সর্বশেষ সংবাদ :

কৃষি বিভাগের তত্বাবধায়নে ভোজ্য তেল ও পিঁয়াজ উৎপাদনে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ

নুরুজ্জামান,বাঘা : কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি। এ দেশে বড়-বড় কল কারখানা কিংবা খনিজ সম্পদ না থাকলেও, কৃষি খাতে যে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে সেটা সকলের জানা। গত দুই বছর পূর্বে দেশে পিঁয়াজ সংকট দেখা দিয়েছিল । এ দিক থেকে কিছুদিন আগে হঠাৎ করে সয়াবিন তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি হয়। তবে আগামিতে যাতে এ রকম ঘটনা পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সে জন্য ভোজ্য তেল ও পিঁয়াজ উৎপাদনের বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। তারই ধারাবাহিকতায় কৃষিতে চাঙ্গা হচ্ছে রাজশাহীর বাঘা উপজেলা।

অনুসন্ধ্যানে জানা গেছে, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভারত পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ করে পিঁয়াজ রপ্তানির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। সেই সময়ে বাজারে দেশি পিঁয়াজের মূল্য ছিল ৫০ টাকা কেজি। কিন্তু ভারতের পিঁয়াজ রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার অজুহাতে সেই মূল্য গিয়ে ঠেকে ২৫০ টাকাই। এতে পিঁয়াজের বাজারে চরম বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে কৃষি মন্ত্রণালয়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরকে দ্রুত পিঁয়াজ উৎপাদন বৃদ্ধির কথা জানায়। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মাত্র ২ বছরের মধ্যে প্রায় দশ লক্ষ মেট্রিক টন পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়াতে সক্ষম হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে প্রতি বছর দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ৩৫-৩৬ লাখ মেট্রিক টন। সেখানে গত বছর উৎপাদন হয়েছে ৩২ লাখ মেট্রিক টন। এই ঘাটতি মেটানোর জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন । তাঁরা উপজেলা পর্যায়ে কৃষকদের মাঝে বিনা মূল্যে পিঁয়াজের বীজ,সার ও কিটনাশক ক্রয়ের জন্য নগদ অর্থ প্রদান করছেন।এর ফলে পূর্বের যে কোন সময়ের চেয়ে দেশে এখন পিঁয়াজ উৎপাদন অনেক বেশি হচ্ছে।

এ বিষয়ে বাঘা উপজেলা কৃষি অফিসার শফিউল্লাহ সুলতান তাঁর ফেসবুক পেইজে লিখেছেন, পিঁয়াজ উৎপাদন বৃদ্ধির প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে বাঘা উপজেলায় ২২০ বিঘা জমিতে ১৭৬০ মেট্রিক টন গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু অনাবৃষ্টি ও প্রচন্ড খরায় গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের চারা উৎপাদন করা সত্যিই কঠিন ছিল। তবুও উপজেলা কৃষি বিভাগের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় প্রাকৃতিক সকল প্রতিবন্ধকতাকে মোকাবেলা করে পিঁয়াজের চারা উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছেন তারা। যার অংশ হিসাবে ইতোমধ্যে কিছু চারা জমিতে রোপণ করা শুরু হয়েছে এবং আগামী ১০ দিনের মধ্যেই বাকী চারা রোপণ করা সম্ভব হবে।

অপর দিকে কিছুদিন আগে হঠাৎ করে সয়াবিন তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ঘটে। এর পরিপ্রেক্ষিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে আবারো সয়াবিনের তেলের উপর নির্ভরতা কমিয়ে সরিষা আবাদ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমানে ভোজ্য তেলের প্রায় দশ শতাংশ পূরণ করে সরিষা’র তেল। আগামী ২ বছরের মধ্যে সরিষার আবাদ বৃদ্ধি করে ৫০ শতাংশ ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণ করা হবে স্থানীয় ভাবে। এতে সয়াবিন তেলের আমদানি কমবে এবং বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে নিশ্চিত করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

বাঘার আমোদপুর গ্রামের কৃষক মহাসিন আলী বলেন, বর্তমান সরকার কৃষি খাতে বীজ সরবরাহ ছাড়াও সার ও কিটনাশক ক্রয়ের জন্য যে ভাবে কৃষকদের আর্থিক সহায়তা দিচ্ছেন তা অতীতের কোন সরকার দেননি। এ দিক থেকে কৃষিতে বিপ্লব ঘটতে চলেছে। তিনি বলেন, এখন উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে শীতকালিন শাক-সবজি ও ফুলকপি পাওয়া যাচ্ছে গরম মৌসুমে । এটাও কৃষি বিভাগের চমকপদ উদভাবন ।

এ বিষয়ে দেশের অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, অর্থনীতিকে প্রাণবন্ত করতে হলে কৃষির বহুমুখীকরণ ও বাণিজ্যিক করণের কোন বিকল্প নেই। তাঁরা বলেন, বিশ্বে পিঁয়াজ উৎপাদনে প্রধান দেশ হচ্ছে চীন ও ভারত। তবে বাংলাদেশ এখন প্রচুর পরিমানে পিয়াজ উৎপাদন শুরু হয়েছে। তাঁদের মতে, বর্তমানে বাংলাদেশের মোট শ্রম শক্তির ৪০ দশমিক ৬ শতাংশ কৃষি খাতে নিয়োজিত। কৃষিতে বহুমুখীকরণ ও বাণিজ্যিকিকরণের মাধ্যমে মোট শ্রমশক্তির শতকরা ৮০ ভাগকে নিয়োজিত করে দেশে কৃষি বিপ্লবের মাধ্যমে অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা অর্জন সম্ভব।

 


প্রকাশিত: আগস্ট ২৫, ২০২২ | সময়: ৪:৪৯ অপরাহ্ণ | সানশাইন