সর্বশেষ সংবাদ :

রাজশাহীতে আওয়ামী লীগ নেতাকে হত্যার ব্যর্থ মিশন,পরে দুঃসাহসিক অভিযানে আটক হামলাকারি

রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া থানা (পূর্ব) আওয়ামী লীগের সভাপতি আতিকুর রহমান কালুকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। শনিবার রাত ১টা ১০ মিনিটের দিকে রাজশাহী মহানগরীর মুন্সিডাঙ্গা মহল্লায় বাড়িতে গিয়ে দুই ব্যক্তি তাকে হত্যার চেষ্টা চালান। তাকে হত্যা করতে ৩ রাউন্ড ও ৩ আতঙ্ক ছড়িয়ে পালিয়ে যেতে ৩ রাউন্ড গুলি ছোঁড়া হয়। পরে দুঃসাহসিক অভিযান চালিয়ে পুলিশ ঘটনায় জড়িত দুইজনকে গ্রেফতার করেছে।

তবে কেন হত্যার চেষ্টা সে প্রশ্নের উত্তর মিলছে না।

এ ঘটনায় বোয়ালিয়া মডেল থানায় আলাদা দুটি মামলা হয়েছে। গ্রেফতার একজনের নাম ওয়াহিদ মুরাদ জামিল ওরফে লিংকন (৫৬)। তিনি নগরীর উপশহরের তিন নম্বর সেক্টরের চার নম্বর সড়কের ১৭৭ নম্বর বাসার চারতলার নিজের ফ্ল্যাটে থাকেন।

তার সঙ্গে আটক অন্যজনের নাম সজল আলী (২৫)। তিনি ওয়াহিদের গাড়িচালক ও দেহরক্ষী। রাতে আওয়ামী লীগ নেতা আতিকুর রহমানকে হত্যার জন্য পিস্তল হাতে বাড়ির সামনে গিয়েছিলেন ওয়াহিদ। কিন্তু কেন এই হত্যাচেষ্টা তা পুলিশকে বলেননি।
আতিকুর রহমান রাজশাহীর সিটিহাট পশুহাটের অন্যতম ইজারাদার। ওয়াহিদের সঙ্গে আগে কখনও কোনোদিন দেখাও হয়নি বলে জানিয়েছেন তিনি।
রাতে ওয়াহিদ ও সজল আলী আওয়ামী লীগ নেতা আতিকুর রহমানের বাসার সামনে যখন যান তখন ওয়াহিদের হাতে পিস্তল ছিল। তিনি বাড়ি লক্ষ্য করে প্রথমেই এক রাউন্ড গুলি চালান। তারপর গলির দিকে আরেক রাউন্ড গুলি করেন।

শব্দ শুনে তিনতলা থেকে নেমে আসেন আতিকুর রহমান। লোহার ফটকের ভিতর থেকেই বাইরে অপেক্ষমান দুজনকে প্রশ্ন করেন, কী সমস্যা? বাইরে থাকা দুজন তাকে চেনেন না। পিস্তল হাতে থাকা ব্যক্তি আতিকুর রহমান কালুকেই বলেন, কালুকে পাঠাও। কালু বলেন, ‘আমিই কালু। ’ তখনই ওপাশ থেকে তিন রাউন্ড গুলি। লোহার ফটক পেরিয়ে গুলি ভেতরে যেতে পারেনি। তাই অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান তিনি। 

আতিকুর রহমানের বাড়ি থেকে খুবই সামান্য দূরত্বে নগরীর বোয়ালিয়া থানা। বাড়িতে এমন গুলিবর্ষণের পর পুলিশে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ আসার আগেই প্রাইভেটকারে চড়ে চলে যান ওয়াহিদ ও তার গাড়িচালক। পুলিশ গিয়ে ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরায় ঘটনার সময়ের ফুটেজ দেখে। এরপরই শহরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান শুরু করা হয়। রাজশাহী কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি কালো রঙের প্রাইভেটকার দেখে পুলিশের কম্পিউটার অপারেটর সেলিমের সন্দেহ হয়। তিনি গাড়ির ভেতরে কারা আছেন, দেখতে চাইলে তাকে লক্ষ্য করে এক রাউন্ড গুলি ছোঁড়ে প্রাইভেটকারে থাকা যাত্রীদের একজন। যদিও গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। এরপর পুলিশ অভিযান জোরদার করে। সেলিমের দেওয়া তথ্যানুযায়ী কালো রঙের প্রাইভেটকারটিকে আটকানোর জন্য পুলিশের চেকপোস্ট বসানো হয়।

 

নগরীর বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম জানান, ঘটনার পর রাত ২টার কিছু আগে ঢাকা মেট্রো-গ-২১-৮৫৮৩ নম্বরের গাড়িটি রাজশাহী কলেজের সামনে দিয়ে যাচ্ছিল। তখন পুলিশ গাড়িটি থামানোর চেষ্টা করলে ভেতর থেকে এক রাউন্ড গুলি করা হয়। এরপর গাড়িটি পালিয়ে যায়। ইতোমধ্যে গাড়িটি শহরে লাগানো পুলিশের সিসি ক্যামেরার ভেতরে চলে আসে। নগর পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে গাড়িটির দিকে নজর রাখতে শুরু করে। সাইবার ক্রাইম ইউনিটের তথ্য মতে, বিভিন্ন সড়কে গাড়িটির পিছু নেওয়া হয়। একপর্যায়ে দড়িখড়বোনা এলাকায় গিয়ে গাড়িটি হারিয়ে যায়।

এ সময় পুলিশ গোটা উপশহর এলাকাটিকেই চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে। কিন্তু কোনো রাস্তা দিয়েই গাড়িটি আর বের হচ্ছিল না। তাই পুলিশ নিশ্চিত হয় যে উপশহরেই আছে গাড়িটি। পুলিশ সিদ্ধান্ত নেয়, রাতেই উপশহরের প্রতিটি বাড়ির গ্যারেজে ঢুকে গাড়িটি খোঁজা হবে। তল্লাশি শুরুও হয়। এরমধ্যেই রাত সাড়ে ৩টার দিকে পুলিশের একটি দল ওসি মাজহারুল ইসলামকে খবর দেয়, তিন নম্বর সেক্টরের একটি সাততলা বাসার গ্যারেজে ঢুকেছে বাড়িটি। পুলিশ পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিয়ে প্রস্তুতি নেয়। ঘিরে ফেলা হয় পুরো ভবনটি।

এরপর ভোর ৪টায় ভেতরেই ঢুকেই পাওয়া যায় গাড়িটি। গাড়িতে কেউ না থাকলেও তখন ইঞ্জিন স্টার্ট ছিল। খোলা ছিল দরজাও। বাসার গার্ড জানান, এই গাড়ির মালিক থাকেন তিনতলায়। পুলিশ ফ্ল্যাটের সামনে গিয়ে সবাইকে প্রথমে হাত বের করে দরজার বাইরে আসতে বলা হয়। প্রথমেই এভাবে আসেন সজল। দরজার বাইরে দুই হাত বের করলেই পুলিশ পরিয়ে দেয় হাতকড়া। দরজা খুললেই দেখা যায়, সোফায় বসে আছেন ওয়াহিদ। পুলিশ তাকে আটক করে। পরে বাসায় তল্লাশি চালিয়ে অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়।

ওয়াহিদের ঘরে পাওয়া যায় একটি অত্যাধুনিক শর্টগান, ৮৭ রাউন্ড শর্টগানের তাজা কার্তুজ, ১৩টি খোসা, একটি অত্যাধুনিক পিস্তল, ৩১ রাউন্ড পিস্তলের তাজা গুলি, ছয়টি খোসা এবং তিনটি ম্যাগজিন। এরপর আতিকুর রহমান কালুর বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজের সঙ্গে মিলে যায় তাদের চেহারা। এছাড়া প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার সজলও হত্যা চেষ্টার মিশনে অংশ নেওয়ার কথা স্বীকার করে।

ওসি আরও জানান, এ ঘটনায় থানায় দুটি আলাদা মামলা হয়েছে। মামলায় দুজনকে গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। অন্য কেউ জড়িত আছে কি না, বিষয়টি জানতে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। ওয়াহিদের এমন হামলার বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতা আতিকুর রহমান কালু বলেন, ‘ঘটনার পর থেকে আমি মানসিকভাবে অসুস্থ। ওয়াহিদের নাম আগে কখনও শুনিনি। তাকে দেখিনি। একসঙ্গে বসে এককাপ চা খাইনি। আবার সেও আমাকে চেনে না। তারপরও আমাকে হত্যার জন্য এসেছিল। কারও সাথে আমার কোন ঝামেলাও নেই। কেন হত্যার চেষ্টা তা জানি না। এটা পুলিশকেই খতিয়ে দেখতে বলেছি। ’

ওসি মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘কেন এই হত্যা চেষ্টা সে বিষয়ে আটক দুজনও কিছু বলছে না। আমরা জানার চেষ্টা করছি। ’


প্রকাশিত: আগস্ট ৭, ২০২২ | সময়: ৫:০০ অপরাহ্ণ | সানশাইন