ তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি অভিযোগ আনা হয়েছে। উত্তর সন্তষজনক না হওয়ায় তকে গত ৬ আগষ্ট সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এ সময় তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যলয়ের নীতিমালা অনুয়ায়ী জীবন ধারনের জন্য মূল বেতনের ৫০ ভাগ বেতন পাচ্ছেন। এদিকে কলেজের ৯ জন সহকারী অধ্যপক ওই প্রতারক শিক্ষক সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক মাহমুদ আখতার তার (সিরাজুল) বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন যে প্রতরনার মাধ্যমে তার ও স্ত্রী নামে সোনালী ব্যাংক, গোদাগাড়ী শাখা হতে থেকে ২ লাখ টাকা এবং গোদাগাড়ী উপজেলা বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারী কল্যান সমিতি থেকে ৫ লাখ ২৬ হাজার উত্তোলন করেছেন প্রতারক সিরাজুল ইসলাম। এখন টাকাও পরিশোধ করছেন না, মাসিক কিস্তিও দিচ্ছেন না। ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক আবুল হাসান রাব্বি তার লিখিত অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করেছেন, তাকে ভুল বুঝিয়ে জামিনদার করে সোনালী ব্যাংক, গোদাগাড়ী শাখা হতে ২০ লাখ টাকা লোন উত্তোলন করেছেন। প্রতারক অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম নিজ নামে সোনালী ব্যাংক, গোদাগাড়ী শাখা থেকে ২ লাখ টাকা ক্ষুদ্র লোন উত্তোলন করেছেন। ওই সব লোনের ব্যাংকে কিস্তি পরিশোধ করছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।
রাজাবাড়ী ডিগ্রী কলেজ শিক্ষক কল্যাণ সমিতি থেকে ২ লাখ টাকা লোন নিয়েছেন বলে অধ্যক্ষ সেলীম রেজা জানান। এ ছাড়া নিজ নামে সিরাজুল ইসলাম গোদাগাড়ী উপজেলা বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারি কল্যান সমিতি থেকে ৬ লোন উত্তোলন করেছেন। ওই লোন পরিশোধ করেননি এবং কিস্তি পনিশোধ না করায় সুদসহ ৭ লাখ টাকা হয়েছে।
তার বিরুদ্ধে পিয়ন পদে চাকুরী দেয়ার নাম করে ৩ লাখ টাকা এবং ঢাকায় বিভিন্ন সময় বড়, বড় মাছ, মাংশ, আম, গম, ছোলা বিভিন্ন মৌসুমি জিনিস কিনে দেয়ার নাম করে আরও ২ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়ার লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতারনার স্বীকার হয়ে চাকুরী না পেয়ে, সব হারিয়ে পথে পথে ঘুরছেন গরীব চা বিক্রেতা হাবিবুর রহমান জনি। জনি কলেজের পাশে একটি ছোট দোকানে চা বিক্রি করতো। প্রভাষক চা পান করতে গিয়ে প্রতারনার ফাঁদ পাতে গরীব জনির সাথে।
কলেজ গর্ভনিং বডির সদস্য ও রাজাবাড়ীহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মনিরুজ্জামান জানান, প্রভাষক সিরাজুল ইসলাম কলেজে পিয়ন পদে চাকুরী দেয়ার নাম করে ২০১৬ ইং সালে জনির নিকট হতে ৩ লাখ টাকা উৎকোচ গ্রহন করেছেন। সে সাথে বিভিন্ন সময়ে ঢাকায় বড়, বড় মাছ, মাংশ, আম, গম, ছোলাসহ বিভিন্ন জিনিস ক্রয় করে সিরাজুলকে দিয়েছেন এতে তার দেড় লক্ষ থেকে ২ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে বলে জনি আমার কাছে স্বীকার করেছে। আমি তাকে বলেছি এ একটা শিক্ষক নামধারি প্রতারক, সে তোমাকে চাকুরি দেয়ার ক্ষমতা রাখে না, তুমি চাকুরি পাবে না তার উপর চাপ সৃষ্টি করে টাকা ফেরত পাওয়ার চেষ্টা কর। তার বিরুদ্ধে জনি কলেজ অধ্যক্ষ ও সভাপতি নিকট লিখিত অভিযোগ করেছেন বলে তিনি স্বীকার করেন।
এ ব্যপারে প্রতারক প্রভাষক সিরাজুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, জনির নিকট হতে টাকা নেয়া হয়েছিল তা পরিশোধ করে দিযেছি, সে কোন টাকা পাবে না। আগামী ২৩ ডিসেম্বর ১ লাখ টাকা ফেরত দিবেন বলে সিরাজুল ইসলাম লিখিত মুচলেকা দিয়েছেন কেন? তার সঠিক উত্তর দিতে পারেন নি। আপনি বেতন পান ৩৫ হাজার ৩ শ টাকা, আর ৪৩ লাখ লোন নিয়েছেন, কিস্তি দেন ৪৩ হাজার টাকা। আপনি লোন নেয়ার ক্ষেত্রে প্রতারণা করেছেন বলে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমি নিয়মিত কিস্তি পরিশোধ করচ্ছি।
রাজাবাড়ি ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ সেলীম রেজা এ প্রসঙ্গে বলেন, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে জনি লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন। আগামী ১২ ডিসেম্বর ১ লাখ টাকা ফেরত দেয়ার কথা বলে লিখিত দিয়েছেন, অভিযোগের প্রমান পেয়েছি। গত ১ সপ্তাহ থেকে অনুমতি ছাড়াই কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত হয়েছে। তাকে একাধিকবার কারন দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু সন্তষজনক উত্তর পাওয়া যায় নি। তাকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত প্রক্রিয়া চলছে।
কলেজ গর্ভনিং বডির সভাপতি, রাজশাহী জেলার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার শাহাদুল হক বলেন, অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি, বিভিন্ন কুচক্রীমহল তার পক্ষ নিয়ে কলেজের পরিবেশ নষ্ট করছেন, সবকিছু আইন মোতাবেক চলবে। এধরনের প্রতারকের শিক্ষকতা করার কোন যোগ্যতা নেই।


প্রকাশিত: নভেম্বর ৮, ২০২২ | সময়: ৫:৩৭ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ