সাম্রাজ্যবাদী ও দখলদার অপশক্তির মূর্তিমান এক আতঙ্কের নাম নজরুল 

স্টাফ রিপোর্টার

সাম্রাজ্যবাদী ও দখলদার অপশক্তির মূর্তিমান এক আতঙ্কের নাম নজরুল। মূলত ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের স্বাধীনতা সংগ্রামে নজরুলের প্রত্যেকটি শব্দ এক একটি পারমাণবিক বোমার কাজ করেছে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামীরা নজরুলের কবিতায় দারুণভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। এমনকি স্বাধীনতা সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর যে স্লোগানটি পারমাণবিক বোমার চেয়ে বেশি কার্যকর ছিল, সেই ‘জয় বাংলা’ স্লোগানটি নজরুলের কবিতা থেকে নিয়েছিলেন সর্বকালের সেরা এই বাঙালি নেতা।

 

 

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এঁর ৪৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসনের আয়োজনে শিল্পকলা একাডেমিতে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ জাকীর হোসেন এসব কথা বলেন।

 

 

অল্প বয়সেই ইসলামের মৌলিক আচার-অনুষ্ঠানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পান বাংলা সাহিত্যের ধূমকেতু নজরুল, যা পরে তার সাহিত্যকর্মকে বিপুলভাবে প্রভাবিত করে। মূলত তিনিই সর্বপ্রথম বাংলাসাহিত্যে সফলতার সঙ্গে ইসলামী চেতনার চর্চা শুরু করেছেন। বাংলায় ইসলামী গানের যাত্রা শুরু হয়েছিল নজরুলের হাত ধরে। নিজস্ব ধর্মীয় চেতনা অক্ষুণ্ন রেখেও যে মানবতাবাদী হওয়া যায়, তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত কাজী নজরুল ইসলাম।

 

 

ইসলাম একটি সার্বজনীন জীবনব্যবস্থার নাম। ইসলামের সাম্যবাদী মন্ত্র অন্য যে কোনো তন্ত্রের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা ও স্বতন্ত্র। ইসলামের গণ ভিত্তিকে নজরুল মূল্যায়ন করেছেন এভাবে- ‘ইসলামের সত্যিকার প্রাণশক্তি; গণশক্তি, গণতন্ত্রবাদ, সার্বজনীন ভ্রাতৃত্ব ও সমান অধিকারবাদ। ইসলামের এই অভিনবত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব আমি তো স্বীকার করিই, যারা ইসলাম ধর্মাবলম্বী নন, তারাও স্বীকার করেন।’

 

 

উপমহাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে নজরুল যেসব কথা বলেছেন বা সেসব কাজ করেছেন, তেমনটি হাজার বছরের বাঙালির ইতিহাসে কেউই করতে বা বলতে পারেননি! সাম্যবাদ ও মানবিকতার বোধ জাগানো আহ্বান জানিয়ে নজরুল বলেছেন- ‘অবতার-পয়গম্বর কেউ বলেননি, আমি হিন্দুর জন্য এসেছি, আমি মুসলমানের জন্য এসেছি, আমি ক্রিশ্চিয়ানের জন্য এসেছি। তারা বলেছেন, আমরা মানুষের জন্য এসেছি- আলোর মতো, সকলের জন্য।’

 

 

তিনি বলেন ব্রিটিশ শাসকদের মনোরঞ্জনে যখন হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায় পা চাটতে ব্যস্ত। এমনকি পরস্পর একটি অসু¯’ প্রতিযোগিতা চলছিল- কার চেয়ে কে বেশি পা চাটতে পারে! তখন ধূমকেতুর মতো নজরুলের আবির্ভাব পারস্পরিক দ্বন্দ্ব ভুলে সাম্রাজ্যবাদের গদিতে আঘাত করার দুর্দান্ত সাহস জুগিয়েছিল। নজরুলের সাম্যবাদী অনেক সাহিত্যকর্ম তৎকালীন মুসলিম সমাজের গোঁড়া একটি অংশ সহ্য করতে পারেনি। তারা নজরুলকে কাফের আখ্যায়িত করেছিল।

 

 

 

 

অথচ নজরুলের প্রথম কাব্যগ্রš’ যেটির জন্য নজরুল সমগ্র বিশ্বসাহিত্যে নজরুল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত সেই ‘অগ্নিবীণা’র অর্ধেক কবিতাই ইসলামী আদর্শকে লালন করে লেখা কবিতা। এমনকি পরবর্তীতে নজরুল রচনা করেন মহানবীর (স.) জীবনীনির্ভর কাব্যগ্রš’ ‘মরু ভাস্কর’। নজরুল যে ধর্মীয় বিশ্বাসের দিক থেকে হিন্দু বা কাফের নন সে প্রসঙ্গে নিজেই বলেছেন-
‘কেউ বলেন আমার বাণী যবন, কেউ বলেন কাফের। আমি বলি ও দুটোর কোনোটাই না। আমি শুধু হিন্দু-মুসলমানকে এক জায়গায় ধরে নিয়ে হ্যান্ডশেক করানোর চেষ্টা করেছি, গালাগালিকে গলাগলিতে পরিণত করার চেষ্টা করেছি।’ এখানেই স্পষ্ট হয়ে গেছে নজরুলের প্রকৃত বিশ্বাসগত পরিচয়।

 

 

নজরুল উপমহাদেশের এমন একজন বলিষ্ঠ কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, দার্শনিক ও স্বাধীনতা সংগ্রামী যার মতো উদার ও স্ব”ছ দৃষ্টিভঙ্গি সম্পন্ন কোনো সাহিত্যিক এখনো পর্যন্ত পৃথিবার আলো দেখেনি, হোক সে মুসলমান, হোক হিন্দু, হোক বৌদ্ধ বা খ্রিস্টান! নিজেকে বিকিয়ে দিয়ে নয়, নিজের স্বতন্ত্র চিন্তা ও চেতনাকে সযত্নে লালন করে তিনি ঐক্যবদ্ধ একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছিলেন। নজরুল সমগ্র বিশ্বের আপামর মুক্তিকামী মানুষের হৃদয়ে চিরস্মরণীয়, বরণীয় হয়ে মহাকালের মহাবিস্ময় হিসেবে চিরভাস্মর হয়ে থাকবেন।

 

 

রাজশাহী জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল জলিল এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন নিউ গভঃ ডিগ্রী কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. অলিউল আলম।

 

সানশাইন / শাহ্জাদা মিলন

 

 

 


প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২২ | সময়: ৯:৫০ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine