সর্বশেষ সংবাদ :

দ্রুত খাদ্য সহায়তা চান চারঘাটের জেলেরা

চারঘাট প্রতিনিধিঃ

গত বৃহস্পতিবার (৭ অক্টোবর) মধ্যরাত থেকে সারাদেশের মত রাজশাহী চারঘাট উপজেলার পদ্মা নদীতেও ২২ দিনের জন্য ইলিশ মাছ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে বৃহস্পতি,শুক্রবার, শনিবার, রবিবার সোমবার নিষেধাজ্ঞার পাঁচ দিন পেরুলেও কোনো খাদ্য সহায়তা পাননি জেলেরা। তাই দ্রুত খাদ্য সহায়তার পাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জেলেরা।

নিষেধাজ্ঞার এই ২২ দিন ইলিশ ধরা, বিক্রি, মজুত, বাজারজাত ও পরিবহন নিষিদ্ধ থাকবে। এ সময়ে জেলেরা যেন নদীতে নেমে মাছ শিকার না করেন সেজন্য অভিযানও পরিচালনা করা হচ্ছে।

 

সরেজমিনে গত বৃহস্পতি,শুক্রবার, শনিবার, রবিবার চারঘাট উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, জেলেদের চোখে-মুখে চিন্তার ভাঁজ। অনেকেই নদীর পাড়ে বসে আছেন। কেউ কেউ তাঁদের ছেঁড়া জাল মেরামত করছেন। কেউ নদী থেকে নৌকা ডাঙায় তুলেছেন মেরামতের জন্য। আবার কিছু অসাধু জেলে চুরি করে মাছ ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

 

জেলেরা বলছেন, নিষেধাজ্ঞার সময় তাঁদের কষ্টের সীমা থাকে না। ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞার কারণে তাঁরা অন্য মাছ ধরতেও নদীতে নামতে পারেন না। অনেক জেলে পরিবার না খেয়ে দিন পার করে। নিষেধাজ্ঞার সময় সরকার থেকে খাদ্যসহায়তা দেওয়ার কথা থাকলেও সেটা এখনো পাননি তাঁরা। দ্রুত সময়ের মধ্যে খাদ্য সহায়তার দাবি জানান তাঁরা।

 

চারঘাট উপজেলা মৎস্য অফিস জানায়, এই উপজেলায় নিবন্ধিত মোট জেলে রয়েছেন ১ হাজার ১৪৯ জন। এর মধ্যে ইলিশ শিকারি জেলে রয়েছেন ৬৬৩ জন। নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেরা যেন নদী থেকে ইলিশ শিকারে না যান এজন্য গত বছর পৌরসভায় ১৯৮ জন, ইউসুফপুর ইউনিয়নের ১২৪ জন, সরদহ ইউনিয়নের ৮০ জন ও সদর ইউনিয়নে ১৬৮ জনসহ সর্বমোট ৫৭০ জন নিবন্ধিত জেলেকে ২০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। তবে এ বছর জেলেদের সহায়তার পরিমাণ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

 

উপজেলা সদরের জেলে তাজমুল হক বলেন, ২২ দিনের মাছ ধরা বন্ধ দিয়েছে ভালো কথা। আমরা নিষেধাজ্ঞার সময় মাছ ধরতে নদীতে যাব না। তাহলে খাব কী? সরকার প্রতিবছর জেলেদের ২০ কেজি করে চাল দেয়। যারা জেলে না, তারা চাল পায়। আমি ১৫ বছর ধরে মাছ ধরি নদী থেকে, আজ পর্যন্ত কোনো সহায়তা পাইনি। পেটে ভাত না থাকলে নদীতে তো চুরি করে হলেও নামতে হবে। সরকার ২২ দিনের খাবারের ব্যবস্থা করে দিলে মাছ ধরতে যাব না।

 

উপজেলার রাওথা এলাকার জেলে রফিকুল ইসলাম বলেন, ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে নদী থেকে মাছ শিকার করছি। সেই মাছ বাজারে বিক্রি করে সংসার চালাই। মাছ ধরা বন্ধের সময় সরকার থেকে ২০ কেজি চাল বরাদ্দ দেওয়া হলেও আমরা পাই ১০-১৫ কেজি। তা দিয়ে ৭ দিনের বেশি চলেনা। আরও বেশি চাল দেওয়ার পাশাপাশি কাঁচাবাজার কেনার জন্য নগদ টাকা দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

 

উপজেলার সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মতিউর রহমান মতি বলেন, প্রতিটি জেলে পরিবারেই সদস্য সংখ্যা বেশি৷ চালের বরাদ্দের পরিমাণ আরো বাড়ানো উচিত। ২০ কেজি চালে তাঁদের নিষেধাজ্ঞার অর্ধেক সময়ও চলবেনা। এছাড়াও ইলিশ শিকারি সকল জেলে যেনো চাল বরাদ্দ পায় সেটাও মৎস্য বিভাগকে নিশ্চিত করতে হবে।

 

চারঘাট উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ওয়ালিউল্লাহ মোল্লাহ বলেন, নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেরা যেন নদীতে না নামেন তার জন্য আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা মৎস্য বিভাগের মোবাইল টিম নদীতে অভিযানে থাকবে।

 

তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যেই ইলিশ শিকারি সকল জেলেকে খাদ্যসহায়তা দেওয়ার জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যেই জেলেদের বরাদ্দকৃত খাদ্যসহায়তা পৌঁছে দেওয়া হবে। বরাদ্দের পরিমাণ ২০ কেজি থেকে বাড়িয়ে ২৫ কেজি করার প্রস্তাব দিয়েছি আমরা।

 

 

সানশাইন/তৈয়ব


প্রকাশিত: অক্টোবর ১০, ২০২২ | সময়: ৮:৪৩ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine