সর্বশেষ সংবাদ :

দামে আশা : পাটের জাগ নিয়ে সংকটে কৃষক

রায়হান আলম, নওগাঁ: উত্তরাঞ্চলের জেলা নওগাঁ ধান ও আম উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। একসময় ব্যাপক পাটও চাষ হত এ জেলায়। কিন্তু পাট চাষে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া ও সে তুলনায় দাম না পাওযায় পাট চাষে আগ্রহ কমেছে নওগাঁর চাষিদের। এতে বছর বছর কমছে পাটের আবাদ। এবারও লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে কম জমিতে পাট চাষ হয়েছে।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে জেলায় ৬ হাজার ৭৫৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। সেখানে অর্জিত হয়েছে ৫ হাজার ৩৩০ হেক্টর। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ৪২৫ হেক্টর কম। জেলায় এ বছর দেশি, তোষা এবং মেস্তা জাতের পাট চাষ হয়েছে। দেশি জাতের মধ্যে সিভিএল-১ ও ডি ১৫৪ জাত। তোষা জাতের মধ্যে ও-৪ এবং ৭২।
উপজেলা ভিত্তিক পাট চাষ হয়েছে সদর উপজেলায় ৬০০ হেক্টর, রাণীনগরে ৪০ হেক্টর, আত্রাইয়ে ২৫০ হেক্টর, বদলগাছীতে ১ হাজার ৪৬০ হেক্টর, মহাদেবপুরে ২০০ হেক্টর, পত্মীতলায় ১৫০ হেক্টর, ধামইরহাটে ৮৩০ হেক্টর এবং মান্দায় ১ হাজার ৮০০ হেক্টর। জেলার ১১টি উপজেলার মধ্যে সাপাহার, পোরশা ও নিয়ামতপুর উপজেলায় এ বছর কোনো পাট চাষ হয়নি বলে জানায় কৃষি অফিস।
সরেজমিনে দেখা যায়, পাট কাটা, জাগ দেওয়া, পাটকাঠি থেকে পাট ছাড়ানো ও শুকানো নিয়ে কিছুটা ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। তবে বর্ষার ভরপুর মৌসুম হওয়ায় প্রয়োজনমত বৃষ্টির পানি না হওয়ায় দুশ্চিন্তায় চাষিরা।
চাষিরা বলছেন, এ সময়টায় ছোট ছোট খাল-বিল, পুকুর, নদী-নালায় পানি থাকে ভরপুর। কিন্তু প্রয়োজনীয় সেই পানি নেই। পানির অভাবে ঠিকমত পাট জাক দিতে পারছেন না। এ অবস্থাতে কিছু পাট নষ্ট হওয়ার আশংকায় রয়েছে। তবে এবার পাটের ভালো ফলন হয়েছে। বাজারেও পাটের ভালো দাম রয়েছে। প্রতি মণ পাট ৩ হাজার থেকে ৩২শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এতে পাট চাষিদের মুখে ফুটেছে স্বস্তির হাসি।
সদর উপজেলার বলিহার ইউনিয়নের পাট চাষি মুজিবুর রহমান বলেন, আমি এবার দুই বঘিা জমিতে পাট চাষ করেছি। জাগ দেওয়া, আঁশ ছড়ানো, হাল, বীজ, সার, নিড়ানি ও পরিবহন খরচসহ পাট চাষে বিঘাপ্রতি খরচ হয় ১০-১৪ হাজার টাকা করে। এক বিঘা জমিতে ভালো ফলন হলে ১২ মণ পাট পাওয়া যায়। বাজারে এবার পাটের ভালো দাম আছে। তবে এর চেয়ে অরেকটু বেশি দাম হলে পাট চাষি (আমরা) আরও লাভবান হতাম।
আরেক পাট চাষি আকবর মন্ডল বলেন, এবার আমি ১০ কাটা জমিতে পাট চাষ করেছি। পাট ভালোই হয়েছে। তবে বৃষ্টির জন্য পানির অভাব। পাট জাগ দিতে পারছি। এতে করে সমস্যাই পড়তে হচ্ছে। পাট কেটে অনেক দূরে নিয়ে য়েতে হচ্ছে। বাজারে এবার পাটের ভালো দাম আছে। এবার ভালো দাম পেলে সামনে বার আরও বেশি জমিতে পাট চাষ করবো।
মান্দা উপজেলা মৈনম ইউনিয়নের আফসার আলী বলেন, এবার তিনি দেড় বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। ফলন হয়েছে ভালো। তবে পানির অভাবে ঠিকমত পাট জাঁক দিতে পারছি না। এ সময়টাতে বৃষ্টির পানিতে ছোট ছোট খাল-বিল, ডোবা ভরপুর থাকে। কিন্তু প্রয়োজনীয় সেই পানি নেই। সিরিয়াল ধরে পাট জাগ দিতে হচ্ছে। এতে করে ভোগান্তি বেশি হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমি বাজারে কিছু পাট বিক্রি করেছি। বাজারে ৩ হাজার থেকে ৩২শ টাকা মণ দরে। পাটের বাজার এবার ভালো আছে। তবে আরেকটু দাম বেশি হলে ভালো হতো আমাদের (চাষি)।
আত্রাই উপজেলার তারাটিয়া গ্রামের কৃষক আব্দুস ছামাদ জানান, মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টি না হওয়ায় পাট নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলাম তবে পড়ে বৃষ্টি হওয়ার কারণে ফলন ও ভালো হয়েছে। এবার আমি ৪ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলাম বাজারে পাটের দাম বেশি হওয়ার কারণে আগামি বছর আরো বেশি জমিতে পাট চাষ করবো করবো বলে ঠিক করেছি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মনজুরে মাওলা বলেন, পাটচাষে চলতি অর্থ বছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ৪২৫ হেক্টর কম অর্জিত হয়েছে।
পাটের আবাদ কম হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নওগাঁ মূলত ধানের জেলা। এখানে আমরা পাটের আবাদ বৃদ্ধি করতে গেলে আউশ ধানের আবাদ কমে যাবে। এইজন্য আমরা মূলত কৃষকদের পাট চাষে উদ্বুদ্ধ করা হয় না। যাতে করে আউশ আবাদের বিঘ্ন না ঘটে। এছাড়াও পাট জাগ দেওয়ার সমস্যার কারনে কৃষকরা খুব একটা আগ্রহ হয় না।
তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন অনাবৃষ্টি ছিল। যার কারণে পাট কাটা এবং জাগ দিতে সমস্যায় পড়েছিল চাষিরা। এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে জেলায় বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। এ জন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে যেখানে সুযোগ আছে ডোবা, পুকুর, খাল আছে সেগুলোতে পাটগুলো কেটে দ্রুত জাগ দেয়ার জন্য। দেরিতে পাট কেটে জাগ দিলে পাটের গুণগত মান কমে যায়। যেহেতু এখন বৃষ্টি শুরু হয়েছে সেহেতু এ সমস্যা কেটে যাবে।
এরপরও যদি পানি ঘাটতে থাকে স্থানীয় কৃষি অফিসের সাথে পরামর্শ করে পুকুর লিজ নিয়ে বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষের ডিব টিবোয়েলের মাধ্যমে পানি জমা করে সেখানে পাট জাগ দেওয়ার আহাবান জানাবো।
এবার পাটের বাজার ভালো হওযায় কৃষকরা লাভবান হবেন বলেও মনে করেন এই কর্মকর্তা।


প্রকাশিত: আগস্ট ৫, ২০২২ | সময়: ৫:৫৬ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ